পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক এলাকায় হারিয়ে যায় বিমানটি

27/03/2014 10:25 pmViews: 7
ঢাকা: নতুন উপগ্রহচিত্রে ধরা পড়ল আরও ১২২টি বস্তু। এমএইচ ৩৭০ ঘিরে এত দিনের তল্লাশি অভিযানে পাওয়া এটাই সম্ভবত সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য ছবি, তেমনটাই দাবি করলেন মালয়েশিয়ার পরিবহণ মন্ত্রী হিশামুদ্দিন হুসেন।
বুধবার তিনি জানালেন, অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমে ভাসমান ১২২টি সন্দেহজনক বস্তু দেখা গিয়েছে ফ্রান্সের ‘এয়ারবাস ডিফেন্স অ্যান্ড স্পেস’ সংস্থার উপগ্রহচিত্রে। ফরাসি সংস্থাটি রবিবারে তোলা ওই ছবি বুধবার মালয়েশিয়ায় পাঠিয়েছে।
তবে বুধবার অন্ধকার হওয়ার আগে তল্লাশিতে ভাসমান বস্তুগুলো মিলবে কিনা, তা নিয়ে সন্দিহান হিশামুদ্দিন। সে ক্ষেত্রে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। অস্ট্রেলিয়ার পার্থে শহর থেকে অন্তত আড়াই হাজার কিলোমিটার দূরে ভারত মহাসাগরের দক্ষিণ প্রান্তে ওই বস্তুগুলোর ছবি ধরা পড়েছে উপগ্রহচিত্রে। যেগুলো ১-২৩ মিটার লম্বা।
হিশামুদ্দিন জানিয়েছেন, চারশো বর্গকিলোমিটার জুড়ে ছড়িয়েছিটিয়ে ছিল সেগুলো। তার মধ্যে কয়েকটি বস্তু রয়েছে বেশ উজ্জ্বল ধরনের।
তবে অস্ট্রেলীয় মেরিটাইম সেফটি এজেন্সি জানিয়েছে, দুটি বস্তু তাদের চোখে পড়েছে। সম্ভবত দড়ি জাতীয় কিছু। এ ছাড়া, নিউজিল্যান্ডের সেনাবিমান থেকে একটি নীল বস্তু দেখা গিয়েছে।
ভারত মহাসাগরের দক্ষিণে বিমান ভেঙে পড়ার সম্ভাব্য এলাকা জুড়ে তল্লাশি চালাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, চীন, নিউজিল্যান্ড, আমেরিকা, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার বিমান। সঙ্গে যোগ দিয়েছে একটি অস্ট্রেলীয় এবং চারটি চীনা জাহাজ।
পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক এলাকায় হারিয়ে যায় বিমানটি
হিশামুদ্দিন এটাও বলেছেন, যদি সাম্প্রতিক উপগ্রহচিত্রের বস্তুগুলো হারিয়ে যাওয়া মালয়েশীয় বিমানের হয়, তবে পরবর্তী পদক্ষেপ হবে এটা বোঝা, যেখানে বিমান ভেঙে পড়েছিল, তার থেকে কত দূর সরে গিয়েছে ধ্বংসস্তূপের অংশ। তারপরেই শুরু হবে সমুদ্রের নীচে নেমে খোঁজ।
আর সেই প্রসঙ্গে উঠছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটা। যে অংশে খোঁজ চলছে, পারথের দক্ষিণপশ্চিমে আড়াই হাজার কিলোমিটার দূরে ভারত মহাসাগরের দক্ষিণের সেই অংশটি অসম্ভব বিপজ্জনক। যাকে একবাক্যে সকলেই বলছেন, পৃথিবীর সব চেয়ে দুর্গম জায়গা। পদে পদে রয়েছে সমুদ্রের নীচে থাকা আগ্নেয়গিরি আর বিশাল বিশাল উঁচু ঢেউ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমুদ্রের নীচে তল্লাশি শুরু করলেই ভয়ঙ্কর বিপদের মুখে পড়তে হবে অনুসন্ধানকারীদের।
নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র-বিশেষজ্ঞ এরিক ভ্যান সেবিল বলছেন, “ওই অঞ্চলটি গর্জনশীল চল্লিশার (রোরিং ফর্টিজ) প্রভাবে এমনিতেই দারুণ দুর্যোগপূর্ণ। সবচেয়ে বেশি ঝোড়ো হাওয়া আর পর্বতের সমান উঁচু ঢেউয়ের দৌরাত্ম্য এই অংশেই। শীতকালে এখানে ১০-১৫ মিটার উঁচু ঢেউ দেখা যায় এখানে।”
আমেরিকার সৌফান গ্রুপ নামে একটি নিরাপত্তা সংস্থা বলছে, এই রকম অবস্থায় বিমানের ছোট ছোট টুকরো খুঁজতে যাওয়া খড়ের গাদায় ছুঁচ খোঁজার মতোই দুঃসাধ্য ব্যাপার। হয়তো কোনও একটা বস্তুতে চোখ আটকাল। কিন্তু ঢেউয়ের দাপট আর সূর্যের ছটায় চোখ ঝলসে যাবে মুহূর্তে। আর হয়তো খুঁজেই পাওয়া যাবে না সেই বস্তু।
ভূতত্ত্ববিদ রবিন বিম্যান বলছেন, ধরা যাক, এমএইচ ৩৭০-র কোনও একটি অংশ খুঁজে পাওয়া গেল। দুর্গম ওই অংশে তলিয়ে যাওয়া ব্ল্যাক বক্স উদ্ধার করাটা কিন্তু সাংঘাতিক কঠিন। কারণ বাধা হয়ে উঠবে সমুদ্রের নীচে থাকা অসংখ্য আগ্নেয়গিরি। ভারত মহাসাগরের তিন হাজার মিটার গভীরে যেগুলো বেশ সক্রিয়। যদি ব্ল্যাক বক্স ওই রকম কোনও জায়গায় গিয়ে পড়ে, তার চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কিছুই হবে না।
এত রকম সম্ভাবনা আরও বেশি করে হতাশ করে তুলছে বিমানযাত্রীদের আত্মীয়দের। বিক্ষোভ-প্রতিবাদ চলছেই। মালয়েশিয়ার জিনিস বয়কটের হুমকি দিয়েছেন। তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন চীনা তারকারাও। হিশামুদ্দিন এসব মানতে নারাজ। তিনি বলেছেন, “ইতিহাস আমাদের বিচার করবে। একটা কাজে বিশ্বের ২৬টি দেশকে সামিল করা মুখের কথা নয়।”
এর মধ্যে এ দিনই আবার কয়েক কোটি ডলারের মামলার মুখে পড়েছে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স। এমএইচ ৩৭০-র এক যাত্রীর বাবা জানুয়ারি সিরেগারের হয়ে ওই মামলা দায়ের করেছে শিকাগোর এক আইনি সংস্থা। তারা মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের কাছে বিমানের নকশা চেয়েছে। তাতে যান্ত্রিক কোনও ত্রুটি ছিল কিনা, জানতে চেয়েছে। যদিও এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করেনি মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স।

Leave a Reply