‘পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর লোকেশন কক্সবাজার’
বিশ্বজিৎ চৌধুরী : হিমছড়ির ঝরনা, অবারিত সমুদ্রসৈকত আর সবুজ পাহড়ে শুটিং চলছে একটি সম্পূর্ণ ঝলক কমেডি নামের টেলিছবির। এই খবরে তেমন নতুনত্ব নেই। কারণ, বাংলাদেশে আজ পর্যন্ত যত চলচ্চিত্র বা টিভি নাটক তৈরি হয়েছে, তার মধ্যে কয়টিতে কক্সবাজারের পাহাড়-সমুদ্র-ঝরনার দৃশ্য আছে, তার হিসাব করার চেয়ে কয়টিতে নেই এ হিসাব করা অনেক সহজ। বাংলাদেশের এমন কোনো টিভি-সিনেমার তারকা কিংবা পরিচালক কি আছেন, যিনি কখনো কক্সবাজারে শুটিং করতে আসেননি? মনে হয় না।
‘সব ছবিতে বা নাটকে বারবার কক্সবাজারের সমুদ্র বা পাহাড়ের দৃশ্য…ব্যাপারটা কেমন একটু একঘেয়ে মনে হয় না?’
মোহন খান বললেন, ‘না, আমার মনে হয় না। এই বিশাল সমুদ্র, এই অনন্ত জলরাশি…এই দৃশ্য কি কখনো একঘেয়ে হতে পারে? সবুজ পাহাড়ের আকর্ষণ কখনো ফিকে হতে পারে?… আসল কথা হচ্ছে আমি নাটকে বা সিনেমায় সমুদ্র-পাহাড়কে কতটা সুন্দর করে তুলে ধরতে পারছি…।’
এবার তাহলে মোহন খান সম্পর্কে একটু বলি। আপনারা অনেকেই জানেন, মোহন খান নাট্যকার ও নির্মাতা। কিন্তু একটা তথ্য হয়তো জানেন না, কক্সবাজারের প্রেমে পড়ে যাওয়া এই মানুষের জীবনের অর্ধেকের চেয়ে বেশি সময় কাটিয়েছেন এই শহরে। অন্তত ১০০টি খণ্ড নাটক বানিয়েছেন তিনি কক্সবাজারে। ১৩ পর্বের, ২৬ পর্বের ও ৫২ পর্বের ধারাবাহিক নাটকের শুটিং করেছেন এখানে। এটিএন বাংলায় এখন প্রতি সোমবার প্রচারিত হচ্ছে মোহন খানের ১০৪ পর্বের ধারাবাহিক নাটক নীড় খোঁজে গাঙচিল, এর পুরোটাই শুটিং হয়েছে কক্সবাজারের বিভিন্ন লোকেশনে। মোহনের প্রডাকশন হাউসের নামও ‘গাঙচিল’। তিনি বললেন, ‘নাটক নির্মাণের জন্য নানা সময় তো বিভিন্ন দেশে গিয়েছি, কিন্তু কক্সবাজারের আকর্ষণ এড়াতে পারিনি। আমার মনে হয়, পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর লোকেশন কক্সবাজার। পাহাড়-সমুদ্রের এমন মিলনক্ষেত্র সত্যি বিরল। শুধু কক্সবাজার কেন, সমুদ্রঘেরা মহেশখালী দ্বীপ, টেকনাফ বা সেন্ট মার্টিনের মতো অসাধারণ জায়গার কতটুকুই বা তুলে ধরতে পেরেছি আমরা?’
‘এই প্রেম জন্মাল কীভাবে?’
হাসলেন মোহন খান, বললেন, ‘আমার স্কুলজীবন কেটেছে চট্টগ্রাম শহরে, তখন থেকে সুযোগ পেলেই চলে আসতাম এখানে। পরবর্তী জীবনে নাটক বানানো যখন শুরু করলাম, তখন সেই শৈশবের স্মৃতিই আমাকে আবার টেনে এনেছে এখানে। আমি যে শুধু নাটক নির্মাণের জন্যই আসি তা কিন্তু নয়, মাঝেমধ্যে একা একা সময় কাটাতে চলে আসি। মন ভালো থাকলে আসি, আবার মন খারাপ হলেও আসি। হা হা হা।’
‘এখানে নাটক বানাতে এসে আগের কোনো স্মৃতি বা ঘটনার কথা কি মনে পড়ে?’
‘স্মৃতি তো অজস্র…এই মুহূর্তে যেটা মনে পড়ছে, বলি। আজ থেকে অন্তত ১০-১৫ বছর আগে সমুদ্রে গাঙচিল নামে আমার লেখা একটি নাটকের শুটিং করতে এসেছিলাম। বিটিভির এক ঘণ্টার নাটক। নির্দেশক ছিলেন আমার গুরু জিয়া আনসারী। শিল্পী ছিলেন সুবর্ণা, ফরিদী, আফজাল। তখন তো এখনকার মতো দ্রুত কাজ হতো না, সারা দিনে দুই থেকে তিনটি সিকোয়েন্স হতো…বাকি সময়টা চলতো জম্পেশ আড্ডা। ভেবে দেখুন, এই গুণী মানুষগুলোর সঙ্গে গল্প-আড্ডা দেওয়া কী আনন্দের! যেমন প্রতিভাবান শিল্পী তাঁরা, তেমনি রসিক মানুষ। কত কী শেখা যায় তাঁদের সঙ্গে থাকলে…সেই দিনগুলো এখনো ভুলতে পারি না আমি।’
কক্সবাজারে এখন অপরিকল্পিত আবাসন গড়ে উঠছে, কাটা হচ্ছে পাহাড়, আড়াল হয়ে যাচ্ছে সমুদ্রের সৌন্দর্য—এই ব্যাপারগুলো মন খারাপ করে দেয় মোহনের। ইট-কাঠের জঞ্জাল তো পৃথিবীর সব দেশেই আছে। কিন্তু একটা কক্সবাজার কি যেখানে-সেখানে পাওয়া যায়? প্রকৃতির এমন অকৃপণ দান যেন মানুষের স্বার্থপরতার কারণে, লোভের কারণে ধ্বংস হয়ে না যায়, সে ব্যাপারে সবার সচেতন ও সোচ্চার হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।