পিটিআইকে ত্যাগ করলো গুরুত্বপূর্ণ মিত্র, ক্ষমতা হারানোর দিকে ইমরান
পিটিআইকে ত্যাগ করলো গুরুত্বপূর্ণ মিত্র, ক্ষমতা হারানোর দিকে ইমরান

এই দলটি জোট সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটি মিত্র। তারা বিরোধীদের সঙ্গে যোগ দেয়ার ফলে পরিস্থিতি যদি একই থাকে, তাহলে জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতায় হেরে যাবেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
আগামী ৩রা এপ্রিল ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট হতে পারে। এতে তিনি পরাজিত হলে নতুন সরকারের দায়িত্বে আসতে পারেন পিএমএলএনের সভাপতি শাহবাজ শরীফ। অনলাইন ডন বলছে, যদি পরিস্থিতি একই থাকে তাহলে ইমরানের ক্ষমতা হারানোর বিষয়টি নিশ্চিত। আগেই খবরে বলা হয়েছিল, জোট সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট (এমকিউএমপি) মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দিক থেকে। বুধবার তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছে, ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবে বিরোধীদের পক্ষে ভোট দেবে।
এর ফলে ইমরান খানের ভবিষ্যত নিয়ে সংশয় আরও বাড়ল। মুলতবি থাকার পর বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বিকাল ৪টায় আবার অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর বিতর্ক শুরু হচ্ছে জাতীয় পরিষদে। সেখানে বিতর্কের পর এ সপ্তাহান্তেই হতে পারে প্রস্তাবের ওপর ভোট। এতে ইমরান খান পরাজিত হলে নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন পিএমএলএনের সভাপতি শাহবাজ শরীফ। পাকিস্তানের ইতিহাসে এ পর্যন্ত নির্বাচিত কোনো প্রধানমন্ত্রী তার ক্ষমতার মেয়াদ পূরণ করতে পারেননি। ২০১৮ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তার ক্ষমতার শেষ বছরে এসে জীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি তিনি। বিরোধীরা তার বিরুদ্ধে অর্থনীতিতে অব্যবস্থাপনা এবং পররাষ্ট্রনীতিতে অপরিপক্বতার অভিযোগ এনেছেন। এখন প্রশ্ন হলো পাকিস্তানের কোনো প্রধানমন্ত্রী যা পারেননি, ইমরান খান কি তা পারবেন? তিনি কি তার ক্ষমতার মেয়াদ পূরণ করতে পারবেন নাকি তার আগেই অন্যদের মতো ফিরে যেতে হবে প্যাভিলিয়নে? এ প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। যদি অনাস্থা প্রস্তাবে ইমরান হেরে যান তাহলে নতুন সরকার গঠন হবে। সেই সরকারের প্রধান হওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে পিএমএলএনের সভাপতি শাহবাজ শরীফের। তিনি ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের ভাই। নওয়াজ শরীফ ২০২১ সালে চিকিৎসার কথা বলে জেল থেকে মুক্ত হয়ে বিদেশে অবস্থান করছেন। যদি শাহবাজ শরীফ নতুন সরকারের হাল ধরেন, তাহলে সেই সরকারে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়া হতে পারে পিপিপির বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারিকে। তিনি প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো ও সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির ছেলে।
আজ শুক্রবার যখন পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর বিতর্ক হওয়ার কথা তখন নিজের ক্ষমতাসীন দল পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ পাকিস্তানের (পিটিআই) সদস্যদের তার পাশে ধরে রাখার জন্য খুব চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দল এবং তিনি নিজে। পাশাপাশি কয়েকটি দলকেও তারা দলে ভিড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু সংখ্যার দিক দিয়ে সংখ্যালঘু এসব দল তার ডাকে সাড়া দেবে কিনা তা বোঝা যাচ্ছে না। এই ফাঁকে এসব দল সরকারের সঙ্গে কঠিন দর কষাকষি শুরু করার কথা। কারণ, সরকার এখন ফাঁদে পড়েছে। তাদেরকে উত্তরণের রক্ষাকবজ হিসেবে যদি এসব দলকে ব্যবহার করতে চায় পিটিআই, তাহলে বিনিময়ে বড় কিছু ছাড় দিতে হবে। হয়তো সে জন্যই পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী উসমান বুজদার পদত্যাগ করেছেন। পিটিআই ওই পদে মনোনীত করেছে এমকিউএমের এক প্রার্থীকে। তা সত্ত্বেও হিসাব যে কোনদিকে যায় তা বলা মুশকিল।
জাতীয় পরিষদের ৩৪২ আসনের মধ্যে কাগজেকলমে ক্ষমতাসীন দল পিটিআই এবং জোটের শরিকদের মোট আসন আছে ১৭৬টি। কিন্তু বুধবার এমকিউএমপি ঘোষণা দিয়েছে, তাদের ৭ জন পার্লামেন্ট সদস্য বিরোধীদের পক্ষে ভোট দেবেন। পার্লামেন্ট হিসেবে পরিচিত জাতীয় পরিষদে বিরোধীদের মোট আসন আছে ১৬৩টি। এরই মধ্যে পিটিআইয়ের কমপক্ষে এক ডজন আইনপ্রণেতা বা পার্লামেন্ট সদস্য বিদ্রোহ করেছেন। তারা বলেছেন, ফ্লোর ক্রস করে অর্থাৎ দলের বাইরে এসে তারা ভোট দেবেন। কিন্তু তাদের দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে তাদের ভোট দেয়া আটকে দিতে আদালতকে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে পিটিআই। অতীতে এভাবে নিজেদের দলের বিদ্রোহীদেরকে জাতীয় পরিষদে ভোট দেয়া থেকে বিরত রাখতে পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলো শারীরিকভাবে বাধা দিয়েছে। তাদেরকে জাতীয় পরিষদে প্রবেশ করতে বাধা দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে ইঁদুর-বিড়াল খেলা হয়েছে। অভিযোগ করা হয়েছে অপহরণের। বুধবার একটি টুইট করেছেন এমকিউএমপি’র সিনিয়র নেতা ফয়সাল সুবজাওয়ারি। তিনি বলেছেনÑ পাকিস্তান পিপল পার্টি (পিপিপি) এবং পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএলএন) নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলোর মধ্যে একটি চুক্তি চূড়ান্ত করেছে তার দল। এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেয়ার কথা বুধবার।
পাকিস্তানের রাজনীতিতে কয়েক দশক ধরে আধিপত্য বিস্তার করে আসছিল পিএমএলএন এবং পিপিপি। কিন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচনে ইমরান খান একটি জোট গঠন করে তাদেরকে ক্ষমতা থেকে অনেক দূরে সরিয়ে দেন। বহু দশক ধরে বিরাজমান দুর্নীতি এবং স্বজনপ্রীতি দূর করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন ইমরান খান। কিন্তু মুদ্রাস্ফীতি আকাশচুম্বী, রুপির মান দুর্বল হয়েছে এবং ঋণের ভারে পঙ্গু হয়ে গেছে পাকিস্তান। এর মধ্যেও নিজের সমর্থন ধরে রাখার জন্য লড়াই করছেন ইমরান। কিছু বিশ্লেষক বলেন, এরই মধ্যে সেনাবাহিনীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সমর্থন হারিয়েছেন ইমরান খান। তবে এ অভিযোগ উভয় পক্ষই অস্বীকার করেছে। কিন্তু সবাই জানেন পাকিস্তানে রাজনৈতিক ক্ষমতার গেমে মূল শক্তি হলো সেনাবাহিনী।
১৯৪৭ সালে স্বাধীন হয় দেশটি। তারপর সেখানে এখন পর্যন্ত চারটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটেছে। একটি অভ্যুত্শান সফল হয়নি। কমপক্ষে তিন দশকের বেশি দেশটি ছিল সেনা শাসনের অধীনে। যদি আগামী সপ্তাহে ভোটে হেরে যান ইমরান খান, তাহলে নতুন সরকারে কে আসতে পারেন তা আগেই বলা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে ইমরান খান একটি রাজনৈতিক কার্ড খেলে দিতে পারেন। তিনি আগাম নির্বাচন ঘোষণা করতে পারেন। যা ২০২৩ সালের অক্টোবরের আগেই সম্পন্ন হতে হবে।
অবসরপ্রাপ্ত জেহনারেল ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক তালাত মাসুদ বলেছেন, দেশ যে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং বাইরের সমস্যায় আছে তা মোকাবিলা করার জন্য নতুন সরকার গঠনের জন্য আগাম নির্বাচন দেয়া হতে পারে ইমরানের জন্য শ্রেষ্ঠ সুযোগ। দেশ এমন এক অবস্থার দিকে অগ্রসর হচ্ছে, যা কল্পনা করা যায় না। এতে দেশে ব্যাপক বিশৃংখলা এবং সমস্যা হবে বলে মনে করে আরেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক হাসান আসকারি। তিনি বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক পরিণতি হবে অস্থিতিশীল, রাজনীতিতে অব্যাহত সংঘর্ষ, পাকিস্তান বর্তমানে যে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে তা সামাল দিতে অক্ষম হয়ে পড়বে।