পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ কুরেশি করোনায় আক্রান্ত
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ কুরেশি করোনায় আক্রান্ত
পাকিস্তানের বিরোধী নেতা, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ভাই শেহবাজ শরিফ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানির পর পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মুহাম্মদ কুরেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। শুক্রবার কুরেশির টেস্ট রিপোর্ট পজিটিভ আসে। তিনি নিজেই খবরটি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, শুক্রবার দুপুরে হালকা জ্বর আসায় কোভিড টেস্ট করতে দিয়েছিলাম। সন্ধ্যায় জানতে পারি রিপোর্ট পজিটিভ।
এদিন দুপুর থেকেই তিনি হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
কুরেশি জানান, আপাতত হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন না। বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে থেকেই চিকিত্সা করাবেন। ঘরে বসেই তার যাবতীয় অফিশিয়াল দায়িত্ব সামলাবেন।
কুরেশির নিজের কথায়, ‘দুপুরে জ্বর আসার পর তত্ক্ষণাত্ কোভিড টেস্ট করাই। করোনা আগেই সন্দেহ করেছিলাম। যে কারণে রিপোর্ট আসার আগেই কোয়ারেন্টিনে চলে যাই। পরে, রিপোর্টে আমার আশঙ্কাই সত্যি হয়েছে। আমি করোনা পজিটিভ।’
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা হলেও আল্লার কৃপায় ভালোই আছি। শরীরে কোনো দুর্বলতা নেই। যথেষ্ট চাঙ্গা বোধ করছি। ঘরে বসেই আমার যাবতীয় কাজকর্ম করব। প্রার্থনা করুন, যাতে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠি।’
জুনের মাঝামাঝি পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানিরও করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ে। একটি জালিয়াতির মামলায় ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরো’তে শুনানির জন্য গিয়েছিলেন গিলানি। সেখানে থেকেই তিনি আক্রান্ত হয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
তার আগে পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের শেহবাজ শরিফের রিপোর্টও পজিটিভ আসে। তিনিও ওই জালিয়াতি মামলার শুনানিতে হাজির দিতে গিয়েছিলেন ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরোর দফতরে।
গিলানির ছেলে ট্যুইট করে জানান, তার বাবা করোনা আক্রান্ত। কাসিম গিলানি লেখেন, ‘ধন্যবাদ ইমরান খান সরকার এবং ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরো। আপনারা সফল ভাবে আমার বাবাকে বিপদে ফেলেছেন। তার করোনার রিপোর্টও পজিটিভ এসেছে।’ পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেট তারকা শাহিদ আফ্রিদিও করোনায় আক্রান্ত হয়ে ছিলেন। শুক্রবার তার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে।
পাকিস্তানের বিরোধী দল ‘পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ’র প্রধান শেহবাজ শরিফ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন জুন মাসেই। ১১ জুন তার কোভিড-১৯ টেস্ট রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
পিএমএল-এন নেতা আতাউল্লাহ তারার জানান, ৬৮ বছর বয়সি শেহবাজ শরিফ আর্থিক দুর্নীতির মামলায় ৯ জুন ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরো’র দফতরে হাজিরা দিতে গিয়েছিলেন। আতাউল্লাহর দাবি, সেখান থেকেই সংক্রামিত হয়েছেন পিএমএল-এন প্রধান।
আতাউল্লাহ অভিযোগের সুরে বলেন, শেহবাজ শরিফ যে ক্যানসারে আক্রান্ত তা অতীতে একাধিকবার লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে এনএবি-কে। ফলে, আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের থেকে তার ইমিউনিটি ক্ষমতা দুর্বল। করোনাভাইরাসের মতো প্রাণঘাতী ভাইরাসের সংক্রমণ যে ক্যানসার রোগীদের ক্ষেত্রে বিপজ্জনক, তা এনএবি’র অজানা নয়। তার পরেও শেহবাজ শরিফকে হাজিরা দিতে বাধ্য করা হয়। তার জেরেই সংক্রামিত হয়ে পড়েছেন তিনি।
আতাউল্লাহ ক্ষোভ চড়িয়ে বলেন, শেহবাজ শরিফের যদি কিছু হয়ে যায়, তার জন্য দায়ী থাকবেন ইমরান নিয়াজি (পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান)।
ন্যাব-এর কয়েক জন কর্মকর্তা করোনা পজিটিভ ধরা পড়ার খবর আগেই বেরিয়েছিল পাক সংবাদমাধ্যমে। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ছোট ভাই শেহবাজ শরিফের ন্যাব দফতরে যাওয়া ঝুঁকিরই ছিল। কিন্তু, ন্যাব সেই আর্জি উপেক্ষা করায় বাধ্য হয়েই তাকে সেখানে হাজির হতে হয়।
এদিকে, শুক্রবার পর্যন্ত পাকিস্তানে করোনা আক্রান্ত বেড়ে হয়েছে ২ লক্ষ ২১ হাজার ৮৯৬। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ৪,০৮৭ জন। এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে সাড়ে ৪ হাজার মানুষের।