রোববার মহিলা দলের উদ্যোগে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘নওগাঁয় সুলতানা জেসমিনকে হত্যার প্রতিবাদে’ এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ তো সবসময় বলে থাকে তারা সংবিধান মেনে চলবে। সেই সংবিধানে তো পরিষ্কার করে বলা আছে যে, আমার কথা বলার অধিকার দিতে হবে, প্রতিবাদ করার অধিকার দিতে হবে। সরকারের বিরুদ্ধে কেন কথা বলা যাবে না? সরকার কি রাষ্ট্র বা সরকার কি গড? সরকার তো গড না। গণতন্ত্রে বিশ্বাস করলে আমি অবশ্যই আমার কথা বলব।
একমত না হতে পারি কিন্তু মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকতে হবে। মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য অনেকগুলো আইন তৈরি করেছে। মৌলিক জায়গাগুলোতে তারা সংবিধানকে পরিবর্তন করে সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা করেছে। ১৯৭২ সালের আমাদের যে সংবিধান তৈরি হয়েছিল সেটি ছিল সবচেয়ে গণতান্ত্রিক। পরবর্তী সময়ে সংবিধানে বিভিন্ন পরিবর্তন এসেছে। ১৯৯০ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি যখন ক্ষমতায় আসে, তখন সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরে আসে।
তিনি বলেন, এই আওয়ামী লীগের লোকজন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করেছিল। সেই আন্দোলনে তারা ১৭৩ দিন হরতাল করেছিল। আন্দোলনে তারা অসংখ্য মানুষকে হত্যা করেছিল। এর মধ্যে শেরাটন হোটেলের সামনে বাসে গান পাউডার ছিটিয়ে ১১ জনকে হত্যা করেছে। তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা থাকাকালীন শেখ হাসিনা বলেছিলেন-তত্ত্বাবধায়ক সরকার হলো জনগণের দাবি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা নির্বাচনে অংশ নেবেন না। নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অপকৌশলের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে ২০১২ সালে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা তুলে দেয়। কারণ তারা জানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা থাকলে তারা আর ক্ষমতায় ফিরে আসতে পারবে না। এভাবে তারা সংবিধান পরিবর্তন করেছে। আওয়ামী লীগ এককভাবে বাকশাল কায়েম করতে চায়। সেই ধারাবাহিকতায় তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করেছে।
নওগাঁয় র্যাবের হেফাজতে ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের অফিস সহকারী সুলতানা জেসমিনের (৪৫) মৃত্যুর ঘটনা প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, একজন যুগ্ম সচিবের কথায় তাকে রাস্তার মধ্য থেকে তুলে নেয়া হয়েছে। এটা কোনো সভ্য দেশে হতে পারে না। সুলতানা হত্যা প্রমাণ করে ক্ষমতাসীনরা হত্যা করে, মিথ্যা মামলা দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। সুলতানা জেসমিনকে তুলে নেয় এবং নির্যাতনের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। একজন নাগরিক এবং সরকারি কর্মচারী, তাকে এভাবে তুলে নেওয়া ভয়াবহ আইনের লঙ্ঘন, সংবিধান লঙ্ঘন। তাকে তুলে নেয়া হলো কোন আইনে?
রাস্তায় আন্দোলন করতে গিয়ে ইতিমধ্যে বিএনপির ১৭ জন প্রাণ দিয়েছেন জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ৬০০ নেতাকর্মীকে গুম করেছে এই সরকার। হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। অধিকারে আদায়ে রাস্তায় দাঁড়াতে দেয়া হয় না। প্রথম আলোর সাংবাদিককে রাতে তুলে নেওয়া এবং সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলারও সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বললেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে দেয়। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন ও দুটি ধারা বাতিলের কথা বলেছে। কিন্তু সরকারের মন্ত্রীরা বলছেন, বাতিল করা হবে না। আইন দিয়ে মানুষের কথা বলার অধিকার বন্ধ করে দিতেই তারা তা বাতিল করবে না।
নারীদের আরও সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়ার ওপর নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে। জেলে খালেদা জিয়ার সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা কোনো সভ্য দেশে হয় না বলে অভিযোগ করেন ফখরুল। তিনি আরও অভিযোগ করেন, খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। তাকে গৃহে অন্তরীণ করে রাখা হয়েছে। মানুষকে বোকা বানানোর জন্য সাজা স্থগিতের কথা বলছে।
মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক হেলেন জেরিন খানের সঞ্চালনায় আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান ও মহিলা দলের নেতাকর্মীরা।