পরহেজগাররাই আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয়
আল্লাহর কাছে সে মানুষই প্রিয় যে মানুষ পরহেজগার, যিনি আল্লাহ ও রসুলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশ মেনে চলেন। কে ধনী, কে গরিব- তার কাছে সেটি গুরুত্বহীন। বিশেষ করে যেসব গরিব মানুষ আল্লাহ ও রসুলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশ পালন করতে কষ্টকে বরণ করে নেয়, তাদের গুরুত্ব স্রষ্টার কাছে অনেক বেশি। তবে এ কষ্টের অর্থ নিজেকে নিঃস্ব করে ফেলা নয়। আবু হুরায়রাহ (রা.) থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন, হে আল্লাহর রসুল! কোন প্রকারের দান-খয়রাত উত্তম? রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, গরিবের কষ্টের দান। যাদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব তোমার ওপর তাদের থেকে দান-খয়রাত শুরু কর (আবু দাউদ থেকে মিশকাতে)।
ইসলামী গবেষকদের মতে, এ হাদিস থেকে দুটি বিষয় অবগত হওয়া যায়-
১. আন্তরিক নিষ্ঠাসহকারে যে দান-খয়রাত করা হয়, তা আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার মর্যাদা রাখে। কিন্তু একজন নিঃস্ব গরিব মুসলমান কায়িক শ্রমে উপার্জিত অর্থ থেকে যা দান-খয়রাত করে তা আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়, অধিক উত্তম।
২. কোনো ব্যক্তির ওপর যাদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব রয়েছে সর্বপ্রথম তাদের দেখাশোনা করা তার কর্তব্য। সাধারণত দেখা যায়, সুনাম-সুখ্যাতি অর্জনের উদ্দেশ্যে নিকটাত্দীয়দের অধিকার উপেক্ষা করা হয় এবং অন্যদের মুক্ত হাতে দান করা হয়।
আবু হুরায়রাহ ও হাকিম ইবনে হিজাম (রা.) থেকে বর্ণিত : তারা বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সচ্ছলতা বজায় রেখে যে দান-খয়রাত করা হয় তা-ই উত্তম দান। তোমার পোষ্যদের থেকে দান শুরু কর (বুখারি ও মুসলিম থেকে মিশকাতে। ইমাম মুসলিম কেবল হাকিম ইবনে হিজামের সূত্রে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন)।
গবেষকদের মতে উপরোক্ত হাদিস দুটির মধ্যে পার্থক্য লক্ষ্য করা গেলেও আসল কথা হচ্ছে প্রথমোক্ত হাদিসে দরিদ্র ব্যক্তির হীনমন্যতা দূরীভূত করার চেষ্টা হয়েছে। সে হয়তো মনে করতে পারে যে ধনী ব্যক্তির বিরাট দানের সামনে তার সামান্য দান-খয়রাতের আর কী মূল্য হতে পারে। আল্লাহতায়ালা মূলত ইখলাস ও নিষ্ঠার ভিত্তিতে সওয়াব দিয়ে থাকেন, দান-খয়রাতের বাহ্যিক পরিমাণের ভিত্তিতে নয়। দ্বিতীয় হাদিসের উদ্দেশ্য হচ্ছে, মানুষ যেন এমনভাবে নিজের সম্পদ ব্যয় না করে যার ফলে পরে নিজের ও সন্তানের জন্য অন্যের কাছে হাত পাততে বাধ্য হয়।