পদ্মা সেতুর বরাদ্দে ৮টি সাইলো খাদ্য গুদাম!
নিজস্ব প্রতিবেদক: পদ্মা সেতু নয়, বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর প্রস্তাবিত টাকায় এবার ‘মডার্ন ফুড স্টোরেজ ফ্যাসিলিটিজ ফেইজ(১)’ শীর্ষক প্রকল্পে বরাদ্দ করছে। প্রকল্পের আওতায় দেশের ৮টি স্থানে ৫ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার আধুনিক স্টিলের সাইলো নির্মাণ করা হবে।
প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ কোটি মার্কিন ডলার (২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা)। অক্টোবর মাসে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হতে পারে। সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে ১২০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দিতে চেয়েছিল বাংলাদেশকে। কিন্তু অনিয়িম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন না করে অন্য প্রকল্পে অর্থায়ন করছে বিশ্বব্যাংক।
এরই ধারাবাহিকতায় এ প্রকল্পে ৩০ কোটি মার্কিন ডলার অর্থায়ন করবে বিশ্বব্যাংক। প্রকল্পের আওতায় ৮টি স্থানে আধুনিক স্টিলের তৈরি শস্য সংরক্ষণের কাজে নির্মিত বায়ু নিরোধক ঘর (সাইলো) এবং দুর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে গৃহস্থলি সাইলো নির্মাণ করা হবে।
প্রকল্পটি জুলাই ২০১৩ থেকে জুন ২০১৮ মেয়াদে বরিশাল, নারায়ণগঞ্জ, আশুগঞ্জ, ময়মনসিংহ, মহেশ্বরপাশা, চট্টগ্রাম ও মধুপুর এলাকায় বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্পটি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় খাদ্য অধিদপ্তর বাস্তবায়ন করবে।
এ লক্ষে বিশ্বব্যাংকের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (আইডিএ) ২৭ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার নমনীয় ঋণ সহায়তা দেবে। উন্নয়ন সহযোগীদের অনুদানে গঠিত বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ রেজিলাইঞ্জ ফান্ড(বিসিসিআরএফ) শীর্ষক ফান্ড থেকে ২ কোটি ৫০ লাখ ডলার প্রদান করবে।
এ ট্রাস্ট ফান্ড থেকে প্রাথমিকভাবে ১ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার প্রদান করবে। অবশিষ্ট টাকা দ্বিতীয় ধাপে বরাদ্দ পাওয়া যাবে বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইআরডির উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, অক্টোবরের শেষদিকে ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের বোর্ড ফান্ড মিটিং অনুষ্ঠিত হবে। সভায় এ প্রকল্পের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আগামী অর্থবছরে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে কী কী বিষয়ে অর্থায়ন করবে মূলত এ বিষয়ে সভাটি অনুষ্ঠিত হবে। সভায় বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি ছাড়াও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে অর্থমন্ত্রী এমএ মুহিত ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব আবুল কালাম আজাদ উপস্থিত থাকবেন।
বর্তমানে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ১৭ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য শস্য মজুদের সুবিধা রয়েছে। যা দেশের ৪৭৪টি উপজেলায় বিস্তৃত। বেশিরভাগ খাদ্য গুদাম ১৯৪০ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে নির্মিত।
গত দশকে দেশের জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। খাদ্য মজুদ ক্ষমতা ২০১৫ সাল নাগাদ ২২ লাখ মেট্রিক টন এবং ২০৩০ সাল নাগাদ ৩০ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করতে ৬ষ্ঠ পঞ্চ-বার্ষিকী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আহমদ হোসেন খান বাংলানিউজকে বলেন, যেকোনো সময় বিশ্বব্যাংকের বোর্ড ফান্ডের সভায় এ প্রকল্পের ফাইল উপস্থাপন করা হবে। এরপর বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে ঋণ চুক্তি সই হবে।
এরই মধ্যে প্রকল্পের বিষয়ে সমঝোতা হয়ে গেছে। আশা করছি, অক্টোবর মাসেই প্রকল্পটি একনেক সভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। প্রাথমিক অবস্থায় দেশের ৮টি জেলায় ৫ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার সাইলো গুদাম নির্মাণ করা হবে। এতে ব্যয় হবে ৩০ কোটি মার্কিন ডলার।
প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
দুর্যোগকালীন এবং দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে খাদ্য শস্য প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ। কৌশলগত স্থানে এবং আধুনিক পদ্ধতিতে খাদ্য মজুদ বাড়ানো। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ও খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে খাদ্য শস্যের মজুদ নিশ্চিত করা। এ ছাড়াও প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবণ এলাকায় উপকারভোগীদের মধ্যে জরুরি খাদ্য ও বীজ সংরক্ষণের জন্য গৃহস্থলী সাইলো বিতরণ করা।
প্রকল্পে অনুমোদন
গত ২৮ এপ্রিল পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় কতিপয় সংশোধনের সাপেক্ষে সুপারিশ করা হয়। বর্তমানে প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে বলে জানা গেছে।
প্রকল্পে সমঝোতা
এ বছরেই বিশ্বব্যাংকের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ‘মডার্ন ফুড স্টোরেজ ফ্যাসিলিটিজ ফেইজ(১)’ শীর্ষক প্রকল্পে নেগোসিয়েশন হয়। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে নেগোসিয়েশনের জন্য বাংলাদেশে সরকারের তরফে প্রতিনিধিদলের দলনেতা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি)অতিরিক্ত সচিব অারাস্তু খান।
এ ছাড়াও অন্য সদস্যের মধ্যে ছিলেন খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আহমদ হোসেন খান এবং পরিকল্পনা কমিশনের যুগ্ম-প্রধান আব্দুল আহাদ।
ঋণের শর্ত
প্রকল্পের নেগোসিয়েশনের জন্য বিশ্বব্যাংক থেকে খসড়া ফিন্যান্স এগ্রিমেন্ট (এফএ), গ্রান্ড এগ্রিমেন্ট(জিএ) ও প্রজেক্ট এপ্রাসিয়াল ডকুমেন্ট(পিএডি) পাওয়া গেছে। প্রকল্পের জন্য প্রাপ্ত বিশ্বব্যাংকের ঋণের অর্থ ১০ বছরের রেয়াতি সময় ছাড়াও ৪০ বছরে পরিশোধ করতে হবে। এ ঋণের উত্তোলিত অর্থের ওপর বার্ষিক শূন্য দশমিক ৭৫ ভাগ হারে সার্ভিস চার্জ প্রদান করতে হবে।
আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা
প্রাপ্ত ফিন্যান্স এগ্রিমেন্ট(এফএ), গ্রান্ড এগ্রিমেন্ট(জিএ) ও প্রজেক্ট এপ্রাসিয়াল ডকুমেন্টের (পিএডি) ওপর বাংলাদেশ সরকারের মতামত প্রণয়নের জন্য অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ এ বছরের ২৯ এপ্রিল একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এ সভায় সিদ্ধান্ত হয়, সুপারিশগুলোর আলোকে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে নেগোসিয়েশন করা হবে। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে নেগোসিয়েশন করা হয়।