রাতে আসে নাটকীয় সিদ্ধান্ত। বিএনপি মহাসমাবেশ একদিন পিছিয়ে শুক্রবার নয়াপল্টনে করার ঘোষণা দেয়। এদিন বেলা দুইটায় সমাবেশ শুরুর কথা জানান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কোনো ধরনের উস্কানিতে পা না দিয়ে নেতাকর্মীদের সমাবেশে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি। গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের দলীয় সিদ্ধান্ত জানান। বিএনপি মহাসচিবের এ ঘোষণার পর রাতে শুক্রবার সমাবেশ করার বিষয় ঢাকা মহানগর পুলিশকে চিঠি দিয়ে অবহিত করেছে বিএনপি।
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, অনির্বাচিত ও অবৈধ ক্ষমতাসীন সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি, অনাচার, গুম, খুন, অত্যাচার নিপীড়নের শিকার আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির জনগণের রক্তার্জিত স্বাধীনতার সুবর্ণ ফসল গণতন্ত্র পুণরুদ্ধারের চলমান আন্দোলন আজ এক দফার আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। এই আন্দোলনের অংশ হিসাবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলসহ দেশের সকল গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দল ২৭শে জুলাই রাজধানী ঢাকায় শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান অথবা নয়াপল্টনে এই মহাসমাবেশ অনুষ্ঠানের কথা গত ২৩শে জুলাই ঢাকা মহানগর পুলিশ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। মহানগর পুলিশ কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উচ্চ আদালতের আপত্তি এবং কর্মদিবসে নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠানে জনদুর্ভোগের অজুহাতে সমাবেশ অনুষ্ঠানে আপত্তি জানিয়েছে। যদিও ইতোপূর্বে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে এবং কর্মদিবসে নয়াপল্টনে অসংখ্য সমাবেশ-মহাসমাবেশ অনুষ্ঠানের দৃষ্টান্ত রয়েছে। ফখরুল বলেন, বিএনপি বরাবরই শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বাসী বিধায় সরকার ও সরকার দলীয় বিভিন্ন বাহিনীর নানা উস্কানি এমন কি গত প্রায় এক বছরে ২০ জন নেতা-কর্মী হত্যা ও অসংখ্য নেতা-কর্মী নির্যাতিত হওয়ার পরেও সীমাহীন ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতার পরিচয় দিয়েছে। এই মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ সারা দেশে অসংখ্য নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ও হচ্ছে। ঢাকার বিভিন্ন হোটেল এবং সারা দেশে নেতা-কর্মীদের বাসা বাড়িতে পুলিশি তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার চলমান আন্দোলনকে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে ২৭শে জুলাই বৃহস্পতিবারের পরিবর্তে আগামী ২৮শে জুলাই শুক্রবার-সাপ্তাহিক ছুটির দিন বেলা ২টায় নয়াপল্টনে পূর্ব ঘোষিত মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, আমরা আশা করি, দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে চলমান গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের অংশ হিসাবে আয়োজিত এই মহাসমাবেশ অনুষ্ঠানে সরকার বা সরকারের কোন প্রতিষ্ঠান বাধা সৃষ্টি করবে না। আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে আয়োজিত যেকোন গণতান্ত্রিক কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত করার যেকোন অপচেষ্টা দেশবাসী প্রকৃতপক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে বাধা সৃষ্টি হিসাবেই দেখবে এবং এমন অপচেষ্টায় নিয়োজিতদের গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা সৃষ্টিকারী হিসাবেই গণ্য করবে। আমরা সংশ্লিষ্ট সকলকে শান্তিপূর্ণভাবে আগামী শুক্রবার মহাসমাবেশ সফল করার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
ওদিকে বুধবার দুপুরের পর ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে দুই দলকে নিজেদের সমাবেশ স্থান পরিবর্তন করতে বলা হয়। বিএনপিকে পরামর্শ দেয়া হয় গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করার বিষয়ে ভাবতে। আওয়ামী লীগের তিন সংগঠনকে বলা হয় মহানগর নাট্যমঞ্চ বা ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে সমাবেশ করতে। পরে অবশ্য আওয়ামী লীগ শেরেবাংলা নগরের পুরাতন বাণিজ্যমেলা মাঠে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেয়। অন্যদিকে সমাবেশের স্থান নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতারা বৈঠকে বসেন গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে। রাত নয়টায় বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয় সাংবাদিকদের জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সরোয়ার, খায়রুল কবির খোকন, মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি উপস্থিত ছিলেন।
ওদিকে পূর্ব ঘোষিত বিএনপি’র মহাসমাবেশে অংশ নিতে বুধবার অনেক নেতাকর্মী ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন। গতকাল দুপুরের পর থেকে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশপাশে জড়ো হতে থাকেন তারা। দুপুরের পর সমাবেশের স্থান নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অবস্থান জানার পর সতর্ক ব্যবস্থা নেন নেতারা। তারা নেতাকর্মীদের নিরাপদ স্থানে চলে যেতে বলেন। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভিড় হওয়ায় আলোচনার জন্য কেন্দ্রীয় নেতারাও গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে চলে যান। বিকাল থেকে নয়াপল্টনে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সেখানে জলকামান এবং এপিসি মোতায়েন করা হয়। পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতির কারণে সন্ধ্যার পর নয়াপল্টন এলাকায় নেতাকর্মীদের ভিড় কমে যায়। বিএনপি’র মহাসমাবেশের দিনে সমমনা দলগুলোও সমাবেশ ডাকায় তাদেরও অপেক্ষা ছিল। বিএনপি’র সিদ্ধান্ত আসার পর এসব দলের পক্ষ থেকে শুক্রবার সমাবেশ করার কথা জানানো হয়।