নির্যাতন চালিয়ে সামিউল হত্যার ঘটনায় তোলপাড়
১২ জুলাই, ২০১৫
চোর অপবাদ দিয়ে সিলেট সদর উপজেলায় নির্মম ও বর্বরোচিতভাবে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা ১৩ বছরের কিশোর সামিউল আলম রাজনকে হত্যা করা হয়েছে। উপজেলার ৮ নম্বর কান্দিগাঁও ইউনিয়নের এ ঘটনার ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়। এরপর হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেফতারে তৎপরতা চালাচ্ছে পুলিশ। লাশ গুম করার সময় একজনকে আটক করে পুলিশে দেয় স্থানীয় জনতা।
সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলোতে ছড়িয়ে পড়া ২৮ মিনিটের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, রাজনকে কুমারগাঁও বাসস্টেশনের একটি দোকানঘরের বারান্দার খুঁটিতে বেঁধে রাখা হয়েছে। এতে দুজনের চেহারা দেখা গেলেও কণ্ঠ শোনা গেছে তিন-চারজনের।
‘এই ক (বল) তুই চোর, তোর নাম ক… লগে কারা আছিল…’ এসব বলতে বলতে রাজনকে পেটাতে দেখা যায় ওই ভিডিওতে।
একনাগাড়ে প্রায় ১৬ মিনিট তাকে লাঠি দিয়ে পেটানো হয়। এক পর্যায়ে পানি খেতে চাইলে ‘ঘাম খা’ বলে মাটিতে ফেলে রাখা হয় তাকে।
মারধরের সময় রাজনের আর্তচিৎকার এবং নির্যাতনকারীদের অট্টহাসি ও নানা কটূক্তি শোনা যায়। রাজনের নখ, মাথা ও পেটে রোল দিয়ে আঘাত করার পাশাপাশি বাঁ হাত ও ডান পা ধরে মোচড়াতেও দেখা যায়।
যিনি ওই ভিডিও ধারণ করছিলেন, তাকে নির্দেশ করে একটি কণ্ঠ জানতে চায়- ঠিকমতো ভিডিও হচ্ছে কি-না। ওপাশ থেকে উত্তর আসে-ফেইসবুকে ছাড়ি দিছি, অখন সারা দুনিয়ার মানুষ দেখব…।
গত বুধবার সামিউলকে হত্যা করে লাশ গুমের চেষ্টাকালে নগরীর জালালাবাদ পুলিশ ওই উপজেলার শেখপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল মালিকের ছেলে মুহিত আলমকে (২২) লাশসহ আটক করে। এর পর থেকে পুলিশ বাকি নির্যাতনকারীদের গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছে। পুলিশকে অভিযানে সহায়তা করছে বিজিবি। তবে আর কাউকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়নি পুলিশ। তবে পুলিশ বলছে, খুব শিগগরিই বাকি নির্যাতনকারীদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।
জালালাবাদ থানার ওসি আখতার হোসেন জানান, এ ঘটনায় যে বা যারাই জড়িত, তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে পুলিশ।
সামিউল হত্যাকাণ্ডে জড়িত মুহিত আলমকে সোমবার আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জালালাবাদ থানার ওসি (তদন্ত) আলমগীর হোসেন।
এদিকে সামিউল আলম রাজন হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এবং দায়ীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে রোববার বেলা ২টার দিকে তার বাড়ির সামনে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় গ্রামবাসী। তারা সামিউলের হত্যাকারীদের অবিলম্বে টালবাহনা না করে গ্রেফতার করে ফাঁসির দাবি জানান।
গত বুধবার সিলেট নগরীর কুমারগাঁওয়ে সামিউলকে চুরির মিথ্যা অপবাদে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে পৈশাচিক নির্যাতন চালানো হয়। একপর্যায়ে সামিউল মারা গেলে তার লাশ গুম করার চেষ্টাকালে পুলিশের হাতে আটক হয় মুহিত আলম। এ ঘটনায় মুহিতসহ চারজনকে আসামি করে পুলিশ বাদী হয়ে নগরীর জালালাবাদ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে।
নিহত সামিউল আলম রাজনের বাড়ি সিলেট নগরীর কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ডের পাশে সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়নের বাদেআলী গ্রামে। সামিউলের বাবা শেখ আজিজুর রহমান পেশায় একজন মাইক্রোবাসচালক। তার দুই ছেলের মধ্যে সামিউল বড়। অনন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা সামিউল সবজি বিক্রি করত।