নির্বাচিত সরকার না আসা পর্যন্ত- ॥ এ সরকারই বৈধ : সংবিধান অনুযায়ী ২৪ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে
তপন বিশ্বাস ॥ নির্বাচিত নতুন সরকার না আসা পর্যন্ত বর্তমান সরকারই বৈধ। সংবিধান অনুযায়ী আগামী ২৪ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করে নতুন সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। এ নিয়ে বিভ্রান্তির কোন সুযোগ নেই। আগামী ২৪ অক্টোবর বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হচ্ছে বলে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
সংবিধানের ১২৩ এর ৩ (ক) অনুচ্ছেদে সরকারের মেয়াদ সম্পর্কে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সংসদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার ৯০ দিন আগে থেকে (২৫ অক্টোবর) চলতি সংসদের প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিনের (২৪ জানুয়ারি) মধ্যবর্তী যে কোন সময় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের মাধ্যমে পরবর্তী সরকার না আসা পর্যন্ত বর্তমান সরকারই ক্ষমতায় থাকবে। বিরোধী দল সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন না করার দাবি জানাচ্ছে। তারা বলছেন, ২৪ অক্টোবরের পর এ সরকারের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। বিরোধী নেতাদের এ বক্তব্যে বিভ্রান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
গত ২০০৮ সালের ২৮ জানুয়ারি নির্বাচনের পর মহাজোট সরকার ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি শপথ গ্রহণ করে। ১৮ দিনের মাথায় ২৪ জানুয়ারি জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। সেই হিসেবে বর্তমান সংসদের মেয়াদ ২০১৪ সালের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। সংবিধানের ১২৩ এর ৩ (ক) অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পুর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে।’ সরকারের মেয়াদ অবসানের দারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে। সে হিসেবে আগামী ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত সংসদ বহাল থাকবে। এতে আইনগত বা সাংবিধানিক কোন বাধ্যবাধকতা নেই। এর পুর্ববর্তী ৯০ দিন অর্থাৎ ২৪ অক্টোবর থেকে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন কমিশন জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন সম্পন্ন করবে।
সংবিধানের ১২৩ এর ৩ অনুচ্ছেদের এ নির্বাচনের সঙ্গে সরকারের মেয়াদের কোন সম্পর্ক নেই। সরকারের মেয়াদ অবসানের পূর্ববতী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশন নির্বাচন সম্পন্ন করবে। এ নির্বাচনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারে সেক্ষেত্রে সংবিধানের ৫৬ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বহাল থাকবেন। আর যদি তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হন, সেক্ষেত্রে যারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবেন ৫৬ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তারাই সরকার গঠন করবেন।
সংবিধানের ১২৩ এর ৩ (খ) অনুচ্ছেদে বলা আছে ‘মেয়াদ-অবসান ব্যতীত অন্য কোন কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এক্ষেত্রে ৫৬ (২), (৩) ও (৪) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদ ভেঙ্গে যাওয়ার পর রাষ্ট্রপতি প্রয়োজন মনে করলে একটি মন্ত্রিপরিষদ গঠন করতে পারেন। এ মন্ত্রিপরিষদও নয়-দশমাংশ নির্বাচিত সদস্য অর্থাৎ সংসদ ভেঙ্গে যাওয়ার অব্যবহিত পূর্বে যারা সংসদ সদস্য ছিলেন এবং এক-দশমাংশ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের মধ্য থেকে মনোনীত হবে। বর্তমান সরকারের আমলে এমন কোন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। যে কারণে বিরোধী দল জনসভায় যে বক্তব্য দিচ্ছে, ২৪ অক্টোবরের পর এ সরকারের মেয়াদ শেষ হবে এটি কোনভাবেই সঠিক নয়।
বিরোধী দল একদিকে বলছে ২৪ অক্টোবর সরকারের মেয়াদ শেষ। অন্যদিকে তাদের দাবি তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল করা। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা চাইলে আগের হিসেবেই সরকারের মেয়াদ ২৪ জানুযারি পর্যন্ত। আর যদি বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন সম্পন্ন হয় সেক্ষেত্রে ২৪ অক্টোবরের পর সরকার ক্ষমতায় থাকলেও আর নীতিগত কোন সিদ্ধান্ত নেবে না। বরং এ সময় নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিষয় ছাড়া সরকারের আর কোন কাজ থাকবে না। তবে যেকোন হিসেবে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত এ সরকার থাকবে। বরং আগের মতো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হলে বতর্মান সরকার আগামী ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত সরকারের দায়িত্ব পালন করবে এবং এ সময় পর্যন্ত যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতাও তাদের থাকবে। কিন্তু বিরোধী দল এক সঙ্গে দুটি সুবিধাই পেতে যাচ্ছে। তাদের দাবি অনুযায়ী ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত এ সরকার ক্ষমতায় থাকুক। আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন সম্পন্ন হোক। যেটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক বলে মনে করছেন দেশের বিশিষ্ঠ মহল।
আগামী ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত এ সরকার ক্ষমতায় আছে বিরোধী দলের এ জাতীয় বক্তব্যে ভবিষ্যতে আরও একটি বড় ধরনের গুজব সৃষ্টির আশঙ্কা করছেন দেশের সচেতন মহল। অনেকে মনে করছে, চলতি মাসের ২৪ অক্টোবরের পর দেশে গুজব ছড়ানোর জন্য বিরোধী দল বিভিন্ন জনসভায় বক্তব্য দিচ্ছে- এ সরকারের মেয়াদ ২৪ অক্টোবর শেষ হয়ে যাবে। মূলত ২৪ অক্টোবরের পর তারা জোরেশোরে প্রচার চালাবে এ সরকারের মেয়াদ শেষ। তারা অবৈধ সরকার। এ সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোন অধিকার নেই। শেষ অবস্থায় তত্ত্বাবধায়কের দাবিতে অন্দোলনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কাছে এ সরকারের গ্রহণযোগ্যতা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার চেষ্টা চালানো হবে। সেক্ষেত্রে সরকারেরও হোঁচট খাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষেও কোন পাল্টা বক্তব্য নেই।
সম্প্রতি দেশে গুজব নিয়ে নানা দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে। গুজবের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে কয়েকজন নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। গুজবের কারণে কোথাও কোথাও পুরুষ-মহিলা নির্বিচারে রাস্তায় নেমে এসেছে। শেষ মুহূর্তে আবারও গুজব সৃষ্টি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।
সচেতন মহল মনে করে বিরোধী দলের এ জাতীয় অযৌক্তিক বক্তব্যে পাল্টা বক্তব্য সরকারের পক্ষ থেকে থাকা উচিত। তা না করে বর্তমান সরকারের কোন কোন দায়িত্বশীল মন্ত্রীও বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বলছেন, ‘আমাদের মেয়াদ আর মাত্র ২০ দিন রয়েছে।’ এতে বিরোধী দলের সম্ভাব্য গুজবকে আরও বাস্তবসম্মত করে তোলা হচ্ছে। এক্ষেত্রে মন্ত্রীদের বক্তব্য দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করে দেশের বুদ্ধিজীবী মহলও।