নিখোঁজ বিমানের সন্দেহ ঘোচাতে প্রকাশ করা হবে উপগ্রহের তথ্য
মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৭৭-এর নিখোঁজ বিমান যাত্রীদের স্বজনদের দাবির মুখে উপগ্রহ থেকে পাওয়া ফ্লাইট এমএইচ৩৭০ এর সর্বশেষ তথ্য ও ছবি প্রকাশ করা হবে জানিয়েছে, মালয়েশিয়া সরকার ও বৃটিশ স্যাটেলাইট কোম্পানি ইনমারস্যাট।
এমন এক সময়ে এ ঘোষণা এলো, যখন সিআইএ ও বোয়িং কর্পোরেশনকে জড়িয়ে মাহাথির মোহাম্মদের বক্তব্যে নতুন বিতর্ক দানা বেঁধে উঠেছে।
মালয়েশিয়ার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ও ইনমারস্যাট মঙ্গলবার এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে ভারত মহাসাগরে অনুসন্ধান এলাকা কমিয়ে আনতেই উপগ্রহ থেকে পাওয়া তথ্য প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। তবে কবে, কীভাবে এসব তথ্য প্রকাশ করা হবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু তারা জানায়নি।
গত ৮ মার্চ ২৩৯ জন যাত্রী নিয়ে কুয়ালালামপুর থেকে চীনের বেইজিংয়ে যাওয়ার পথে বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজটির সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ কক্ষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর থেকে দক্ষিণ চীন সাগর ও ভারত মহাসাগরে প্রায় আড়াই মাস ধরে বহুজাতিক অনুসন্ধান চালিয়েও কোনো ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিমানটি ছিনতাই হওয়ারও কোনো বিশ্বাসযোগ্য তথ্যও এ পর্যন্ত মেলেনি।
এই প্রেক্ষাপটে ওই বিমানের যাত্রীদের স্বজনরা ফ্লাইট এমএইচ৩৭০-এর স্যাটেলাইট তথ্য প্রকাশ করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
ইনমারস্যাট-এর তথ্যের ভিত্তিতে মালয়েশিয়া সরকার বলে আসছে, বিমানটিকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে নির্ধারিত যাত্রাপথের উল্টোদিকে চালানো হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত উড়োজাহাজটি অস্ট্রেলিয়া উপকূলের কাছে ভারত মহাসাগরে বিধ্বস্ত হয়েছে ধরে নিয়েই এতদিন অনুসন্ধান চালানো হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার নেতৃত্বে এ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র নৌ-বাহিনীর একটি মনুষ্যবিহীন খুদে ডুবোজাহাজ।
বিমানটি নিখোঁজ হওয়ার পর অন্য অনেক জল্পনা-কল্পনার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের গোপন সামরিক ও গোয়েন্দা কার্যক্রমের প্রসঙ্গও এসেছে অবধারিতভাবে। গত ১৮ই এপ্রিল এক ব্লগ লিখে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ এবং নিখোঁজ বিমানটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং কর্পোরেশনের দিকে আঙুল তুলেছেন মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ।
তার সন্দেহ, সিআইএ এবং বোয়িং তথ্য গোপন করছে। আর অস্ট্রেলিয়া উপকূলে মহাসাগরে অনুসন্ধানের নামে বৃথাই সময় নষ্ট করা হচ্ছে।
মাহাথিরের ব্লগের শিরোনাম, ‘বোয়িং প্রযুক্তি: যা কিছু উপরে ওঠে, তাকে নীচে নামতেই হয়’। তার মূল বক্তব্য, রেডিও, স্যাটেলাইট ট্র্যাকিং সিস্টেমসহ শক্তিশালী যোগাযোগ প্রযুক্তির এই দিনে আস্ত একটি উড়োজাহাজ গায়েব হয়ে যেতে পারে না।
ইন্টারনেটে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আধুনিক মালয়েশিয়ার জনক মাহাথির মোহাম্মদ বলছেন, ২০০৬ সালে বোয়িং যুক্তরাষ্ট্রে একটি নতুন প্রযুক্তির পেটেন্ট পায়, যার মাধ্যমে ভূমি থেকে একটি উড়ন্ত বিমানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে একটি নির্দিষ্ট স্থানে নামিয়ে আনা সম্ভব। সন্ত্রাসীরা বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টা করলে পাইলট নিজেই এই ‘আনইন্টারাপটেবল অটোপাইলট’ চালু করে দিতে পারবেন অথবা রেডিও বা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বিমানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সরকারি কোনো সংস্থা উড়োজাহাজটি ফিরিয়ে আনতে পারবে।
তার ব্লগে বলা হয়েছে, যেহেতু এমএইচ৩৭০-এর জিপিএসসহ যোগাযোগের সব ব্যবস্থা উদ্দেশ্যমূলকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে, সুতরাং বোয়িং কর্পোরেশনের জানা থাকার কথা, কীভাবে সেটি করা সম্ভব। আর এ ধরনের একটি বাণিজ্যিক উড়োজাহাজের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার ক্ষমতা স্পষ্টতই বোয়িং এবং নির্দিষ্ট কিছু সংস্থার হাতে ছিল।
কেউ কিছু গোপন করছে। মালয়েশিয়াকে অভিযুক্ত হতে হবে এটা অন্যায়। কিছু কারণে বোয়িং ও সিআইএ-কে নিয়ে কোনো প্রতিবেদন গণমাধ্যম ছাপবে না। তবে আমি আশা করি, আমার পাঠকরা এই লেখা পড়বেন।
এদিকে নিখোঁজ বিমানটি নিয়ে অ্যাংলো-অ্যামেরিকান সাংবাদিক নাইজেল কওথর্নের লেখা একটি বই গত সোমবার প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে দাবি করা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র-থাইল্যান্ডের যৌথ মহড়া চলার সময় ফ্লাইট এমএইচ৩৭০-এ দুর্ঘটনাক্রমে গুলি লাগে এবং বিমানটি সাগরে বিধ্বস্ত হয়।
ওই সময় দক্ষিণ চীন সাগরে থাইল্যান্ড-যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও চীন, জাপান, ইন্দোনেশিয়াসহ কয়েকটি দেশের সামরিক মহড়া চলছিল। থাইল্যান্ড উপসাগরের একটি তেলক্ষেত্রে কর্মরত নিউজিল্যান্ডের নাগরিক মাইক ম্যাককে গত ৮ মার্চ একটি বিমানকে গুলিতে ভূপাতিত হতে দেখেন।
নাইজেল কওথর্ন বলছেন, ম্যাককে যে বিমানটিকে জলন্ত অবস্থায় সাগরে পড়তে দেখেছেন, সেটি আসলে ফ্লাইট এমএইচ৩৭০। এ বিষয়টি আড়াল করতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বারবার বিভিন্ন রকম খবর ছড়ানো হয়েছে, যাতে অনুসন্ধান ভুল পথে চালিত হয়।