নায়করাজ রাজ্জাকের শারীরিক অবস্থার উন্নতি
২৯ জুন, ২০১৫
লাইফ সাপোর্টে থাকা বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নায়ক নায়করাজ রাজ্জাকের শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বর্তমানে তিনি রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে আইসিইউর ৬ নম্বর বেডে ভর্তি রয়েছেন। রেসপিরেটরি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আদনান ইউসুফ চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে আছেন তিনি।
হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা নার্স তাহমিনা আক্তার চিকিৎসকের বরাত দিয়ে জানান, অভিনেতা রাজ্জাকের শারীরিক অবস্থা তুলনামূলক ভালো। তিনি কনশাস আছেন, বেডের পাশে পরিবার সদস্যরা এলে তিনি তা বুঝতে পারছেন।
তবে তিনি পুরোপুরি আশঙ্কামুক্ত কি না তা এখনই বলা যাচ্ছে না বলে জানান তাহমিনা।
রাজ্জাকের বড় ছেলে বাপ্পারাজ যুগান্তরকে জানান, ‘শ্বাসকষ্টজনিত কারণে শুক্রবার তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শনিবার রাতে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তিনি আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে আছেন।’ বাপ্পারাজ তার বাবার সুস্থতা কামনা করে দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।
হাসপাতালের একটি সূত্রে আরও জানা যায় নায়ক রাজ্জাক দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস ও হাইপার টেনশনেও ভুগছেন। ইউনাইটেড হাসপাতালের চিফ অব কমিউনিকেশন অ্যান্ড বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ডা. শাগুফা আনোয়ার জানান, নায়ক রাজ্জাকের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। তার ফুসফুসে পানি জমেছে। সে কারণে শ্বাস নেয়ার ক্ষমতা কমে গেছে। এ অবস্থায় তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস-প্রশ্বাস দিয়ে রাখা হয়েছে।
এদিকে নায়করাজ রাজ্জাকের অসুস্থতার সংবাদ ছড়িয়ে পড়তেই শোরগোল পড়ে যায় মিডিয়ায়। শুধু মিডিয়া নয় সারা দেশের মানুষ এ কিংবদন্তির খবর জানতে উদগ্রীব হয়ে ওঠেন।
নায়করাজ রাজ্জাক শুধু বাংলাদেশ নয় দুই বাংলার চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি। ১৯৬৮ সালে জহির রায়হানের ‘বেহুলা’ ছায়াছবির মাধ্যমে নায়ক হিসেবে তার চলচ্চিত্রাঙ্গনে অভিষেক। এ পর্যন্ত প্রায় ছয়শ’ ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। ১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি কলকাতার টালিগঞ্জে রাজ্জাকের জন্ম। ১৯৬৪ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হলে রাজ্জাক স্ত্রী লক্ষ্মী এবং পুত্র বাপ্পাকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। স্কুলে পড়ার সময় ‘বিদ্রোহ’ নাটক আর কলেজ জীবনে ‘রতন লাল বাঙ্গালি’ ছায়াছবিতে তার প্রথম অভিনয়। ১৯৫৯ সালে বোম্বের ফিল্মালয়ে ভর্তি হন। এরপর কলকাতার ‘পংকতিলক’ এবং ‘শিলালিপি’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ঢাকায় আসার পর প্রথম যোগাযোগ করেন ‘মুখ ও মুখোশ’-এর পরিচালক আবদুল জব্বার খানের সঙ্গে। তিনি রাজ্জাককে ওই সময়ের বিখ্যাত চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থা ইকবাল ফিল্মসে চাকরি নিয়ে দেন। চাকরিটি হচ্ছে পরিচালক কামাল আহমেদের সহকারীর কাজ। সহকারী পরিচালক হিসেবে রাজ্জাকের প্রথম ছবি ‘উজালা’। সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি ‘১৩নং ফেকু ওস্তাগার লেন’, ‘আখেরি টেনশন’ ও ‘ডাক বাবু’ ছবিতে তিনটি ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয় করেন রাজ্জাক। বরেণ্য চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানের সহকারী হিসেবেও কাজ করেন তিনি। একদিন হঠাৎ করেই সুযোগ পান নায়ক হওয়ার। জহির রায়হান রাজ্জাককে ‘বেহুলা’ ছবির নায়ক বানিয়ে দেন। ‘বেহুলা’র নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন সুচন্দা। ১৯৬৬ সালে মুক্তি পায় ‘বেহুলা’। ছবিটি সুপারহিট হলে রাজ্জাক তার স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যান। ঢাকার চলচ্চিত্র পায় একজন রোমান্টিক নায়ক, যিনি পরবর্তীকালে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সেরা নায়ক হয়ে ওঠেন। রাতারাতি বনে যান নায়করাজ রাজ্জাক। রাজ্জাক অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে অবুঝ মন, চোর, নাচের পুতুল, নীল আকাশের নিচে, বড় ভালো লোক ছিল, বেঈমান, ময়নামতি, মনের মতো মন, রংবাজ, লাইলি মজনু, সঙ্গীতা, জীবন থেকে নেয়া ইত্যদি। অভিনয়ের পাশাপাশি বর্তমানে তিনি জাতিসংঘের (ইউএনএফপিএ) বিশেষ দূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।