নামাজে কাতার সোজা করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা মাওলানা মাহ্‌মূদুল হাসান

03/05/2015 8:43 pmViews: 7

নামাজে কাতার সোজা করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা
মাওলানা মাহ্‌মূদুল হাসান

নামাজে বিভিন্ন সুন্নত রয়েছে। তাই যেভাবে মনে চায় সেভাবে দাঁড়ানো যাবে না। কারণ দাঁড়ানোটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার নয়; বরং আমি এক মহান সত্তার আদেশ পালনার্থে দাঁড়িয়েছি। আমি যদি আমার ব্যক্তিগত কাজে দাঁড়াতাম, তাহলে যেভাবে মনে চায় সেভাবে দাঁড়াতে পারতাম। আর্মিরা যখন প্রশিক্ষণের জন্য লাইনে দাঁড়ায় তখন কি তারা নিজ ইচ্ছামতো দাঁড়ায় নাকি যিনি তাদের কমান্ড করেন তার নির্দেশ মতো দাঁড়ায়? অনেক সময় দেখা যায়, কেউ যদি কাতার সোজা করে দাঁড়াতে বলেন, তাহলে অনেকে তার ওপর চটে গিয়ে বলেন, আপনি ঠিকমতো দাঁড়ান, আমি ঠিকই দাঁড়িয়েছি! চটে যাওয়ার কারণও আছে, যিনি সোজা দাঁড়াতে বলেন, তিনি কথার মধ্যে এমন আমিত্বভাব প্রকাশ করেন যে, মনে হয় মাসয়ালা তিনি একাই জানেন আর কেউ জানেন না। মোটকথা নামাজে দাঁড়ানোটা নিজ ইচ্ছা কিংবা ব্যক্তিগত ব্যাপার নয়; বরং আমরা তখন আল্লাহর সামনে দাঁড়াই, তাই আল্লাহপাকের নির্দেশ ও নবীজীর তরিকা মোতাবেক দাঁড়াতে হবে। এতে যদি ভুল হয়ে যায়, আর যদি অনুগ্রহপূর্বক ভুল ধরিয়ে দেন, তাতে আরও খুশি হওয়ার কথা। এ অবস্থায় তার প্রতি চটে যাওয়া মোটেই ঠিক নয়। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- ‘তোমরা যখন নামাজে দাঁড়াও, সমান হয়ে দাঁড়াও; অন্যথায় আল্লাহপাক তোমাদের অন্তরে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে দেবেন।’

কিছুদিন আগে জনৈক ব্যক্তি আমাকে বললেন, হুজুর! আমাদের ইমাম সাহেবকে কিসে ধরেছে বুঝলাম না! আমি জিজ্ঞেস করলাম, কেন কী হয়েছে? তিনি উত্তরে বললেন, আমাদের ইমাম সাহেব প্রত্যেক নামাজের সময় কাতার সোজা করতে বলেন এবং আমাদের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। আরও কিছু বাড়তি কাজ করে থাকেন। সুতরাং অনুগ্রহপূর্বক আপনি একদিন আমাদের মসজিদে আসবেন। আমি তাকে বললাম, আমি আপনাদের মসজিদে গেলে ইমাম সাহেবকে বলব, তিনি যেন এক মিনিটের স্থানে তিন মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে কাতার সোজা করান। কারণ নামাজে কাতার সোজা করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। কাতার সোজা করার পর নামাজ শুরু করা ইমামের দায়িত্ব। যতক্ষণ পর্যন্ত কাতার সোজা না হবে, ইমাম সাহেব ততক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এটাই নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশ। কিন্তু অনেক সময় এই হাদিসের উপর পুরোপুরি আমল করা সম্ভব হয় না। কারণ বড় জামাতে যদি সব কাতার সোজা করতে শুরু করি, তবে অনেক সময়ের প্রয়োজন। এছাড়া মুসল্লিদের মধ্যে অনেক অসুস্থ, দুর্বল ও বৃদ্ধ লোক থাকে, যাদের কষ্টের প্রতি লক্ষ্য করে- ইসতাও! (‘কাতার সোজা করুন!’) বলেই ক্ষান্ত হয়ে যাই।

আমিরুল মুমিনীন হজরত ওমর ফারুক রাজিয়াল্লাহু আনহু নামাজের কাতার সোজা করার জন্য মেহরাব ছেড়ে সবার পেছনের কাতারে চলে যেতেন এবং প্রথমে সর্বশেষ কাতার সোজা করতেন, তারপর তার আগের কাতার সোজা করতেন, এভাবে একেক কাতার সোজা করে মেহরাবে চলে আসতেন। সব কাতার সোজা হওয়ার পর মুয়াজ্জিনকে বলতেন, এবার ইকামত দাও। নামাজের কাতার সোজা করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ, কাজেই এ সম্পর্কে ইলম শিখাও সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ।

লেখক : খতিব, গুলশান সেন্ট্রাল জামে মসজিদ, ঢাকা।

– See more at: http://www.bd-pratidin.com/islam/2015/04/24/76903#sthash.eZ4g6ogN.dpuf

Leave a Reply