নানান প্রত্যয় নতুন মন্ত্রীদের

13/01/2014 10:13 pmViews: 6

 

 

 

asadujjaman noor সবার মুখেই ছিলো আত্মবিশ্বাস। প্রত্যয় ছিলো নানা ধরনের। অনেকেই জানিয়েছেন, সরকার পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করবে। দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার বিষয়েও কথা বলেছেন কেউ কেউ। রোববার নতুন মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার পর গতকাল সোমবার ব্যস্ত সময় পার করেছেন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা। নিজ নিজ দপ্তরে কাজের পাশাপাশি এদিন তারা কথা বলেছেন সরকারের ভবিষ্যত কর্ম পরিকল্পনা নিয়ে। এসময় তারা আগামী দিনে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারের কঠোর হওয়ার কথা যেমন বলছেন, তেমনি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার তাগিদও দিয়েছেন। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সরকারকে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই পথ চলতে হবে বলে মনে করছেন নতুন মন্ত্রিপরিষদ সদস্যরা।
সচিবালয়ের ভেতরটা অনেকের কাছে দীর্ঘদিনের চেনা। আবার কেউ কেউ এসেছেন প্রথমবারের মতো দায়িত্ব নিতে। তবে পরিচিত হলেও নতুন সরকারের প্রথম দিন বলে কথা। তাই উৎসবের কমতি ছিলো না কোনো দিক থেকেই। নতুন-পুরোনো মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের বরণ করতে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদেরও তাই কাটে ব্যস্ত সময়। প্রায় সবখানেই যেন ছিলো ‘ঈদের খুশি’। তবে আনুষ্ঠানিকতা শেষে সরকারের ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেন নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা।
সকালে সচিবালয়ে গিয়ে দেখা যায়, মন্ত্রিসভার নতুন সদস্যদের আগমনে সরব হয়ে ওঠে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়। দীর্ঘদিন পর কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের দপ্তরে। সচিবালয়ে ব্যস্ত সময় পার করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করে রোববার শপথ নেয় ৪৯ সদস্যের মন্ত্রিসভা। নির্বাচনকালীন সরকারের স্বপ্ন পরিসরের মন্ত্রিসভা থাকলেও নির্বাচনী কাজে ব্যস্ততার কারণে বিভিন্ন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরে কাজকর্ম ছিল অনেকটা স্থবির। নতুন মন্ত্রিসভার শপথের পরদিন গতকাল সোমবার সকাল থেকে নতুন করে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসে সচিবালয়ে। নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্য এবং নতুন কিছু মুখ যোগ হওয়ায় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের আগমন ছিল উৎসবমুখর। ঝকঝকে গাড়িতে পরিপাটিভাবে একে একে তাদের আগমনে ছিল বরণ করে নেওয়ার আয়োজন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বরণ করে নেন নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের।
সকাল ৯টা ২০ মিনিটে সচিবালয়ে প্রথম আসেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। সবার আগে সচিবালয়ে এসে রেকর্ড গড়েন নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভার দুই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত এই মন্ত্রী। সকাল ৯টা ৫৬ মিনিটে সচিবালয়ে আসেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার। সকাল ১০টা ১০ মিনিটে নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, ১০টা ৩৪ মিনিটে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ আসেন সচিবালয়ে। ১১টা ১৫ মিনিটে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক এবং খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, ১১টা ৫০ মিনিটে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন আসেন দপ্তরে। এরপর একে একে সচিবালয়ে আসতে থাকেন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা।
পুলিশি নিরাপত্তায় সচিবালয়ে প্রবেশ করেই সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো মিডিয়ার মুখোমুখি হন অনেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী। তারা সরকারের কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং দেশকে উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূল এবং সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ারও আশাবাদ ব্যক্ত করেন দশম জাতীয় সংসদের মন্ত্রিসভার সদস্যরা।
দায়িত্বের প্রথম দিনে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, সমঝোতা হলে তো অনেক কিছুই হতে পারে, এখন তাদের যে দাবি তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না। সে দাবি যদি তারা এখনো বলবৎ করে রাখে তাহলে সমঝোতা হওয়া তো কঠিন। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, যারা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের পথ বেছে নেয় তাদের সাথে তো আওয়ামী লীগের সমঝোতা হতে পারে না। খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, মানুষ কিন্তু শান্তি চায়, তত্ত্ববধায়ক সরকার বা অন্যকিছু কিন্তু মানুষের চাওয়ার মধ্যে নেই। যারা সন্ত্রাস করে যারা বোমাবাজি করে তাদের লক্ষ তো কখনও সফল হবে না। আমার যে চ্যালেঞ্জ আমি মোকাবিলা করার চেষ্টা করব। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, যে জায়গায় গত সরকার কাজ শেষ করেছিল এবার সে জায়গা থেকে শুরু করতে হবে। আর আমার মূল লক্ষ হবে জঙ্গিবাদ নির্মূল করা। আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল হক বলেন, এই সরকার মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু করেছিল এবং অনেকাংশে সেটা সফল করেছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার যে উদ্যোগ সরকার নিয়েছে আমার লক্ষ থাকবে সেটাকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়া।
অন্যদিকে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টির একই সঙ্গে সরকারে থাকা নিয়েও কথা বলেছেন নতুন মন্ত্রীদের কেউ কেউ। সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মোহসিন আলী বলেন, বিএনপি কেন নির্বাচনে আসল না? যেহেতু তারা নির্বাচনে আসেনি সেহেতু এর ক্ষতি তাদেরই ভোগ করতে হবে। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, সবকিছুই নির্ভর করবে আমরা জনগণের জন্য কতটুকু করতে পারছি এবং জনগণকে আমাদের পক্ষে কতটুকু রাখতে পারছি। জনগণ যদি আমাদের পাশে থাকে তাহলে আমাদের অগ্রযাত্রা কেউ রুখতে পারবে না। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, আমাদের লক্ষ থাকবে জনগণের আকাক্সক্ষা অনুযায়ী সুষ্ঠু প্রশাসন ও সুশানের ব্যবস্থা করা।

Leave a Reply