নরসিংদীর শহরের বটতলায় শতকোটি টাকা মূল্যমানের রেলওয়ের সম্পত্তি অবৈধভাবে দখল করে সেখানে দোকাপাট নির্মাণ করে ও বাজার বাসিয়ে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে কোটি টাকা।
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ- নরসিংদীর শহরের বটতলায় শতকোটি টাকা মূল্যমানের রেলওয়ের সম্পত্তি অবৈধভাবে দখল করে সেখানে দোকাপাট নির্মাণ করে ও বাজার বাসিয়ে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে কোটি টাকা। প্রতিমাসে বাজারের দোকানপাট থেকে ভাড়া বাবদ হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে ৪/৫ লক্ষ টাকা। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বাধাঁ নিষেধ দেয়া সত্বেও প্রকাশ্যে জোরপূর্বক ভূমিদস্যুচক্র দোকান পাট নির্মাণ করে পুকুরের জায়গা ভরাট করে বাজার বসিয়ে তাদের রাম রাজত্ব কয়েম করেছে। সরকারকে চ্যালেঞ্জ করে যেন তাদের এ কর্মযজ্ঞ, এমনটি মন্তব্য করেছেন স্থানীয় জনতা।
খোঁজ নিয়ে জানাযায়, প্রায় এক যুগ পূর্বে নরসিংদী পৌর শহরের রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন বানিয়াছল মহল্লার বটতলা এলাকায় স্থানীয় প্রভাবশালীরা একটি কাঁচা বাজার স্থাপন করে। ৪/৫টি দোকান ব্যতিত বাঁকি প্রায় অর্ধশত দোকানের বৈধ কোন কাগজপত্র না থাকায় ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ রেলওয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে অবৈধ দোকাপাট ও কাঁচা বাজার উচ্ছেদ করা হয়। এ সময় রেলস্টেশন, আল্লাহু চত্বর ও শাপলা চত্বও এলাকার প্রায় শতাধিক অবৈধ দোকনপাট ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়া হয়।
আর এ সুযোগে উচ্ছেদের পর অপর একটি ভূমিদস্যু চক্র পেশিশক্তির বলে সরকারী ভূমিতে পুনরায়: পাকা দোকানপাট নির্মাণ করেছে। বটতলা এলাকায় শহীদুজ্জামান চৌধুরী ৯৮শতাংশ পুকুর মৎস চাষের জন্য ১লাখ ৭৬হাজার ৪শত টাকায় বাংলাদেশ রেলওয়ের ভূ সম্পত্তি কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ৫বছরের জন্য অস্থায়ীভাবে লাইসেন্স গ্রহন করে। বটতলা বাজার ও দোকাপাট উচ্ছেদের সুযোগে শহীদুজ্জামান চৌধুরী গংরা রেলওয়ের পুকুর ভূমি ভরাট করে কাঁচা বাজার স্থাপন এবং ভাংচুরকৃত দোকানের জায়গা জবর দখল করে সে জায়গায় নতুন করে প্রায় শতাধিক দোকাপাট নির্মাণ করে। পুকুরের পারটিয়া ভূমিতে নির্মাণ করে দোকপাট। এসব দোকাপাট থেকে সেলামির নামে অগ্রিম বাবদ হাতিয়ে নেয় কোটি টাকা। কাঁচা বাজার এলাকার দোকানপাট থেকে প্রতিমাসে ভাড়া বাবদ হাতিয়ে নিচ্ছে প্রায় ৪/৫লক্ষ টাকা।
শহীদুজ্জামান চৌধুরী পুকুরের লাইসেন্স গ্রহণকালে বাংলাদেশ রেলওয়ের ভূ সম্পত্তি কর্মকর্তার সাথে চুক্তিপত্র সম্পাদন করেন। চুক্তিপত্রের ৩নং শর্তে উল্লেখ রয়েছে আমি/আমরা মৎস চাষ/ মৎস শিকার ছাড়া অন্য কোন কাজে বর্ণিত জলাশয় ব্যবহার করতে পারব না। ৪ নং শর্তে আছে আমি/আমরা মৎস চাষ/মৎস শিকার ছাড়া অন্য কোন কাজ যেমন বসবাসের নিমিত্তে কোন ঘরবাড়ি অথবা কাচা ও পাকা নির্মাণাদি করা, বাগান করা, পুকুর গর্ত নালা বা খাল খনন, রাস্তাঘাট, মসজিদ মন্দিও, শশ্মান, কবরস্থান অথবা অন্য কোন কাজের জন্য নির্মণাদি অথবা ঐ জাতীয় অন্য কোন কাজে এ জমি ব্যবহার করব না বা কারো দ্বারা করাবো না।
এসব শর্ত ভংঙ্গ করে পুকুর ভরাট করে ভূমির পরিবর্তণ কওে স্থাপন করা হয়েছে কাচাঁ বাজার, পুকুরের পারটিয়া ভূমিতে নির্মাণ করা হয়েছে দোকানপাট, অন্য একটি জলাশয়ের জায়গা ভরাট কওে নির্মাণ করা হচ্ছে মসজিদ, সম্পুর্ণ অবৈবভাবে কোটি কোটি টাকার জায়গা দখল করে দোকান নির্মাণ করে পজিশন বিক্রি ও ভাড়া দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি অফিসের কাননগো মো: ইকবাল মাহমুদ রেলওয়ের ভূমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করায় নরসিংদী সদর মডেল থানায় অফিসিয়াল এফআইআর দাখিল করেন। এফআইআর এ উল্লেখ করা হয় বাবু চৌধুরী, শফিকুল ইসলাম, শহীদুজ্জামান চৌধুরী অন্যায়, অবৈধ ও বে-আইনিভাবে অনু প্রবেশ করে নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনের পশ্চিমে বটতলা নামক স্থানে রাস্তার দক্ষিণ পাশের পুকুড় পাড়ের রেল ভূমিতে নির্মান কাজ শুরু করেন। উল্লেখিত ৩ ব্যাক্তি রেলভূমিতে টিনসেড ঘর নির্মাণ করে রেলভুমি দখল করেন। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃক নরসিংদী স্টেশনের রেলভূমি হতে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের পর উক্ত তিন ব্যাক্তি ছাড়াও আশপাশ এলাকায় ইতোমধ্যে ২০/২২জন ব্যক্তি রেল ভূমিতে সেমি পাকা ঘর ও টিনশেড ঘর নির্মাণ করে রেল ভূমি দখল করছেন। বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃক বটতলা এলাকায় পুকুড়ের পানিতে শুধুমাত্র মাছ চাষ করার জন্য শহীদুজ্জামান চৌধুরী এর নামে মৎস কাজে লাইসেন্স প্রদান করা আছে। পুকুরপাড়ে কোন প্রকার ঘর তৈরী করার অনুমতি দেওয়া হয়নি বিধায় উক্ত ব্যক্তিগণ কর্তৃক রেল ভূমিতে ঘর নির্মাণ করার সুযোগ নেই।
স্থানীয় জনগণের মতে অবৈধ দখলদাররা শতকোটি টাকার সরকারী সম্পদ দখলের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন । এ ব্যপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা উদাসীন। সঠিক তদারকী সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব। এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যোগসাজসে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ এখন সময়ের দাবী। চলবে ……….