নগর আওয়ামী লীগের কমিটি নিয়ে তোড়জোড়
নগর আওয়ামী লীগের কমিটি নিয়ে তোড়জোড়
শিগগিরই ঘোষণা করা হতে পারে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উত্তর ও দক্ষিণের কমিটি। সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর সংগঠনকে গতিশীল করতে কমিটি ঘোষণার এ প্রক্রিয়া জোরেশোরে চলছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। দীর্ঘ আড়াই বছর ধরে ঝুলে থাকা কমিটি ঘোষণার এমন সম্ভাবনায় উজ্জীবিত নগরের বিভিন্ন থানা ওয়ার্ড ও ইউনিটের নেতাকর্মীরা। এদিকে নতুন কমিটিতে কারা দায়িত্ব পাচ্ছেন, কারা বাদ পড়ছেন এ নিয়ে চলছে নানা হিসাব নিকাশ। তবে, দলের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে অপেক্ষাকৃত তরুণ ও অভিজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি ভারসাম্যপূর্ণ কমিটি গঠন করা হবে। নতুন কমিটিতে তরুণ, অভিজ্ঞদের পাশাপাশি ত্যাগী, তৃণমূলের কর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্য নেতারাই স্থান পাবেন। এক্ষেত্রে বাদ পড়তে পারেন পুরনো অনেক প্রভাবশালী নেতা। ২০১২ সালের ২৭শে ডিসেম্বর সর্বশেষ ঢাকা মহানগর আওয়ামী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দলের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যতদিন নতুন কমিটি ঘোষিত না হবে ততদিন পুরনো কমিটি দায়িত্ব পালন করবে বলে তখন জানানো হয়। কিন্তু সম্মেলনের প্রায় আড়াই বছর পার হলেও নতুন কমিটি ঘোষিত না হওয়ায় মুখ থুবড়ে পড়েছে দলীয় কার্যক্রম। যা অব্যাহত আছে এখনও। কোন্দল, সংঘাত ও নেতায় নেতায় দ্বন্দ্বে জর্জরিত হয়ে নগরের প্রতিটি থানা, ওয়ার্ডে রাজনৈতিক কর্মসূচি হয়ে পড়েছে অনেকটাই নিষ্ক্রিয়। সদ্য অনুষ্ঠিত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও এর প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। ফলে, জটিলতা নিরসনে শিগগিরই কমিটি ঘোষণার প্রক্রিয়া চলছে বলে নিশ্চিত করেছেন মহানগরের একাধিক দায়িত্বশীল শীর্ষ নেতা। তারা জানান, সম্মেলনের দীর্ঘ সময় পার হলেও ধারবাহিকভাবে অনুষ্ঠিত হওয়া জাতীয় নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন, বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের আন্দোলন, সিটি করপোরেশন নির্বাচন, দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে জেলা, উপজেলা সম্মেলনসহ বিভিন্ন কারণে এতোদিন মহানগরের কমিটি গঠন প্রক্রিয়া ঝুলে ছিল। কিন্তু সিটি করপোরেশন নির্বাচন শেষ হবার পর দলের হাইকমান্ড এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছেন। মহানগরের রাজনীতিকে চাঙা করতে দ্রুতই কমিটি ঘোষণা হতে পারে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ মানবজমিনকে বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জন্য কমিটি গঠন প্রক্রিয়া পিছিয়ে ছিল। যতদূর জানি খুব দ্রুতই কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে। কমিটিতে কারা থাকবেন সে প্রক্রিয়াও প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। আমরাও দলের শীর্ষ নেতৃত্বের দিকে তাকিয়ে আছি। তিনি বলেন, অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মহানগরের নেতাদের ভূমিকার বিষয়টি কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় নিয়ামক হিসেবে কাজ করতে পারে। সেক্ষেত্রে কারা কমিটিতে থাকবেন আর কারা বাদ পড়বেন তা শীর্ষ নেতৃত্বই নিশ্চিত করবে।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের দপ্তর কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকা মহানগরের অন্তর্গত ৪৯টি থানা, ১০৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ড ও ১৭টি ইউনিয়নের সম্মেলন প্রায় শেষ হয়েছে। অল্প কয়েকটি থানার সম্মেলন বাকি থাকলেও তা দ্রুতই শেষ করা হবে। মহানগরের একজন শীর্ষ নেতা জানান, নগর কমিটি ঘোষিত না হওয়ায় সম্মেলন শেষ হওয়া থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়নগুলোর কমিটিও ঘোষণা করা যাচ্ছে না। মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটি ঘোষণা করা হলে থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটি ঘোষণার প্রক্রিয়াও শুরু হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবারের কমিটি গঠনে কিছুদিন আগে হয়ে যাওয়া সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মহানগরের নেতাদের ভূমিকার বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। নির্বাচনের আগে দলের সভাপতি থেকে শুরু করে সাধারণ সম্পাদক ও প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় নেতারা দল সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে একাট্টা হয়ে কাজ করার জন্য মহানগরের নেতাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তবে, অনেক শীর্ষ নেতাই এ নির্দেশ পালন করেননি। হয় তারা এ ব্যাপারে নীরব থেকেছেন, নয়তো তাদের পছন্দমতো প্রার্থীকে জয়ী করতে সচেষ্ট থেকেছেন। আর এ বিষয়টি সহজভাবে নেননি দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। যে কারণে নগরের কমিটি গঠনে এবার যথেষ্ট সতর্ক দলীয় হাইকমান্ড। দলীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, কদিন আগে অনুষ্ঠিত হওয়া সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নগর নেতাদের ভূমিকার মূল্যায়ন করা হয়েছে। নির্বাচনে যারা দলের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশনায় দল সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন কমিটিতে তারাই অগ্রাধিকার পাবেন। এমনকি মহানগরের বিভিন্ন থানার ত্যাগী ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতাদেরও কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার সম্ভাবনা রয়েছে। সূত্র আরও জানিয়েছেন, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আনিসুল হক ও সাঈদ খোকন এবং কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিজয়ী করতে মাঠ পর্যায়ে যারা কঠোর পরিশ্রম করে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন নগরের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে তাদের নাম দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আলোচনায় রয়েছে। নতুন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে তারা এবার শীর্ষ নেতৃত্বে আসবেন বলে শোনা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে নগরের বর্তমান কমিটির অনেক শীর্ষ নেতাই বাদ পড়তে পারেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুকুল চৌধুরী বলেন, শিগগির মহানগরের কমিটি ঘোষণার বিষয়টি আমরাও শুনেছি। তবে, কমিটি গঠন প্রক্রিয়া পুরোটাই দলীয় শীর্ষ নেতৃত্বের উপর নির্ভর করছে। তারা যখন ভাল মনে করবেন তখনই নগরের কমিটি ঘোষণা করা হবে। আর নতুন কমিটিতে কারা আসতে পারেন কারা বাদ পড়তে পারেন সে বিষয়ে আমাদের স্পষ্ট কোন ধারণা নেই। তবে, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দল সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে যারা ত্যাগ স্বীকার করেছেন, নিজেদের উজার করে দিয়েছেন তারাই কমিটিতে অগ্রাধিকার পাবেন বলে শুনেছি।
এদিকে বিভক্ত ঢাকার নতুন কমিটির শীর্ষ পদে কারা আসতে পারেন এনিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। উত্তরে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির সহসভাপতি কামাল আহমেদ মজুমদার, মুকুল চৌধুরী, ফয়েজউদ্দিন মিয়া, শেখ বজলুর রহমান, এ কে এম রহমতউল্লাহ, আসলামুল হক আসলাম, সাদেক খানের নাম রয়েছে আলোচনায়। তবে এ কে এম রহমতউল্লাহ ও সাদেক খানের বিষয়ে আপত্তি রয়েছে মহানগরের নেতাদের। তাদের মতে এ দুজন মহানগরের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত নন। নগরের রাজনীতিতে দীর্ঘ দিন সক্রিয় আছেন এমন ব্যক্তিকেই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে চান তারা। দক্ষিণে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ, যুগ্ম সধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন, হাজী মো. সেলিম, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহে আলম মুরাদের নাম রয়েছে আলোচনায়।