দেড় কোটি টাকার মালিক ভিক্ষুক
রাস্তার মোড়ের ভিক্ষুকের জন্য মায়া কমবেশি সবারই হয়। এমন অনেকেই আছেন যারা সচরাচর ভিক্ষুককে টাকা দেন না কিন্তু তাদের জন্য মমত্ব বোধ করেন। আবার অনেকে আছেন যারা ভিক্ষুককে টাকা দেয়ার বদলে একবেলা খাইয়ে দেন। এসবই আমরা মানবিকতার খাতিরে দেখি, কিন্তু আপনি যদি জানতে পারেন, যে ভিক্ষুককে আপনি প্রায়শই ভিক্ষা হিসেবে অর্থ দিচ্ছেন এবং তিনি এক টাকা, দুই টাকা নয়…দেড় কোটি টাকার মালিক! তাহলে আপনার কেমন লাগবে। হয়তো বা রাগের বশবর্তী হয়ে আপনি সেই ভিক্ষুকের কলার ঝাকিয়ে আপনার দেয়া অর্থের সূদআসল বুঝে নিতে চাইবেন।
সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের পাটনায় এক ভিক্ষুকের সন্ধান পাওয়া গেছে যিনি আদতে দেড় কোটি টাকার মালিক। পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ব মোট চারটি ব্যাংকে তার নামে ছয় লাখ টাকার বেশি জমা আছে। পাপ্পু কুমার নামের এই ভিক্ষুক যে এতো ধনী তা কিন্তু সহজে বোঝা যায়নি। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযানের অংশ হিসেবে পাটনা পুলিশ তাদের রেলস্টেশনকে ভিক্ষুক মুক্ত করার জন্য এক অভিযান চালায়। সেই অভিযানে পাপ্পু নামের ওই ভিক্ষুককে অন্যত্র চলে যেতে বলা হলেও তিনি যাননি। এরপর পাটনা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে গেলে একে একে তার অর্থ সম্পদের খবরা খবর বের হতে শুরু করে। পাপ্পু গত সাত বছর ধরে প্রতিদিন পাটনা রেলস্টেশনে ভিক্ষা করতেন বলে জানা যায়।
পুলিশ যখন পাপ্পুর শরীরে তল্লাসি শুরু করে তখন চারটি ব্যাংকের এটিএম কার্ড বের হয়ে আসে। এরমধ্যে ব্যাংক অব বারোদা, এলাহাবাদ ব্যাংক, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া এবং পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংকের কার্ড ছিল। এই কার্ডের জের ধরে তদন্ত শুরু হলে জানা যায় যে, তার ব্যাংকে ছয় লক্ষাধিক টাকা আছে। পুলিশের জেরায় জানা যায়, পাপ্পু ব্যক্তিজীবনে একজন প্রকৌশলী হতে চেয়েছিলেন কিন্তু তা হতে না পেরে তিনি স্বাধীন পেশা হিসেবে ভিক্ষাবৃত্তিকে বেছে নেন।
পাপ্পুর ভাষ্যে, ‘৫৭ শতাংশ নম্বর পেয়ে আমি এইচএসসি পরীক্ষায় পাশ করেছিলাম এবং গণিতে আমি ৭২ পেয়েছিলাম। আমার ইচ্ছে ছিল প্রকৌশলী হওয়ার এবং সেজন্য চেষ্টাও করেছিলাম। কিন্তু ঠিক ওই সময়েই আমি একটি দুর্ঘটনার শিকার হই এবং শরীরের একটি অংশ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যায়। এরপর আর আমার অন্য কোনো উপায় ছিল না ভিক্ষা ছাড়া। কারণ আমার দুর্ঘটনার পর আমার পরিবার আমার ব্যয়ভার বহন করতে পারছিল না।’
বাবার মৃত্যুর পর পাপ্পু উত্তরাধিকাসূত্রে ৩৬০ বর্গফুট ভূমি পায়, কিন্তু তিনি তা বিক্রি করে দিয়ে আবাসন ব্যবসায় অর্থ খাটান। বর্তমানে ৩২ বছর বয়সী পাপ্পু দেড় কোটি টাকার মালিক এবং তিনি অনেককেই অর্থ ধার হিসেবে দেন। অবশ্য পুলিশ কর্তৃপক্ষ তাকে এই ভিক্ষাবৃত্তি ত্যাগ করে স্বাভাবিক জীবন যাপনের পরামর্শ দেয়। কিন্তু সেই কথা এই ধনী ভিক্ষুকের কানে ঢোকেনি বলে মনে করেন পাটনা পুলিশ ইন্সপেক্টর রাজেশ লাল।