দেশের স্বার্থে যে কোন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত : শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তিনি দেশের স্বার্থে যে কোন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত রয়েছেন। বিএনপি নির্বাচন চাইলে তারা নির্বাচনকালীন সরকার সম্পর্কে পার্লামেন্টে প্রস্তাব উত্থাপন করতে পারে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে ২০০১ সাল ছাড়া বাংলাদেশে আর কখনোই শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়নি। কেবল আওয়ামী লীগের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে সকল নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টায় জাতিসংঘ বাংলাদেশ মিশনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
জাতিসংঘের ৬৮তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি পরবর্তী নির্বাচনের নিরপেক্ষতা যাচাই করতে পর্যবেক্ষক দল পাঠাতে বান কি-মুনকে অনুরোধ করেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, বান কি-মুন সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যের (এমডিজি) বাংলাদেশের অর্জিত সাফল্যের প্রশংসা করেছেন। জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘এমডিজি অর্জনে যে গুটিকয়েক দেশ দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছে বাংলাদেশ তার অন্যতম।’
দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সুসংহত করতে তার সরকারের নিরলস প্রয়াসের জাতিসংঘ মহাসচিবকে অবহিত করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এমন একটি ব্যবস্থা করতে চাই যেখানে অবাধ, মুক্ত ও নিরপেক্ষ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং ক্ষমতা হস্তান্তর হবে শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায়। আমাদের একটি নির্দিষ্ট অবস্থান থেকে গণতন্ত্র সমুন্নতের প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির সঙ্গে জোট পরিত্যাগ করে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে এলে পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে কোনো রাজনৈতিক সংকটের সৃষ্টি হবে না।
তিনি বলেন, বিগত ৩৮ বছরে অনুষ্ঠিত সব নির্বাচনে জনগণকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। ক্ষমতালিপ্সুরা ভোট কেন্দ্র দখল এবং টাকা ছড়িয়ে ও গুন্ডা লেলিয়ে দিয়ে জনগণের ভোটাধিকার ছিনিয়ে নিয়ে নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করে।
তারা সামরিক অভ্যুত্থান, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও বেসামরিক প্রশাসনে সেনাবাহিনী নিয়োগের মতো বিভিন্ন কায়দায় নির্বাচন প্রক্রিয়া লণ্ডভণ্ডের চেষ্টা করেছে।
তার নিউ ইয়র্ক সফরকে খুবই সফল হিসাবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত তিন বছরের মতো এবারও তিনি অনেক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে যোগ দিয়েছেন। মূল নিবন্ধ উপস্থাপন এবং কো-চেয়ার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশকে আইওএসএসসি পদক প্রদান বাংলাদেশের জনগণের সাফল্যের এক বিরাট স্বীকৃতি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবিধান অনুযায়ী মানুষ যেন তাদের মৌলিক অধিকার পূরণ করতে পারে, সে পরিবেশ সৃষ্টিতে তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে। দারিদ্র্য বিমোচনে বর্তমান সরকার শিক্ষার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দেশের ক্ষমতা হস্তান্তরে জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। এ প্রসঙ্গে তিনি জাতির ভবিষ্যতের কথা মনে রেখে ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, তার সরকার সামরিক শাসন, জরুরি অবস্থা ও সেনা সমর্থিত সরকারের নামে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের অবৈধ সংস্কৃতি বন্ধ করতে সংবিধান সংশোধন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬৮তম অধিবেশনে যোগদান এবং অধিবেশনের আলোচনার ফাঁকে বিভিন্ন বিষয়ে অনেক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অংশগ্রহণকে খুবই ফলপ্রসু বলে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ওইসব কর্মসূচিতে বাংলাদেশ খুবই সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে এবং জাতিসংঘ মহাসচিব বান-কি মুনসহ বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন ফোরামে বাংলাদেশের এই ভূমিকার ভুয়সী প্রশংসা করেছেন।
বাংলাকে বিশ্ব সংস্থার আনুষ্ঠানিক ভাষা হিসাবে ঘোষণা দিতে তার আহ্বানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন যে, পরবর্তী নির্বাচনে তার সরকার আবারও ক্ষমতায় এলে তার এই প্রয়াস নিশ্চিতভাবে সফল হবে।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সংলাপের জন্য তিনি বিরোধী দলের নেতার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনকালীন সরকার সম্পর্কে জাতীয় সংসদে উত্থাপিত বিএনপির মুলতবি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু পরে বিএনপি নেতা অশুভ উদ্দেশ্যে প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করে নেন। এ প্রসঙ্গে তিনি জাতীয় সংসদে প্রস্তাব পেশ করার জন্য বিরোধী দলের নেতার প্রতি তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, দেশের মানুষকে জানতে দিন তারা আসলে কি চান।
সুশীল সমাজের সদস্যদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা চাকরি জীবনে জনগণের সেবা ও নাগরিক সমস্যা সমাধানে তাদের অদক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন।
যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে রায়ের দ্রুত কার্যকারিতা সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার আদালতের কর্মকাণ্ডে হস্তক্ষেপ করে না। তবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে এটি জনগণের দাবি হওয়ায় এই রায় একদিন কার্যকর হবে।
অন্যান্যের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে আবদুল মোমেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
–