দুর্নীতির দুই মামলা: খালেদার আবেদনে বিভক্ত রায়
ঢাকা : জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার করা রিট আবেদনের বিষয়ে বিভক্ত রায় দিয়েছে হাইকোর্ট।
বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রোববার দুপুরে এ রায় দেন।
এর মধ্যে বেলা সোয়া ৩টার দিকে সিনিয়র বিচারপতি মামলার বিচারিক কার্যক্রমের উপর তিন মাসের স্থগিতাদেশ দেন। একইসঙ্গে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা দু’টির অভিযোগ গঠনকারী ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩-এর বিচারক বাসুদেব রায়ের নিয়োগ-প্রক্রিয়া কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে রুল জারি করেছেন।
তবে বেঞ্চের জুনিয়র বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দ এ রায়ের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে আবেদন খারিজের আদেশ দেন।
আইনজীবীরা জানান, নিয়ম অনুযায়ী মামলার নথি প্রধান বিচারপতির কাছে যাবে। পরবর্তীতে বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করে এর নিষ্পত্তি হতে পারে।
গত ২০ মে রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে আদালত আদেশ প্রদানের জন্য রোববার দিন ধার্য করেন।
এর আগে গত ১২ মে মামলা দু’টির অভিযোগ গঠনকারী ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩-এর বিচারক বাসুদেব রায়ের নিয়োগ-প্রক্রিয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন খালেদা জিয়া।
গেজেট না করে সাধারণ আদেশে দেওয়া ওই বিচারকের নিয়োগ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- রিট আবেদনে সেই আদেশ চাওয়া হয়।
পাশাপাশি বিচারিক আদালতে মামলা দু’টির কার্যক্রমে স্থগিতাদেশও চাওয়া হয়েছে।
যদিও মামলা দু’টির অভিযোগ গঠন বিধিসম্মতভাবে হয়নি দাবি করে এর আগেও হাইকোর্টে এসেছিলেন খালেদা জিয়া। তবে তার আবেদন খারিজ হয়ে যায়। অভিযোগ গঠনের আগে মামলা দু’টি বাতিল চেয়েও উচ্চ আদালতে এসেছিলেন তিনি, তাও নিষ্ফল হয়েছিল।
২০১১ সালের ৮ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় মামলা দায়ের করেন দুদকের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ।
২০০৮ সালের ৩ জুলাই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টে অনিয়মের অভিযোগ এনে রমনা থানায় দায়ের করা হয় অপর মামলাটি।
গত ১৯ মার্চ এই দুই মামলায় খালেদা জিয়া ও তার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক বাসুদেব রায় অভিযোগ গঠন করেন।
মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে খালেদা জিয়ার করা আবেদন গত ২৩ এপ্রিল খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।
এরপর ১২ মে মামলা দু’টির অভিযোগ গঠনকারী ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক বাসুদেব রায়ের নিয়োগ-প্রক্রিয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন খালেদা জিয়া।
রিটের শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী আদালতে দাবি করেন, বিশেষ জজ আদালতে বিচার করতে হলে গেজেটের মাধ্যমে বিচারক নিয়োগ দিতে হয়। গেজেটের মাধ্যমে অধিক্ষেত্রও নির্ধারণ করতে হয়। বাসুদেব রায়ের ক্ষেত্রে সেটার ব্যত্যয় ঘটেছে। “এ কারণে তার নিয়োগ অবৈধ। তার গৃহীত কার্যক্রমও বৈধ নয়।”
এ সময় আদালতের কাছে রুল প্রার্থনার পাশাপাশি খালেদা জিয়ার মামলার কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ চান তিনি।
অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, বাসুদেব রায়কে অফিসিয়াল গেজেটের মাধ্যমেই নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে বিজি প্রেসের বাংলাদেশ গেজেটে তা পরে প্রকাশিত হয়েছে।
“আইনের বাধ্যবাধকতা অফিসিয়াল গেজেটের বিষয়। গেজেট প্রকাশের বিষয়ে নয়।”
তিনি আরো বলেন, “ঢাকার বিশেষ জজ-৩ আদালত এবারই প্রথম গঠন করা হয়নি। আগে থেকেই এই আদালত ছিল। তাই নতুন করে এই আদালতে অধিক্ষেত্র নির্ধারণ করে গেজেট করার প্রয়োজন নেই।”
বিএনপি’র দাবি, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এই মামলা রাজনৈতিক ‘উদ্দেশ্য প্রণোদিত’।
মামলা দু’টির বিচার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে অস্থায়ী আদালতে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বিএনপি এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে আসছে।