দুর্নীতিরোধে ডালপালা না ছেঁটে শিকড়ে হাত দিন : সংসদে এমপি হারুন
বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হারুন উর রশিদ বলেছেন, দুর্নীতিরোধ করতে গেলে গাছের ডালপালা ছেঁটে লাভ নেই। শিকড়ে হাত দিন। বুধবার বিকেলে জাতীয় সংসদে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি একথা বলেন।
এমপি হারুন বলেন, স্বাস্থ্য সকল সুখের মূল। কিন্তু আমরা আজকে স্বাস্থ্য সঙ্কটে পড়ে গেছি। দুর্নীতি নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। দুর্নীতিরোধ করতে গেলে আপনার গাছের ডালপালা ছেঁটে লাভ নেই। গাছের শিকরে হাত দিতে হবে। তাহলে আপনি দুর্নীতিরোধ করতে পারবেন।
তিনি বলেন, আমার খুব ভালো মনে আছে ২০১৩ সালে মেডিক্যালে যখন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছিল যে ভর্তিতে প্রশ্নপত্র নকল হয়েছে। তখন সচিব ও মন্ত্রী প্রেস কনফারেন্স করে বলেছিলেন, এটা আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ। আমি সংসদে আবেদন জানাবো, ওই মন্ত্রী ও সচিবদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক।
বিএনপি দলীয় এই সংসদ সদস্য বলেন, আজকে স্বাস্থ্য খাতে কেনাকাটা, নিয়োগ, বদলি, পদন্নোতি, পদায়ন, চিকিৎসায় নিয়োজিত সেবা অবহেলার ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি আছে। আমি ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত সংসদ সদস্য ছিলাম। ওই সময় দু’টি জায়গায় সরকারি কাজের ক্ষেত্রে সংস্কার নিয়ে এসেছিলাম। তখন জেলার মন্ত্রীরা ছিলেন হাসপাতালের সভাপতি। আর বর্ডার এলাকায় আইনশৃঙ্খলা জেলা কমিটিতে বিডিআর সদস্য ছিল না। এই দু’টি সংসদ সদস্যদের প্রতিটা হাসপাতালে সভাপতি করা এবং ওই কমিটিকে আরো শক্তিশালী করার প্রস্তাব রেখেছিলাম। তা গৃহীত হয়েছিল।
সংসদে এমপি হারুন আরো বলেন, দুর্নীতির ব্যাপারে যেহেতু ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেক সংসদ সদস্য কথা বলেছেন। তাই এ বিষয়ে আমার নতুন করে কিছু বলার নেই। আমি একটি প্রস্তাব দিচ্ছি, তা হলো হাসপাতালগুলোকে আধা স্বায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করেন। সেখানে জনপ্রতিনিধিদেরকে দায়িত্ব দেন, কমিটি পরিচালনা করার। এটাকে আরো শক্তিশালী করুন।
তিনি বলেন, চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্রাক্টিস বন্ধ করা সম্ভব না নতুন যে ডাক্তাররা জয়েন করবেন তাদেরকে অন্তত ওই হাসপাতালেই প্রাক্টিস করার সুযোগ দিন। আয়ের একটা অংশ তাদের দেয়ার ব্যবস্থা করে দিন। আমি মনে করি, তাহলেই ডাক্তাররা বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ওই হাসপাতালে ডিউটি করবেন, রোগী দেখবেন। রোগীরা কম খরচে চিকিৎসা পাবেন। আস্তে আস্তে ডাক্তারদের সেই জায়গায় নিয়ে আসার চেষ্টা করেন।
এমপি হারুন বলেন, স্বাস্থ্য খাতে আজকে জনবলে যে ঘাটতি, এটার কারণে আমরা সবচাইতে বেশি সঙ্কটে পড়েছি। জনবলের ঘাটতির কারণে আজকে কোটি কোটি টাকার যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। ১৩ বছর এই সরকার… তৃতীয়বারে ক্ষমতায়, …আপনাকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রতিটি হাসপাতালে জনবল দিন, না হলে আপনি স্বায়ত্তশাসনে দিয়ে দিন। কমিটির ওপর দায়িত্ব দিন। আমরা সেখানে নিয়ম অনুযায়ী দক্ষ জনবল যেভাবে নিতে হয় সেই ব্যবস্থা করবো।
হাসপাতালগুলো এভাবে যুগের পর যুগ চলতে পারে না বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি দলীয় এই সংসদ সদস্য। তিনি বলেন, এভাবে যুগের পর যুগ আমরা শুধু পার্লামেন্টে (সংসদে) বলতেই থাকবো এটা হতে পারে না। আমি এর আগেও পার্লামেন্টে বলেছি যে এর জন্য একটি জাতীয় কমিটি গঠন করুন। এই অবস্থা থেকে আমরা স্বাস্থ্য খাতকে কিভাবে রক্ষা করবো তা নিয়ে ভাবুন। বাংলাদেশের এই সঙ্কটময় মুহূর্তে যেহেতু সময় কম, ভ্যাকসিনের সম্পর্কে জনগণকে আশ্বস্ত করুন। আমরা কবে নাগাদ ভ্যাকসিন পাবো এ সম্পর্কে অবহিত করুন।