দুই শতাধিক ব্রিটিশ নারী সেনা রণক্ষেত্রে গর্ভবতী
গর্ভবতী হয়ে পড়ায় আফগানিস্তান এবং ইরাকে যুদ্ধক্ষেত্রে নিযুক্ত ২০১ জন নারী ব্রিটিশ সেনাকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। কারণ, যুদ্ধক্ষেত্রে প্রথম সারিতে অবস্থান গর্ভবতী নারীদের জন্য নিষিদ্ধ এবং ঝুঁকিপূর্ণ। যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তার দেয়া হিসাব মতে, ২০০৬ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত আফগানিস্তান হতে মোট ৯৯ জন এবং ২০০৩-০৯ পর্যন্ত ইরাক থেকে ১০২ জন নারী সেনা সদস্যকে ব্রিটেনে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এটি দেশ দুটিতে মোট নিযুক্ত নারী সেনা সদস্যদের এক শতাংশেরও কম।
নারীদের গর্ভবতী হয়ে পড়ার খবর জানা মাত্রই কমান্ডাররা তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ রয়েছে। অনেকক্ষেত্রে কমান্ডাররা ফ্লাইট রিভার্জ করেও এসব নারীদের ব্রিটেনে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। বেশিরভাগ নারী সেনাই ব্রিটেন ছাড়ার আগেই গর্ভধারণ করেছেন। খুব কম ক্ষেত্রেই নারীরা যুদ্ধক্ষেত্রে এসে গর্ভবতী হয়েছেন বলে জানা যায়। ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়োজিত সেনা সদস্যদের যেকোনো প্রকারের শারীরিক সম্পর্কের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যেসব সেনা সদস্যরা যুদ্ধক্ষেত্রে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার বিধান রয়েছে দেশটির সেনা আইনে। পদমর্যাদা অনুযায়ী ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা তাদের শাস্তি নির্ধারণ করেন।
এ প্রসঙ্গে ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘একসঙ্গে অনেকদিন থাকলে এই বিধ্বংসী এবং ভীতিকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে কেউ শারীরিক সম্পর্কে জড়াতেই পারে। এটি বিস্ময়কর নয়। তবে এর পরিণাম এবং ভয়াবহতা সম্পর্কে বেশিরভাগ সদস্যই জ্ঞাত রয়েছে। বেশিরভাগ সদস্যই এই ভয়াবহ পরিণামের কথা চিন্তা করে দেশ ছাড়ার আগেই সঙ্গী বা সঙ্গীনির সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জাড়ান। এর থেকেই নারী সদস্যরা গর্ভধারণ করেন এবং পরে যুদ্ধক্ষেত্রে এসে এটি জানা যায়। এদিকে যুদ্ধক্ষেত্রে মোতায়েনের আগে নারীদের প্রেগনেন্সি টেস্টের (গর্ভধারন সংক্রান্ত পরীক্ষা) কোনো নিয়ম নেই ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা বিভাগে। তাদের মতে, এটি ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন।
কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা অধিদফতর মনে করছে এই পরীক্ষা প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। কারণ না জেনে কোনো গর্ভবতী নারীকে যুদ্ধক্ষেত্রে মোতায়েন করলে তার এবং অনাগত সন্তানের ভবিষ্যত হুমকির সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। প্রেগনেন্সি টেস্টে ব্যয় ১০ পাউন্ডেরও কম এবং গর্ভধারণের মাত্র সাত দিনের মধ্যেই এটি ফলাফল দিতে সক্ষম। যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিধান অনুযায়ী এটি স্পষ্ট যে কোনো গর্ভবতী নারী সেনা সদস্যকে কোনো অবস্থাতেই যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো যাবে না। কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে মোতায়েনের আগে কোনো প্রেগনেন্সি টেস্টের বিধান নেই। শুধুমাত্র মেডিকেল কর্মকর্তারা নারীদের মৌখিকভাবে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করবেন। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সাবেক এক কমান্ডার বব স্টুয়ার্ড বার্তাবাংলা কে বলেন, ‘হঠাৎ করে এই ধরনের পরীক্ষার নির্দেশ সেনা সদস্যদের দেয়ার আগে চিন্তার বিষয় আছে। এছাড়া কোনো নারী সেনা সদস্যের গর্ভধারণ নিশ্চিত হলে তাকে পুরো কার্যক্রম থেকে নিস্কৃতি দেয়া হয়। সুতরাং এটি উচিত নয়।
অপর এক মেজর জেনারেল জুলিয়ান থমাস বলেন, বিষয়টি অবশ্যই সংবেদনশীল। তবে যুদ্ধক্ষেত্রে আসার আগে সেনা সদস্যদের শতভাগ শারীরিক সুস্থতা প্রয়োজন। ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, গর্ভবতী নারী সেনা সদস্যদের তাদের শারীরিক নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। এটি কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নয়।