দুই বিচারপতির বিরুদ্ধে সাঈদীর আবেদন ॥ অনাস্থা খারিজ আপীল আবেদনের শুনানি রবিবার পর্যন্ত মুলতবি
স্টাফ রিপোর্টার ॥ সুপ্রীমকোর্টের দুই বিচারপতির প্রতি অনাস্থা জানিয়ে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রীমকোর্ট। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। পরে সাঈদীর আপীল আবেদনের শুনানি রবিবার পর্যন্ত মুলতবি করেছে আদালত।
মঙ্গলবার বিকেলে বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এস কে সিনহা) ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে শুনানি থেকে বিরত রাখার আবেদন করেন সাঈদীর আইনজীবী। এর আগে কাদের মোল্লার মামলাতেও একই ধরনের আবেদন খারিজ করে আদালত। সাঈদীর আবেদনের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতাদের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনপক্ষের সমন্বয়ক ও অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান।
এর আগে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণের মতো আটটি অভিযোগ
সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় গত ২৮ ফেব্রুয়ারি দুটি অপরাধে সাঈদীর বিরুদ্ধে মৃত্যুদ-াদেশ দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এ রায়ের বিরুদ্ধে ২৮ মার্চ সাঈদী ও সরকারপক্ষ পৃথক দুটি আপীল (আপীল নম্বর- ৩৯ ও ৪০) দাখিল করেন। প্রমাণিত হলেও বাকি ছয় অভিযোগে কোন সাজা দেয়নি ট্রাইব্যুনাল। সাজা না হওয়া প্রমাণিত অভিযোগগুলোতে সাজা নির্ধারণের আর্জি জানিয়ে আপীল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।
অপরদিকে ফাঁসির দ- বাতিল করে সাঈদীকে খালাস দেয়ার আবেদন জানানো হয়েছে আসামিপক্ষের আপীলে। পরে গত ৩ এপ্রিল আপীল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপীল আবেদনের সারসংক্ষেপ জমা দেয় রাষ্ট্রপক্ষ। ১৬ এপ্রিল সারসংক্ষেপ জমা দেয় আসামিপক্ষ।
পরে ১৭ এপ্রিল ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনপক্ষের সমন্বয়ক ও অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান আপীলটির ওপর শুনানির জন্য দিন ধার্য করতে আপীল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালতে আবেদন করেন। চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বিষয়টি ১৮ এপ্রিল শুনানির জন্য নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। এর পর প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজ্জাম্মেল হোসেন ১৮ এপ্রিল ৬ সদস্যের বেঞ্চ গঠন করে ২ মে শুনানি শুরুর দিন নির্ধারণ করেন। ২ মে আপীল দুটি কার্যতালিকায় থাকলেও আসামিপক্ষের সময় আবেদনের শুনানি শুরু হতে পারেনি। এর পর বিষয়টি ৭ মে মঙ্গলবারও কার্যতালিকায় রাখা হলে সময়ের আবেদন জানায় আসামিপক্ষ।
পরে ওইদিন ১৬ মের মধ্যে আসামিপক্ষের দায়ের করা আপীলের সারসংক্ষেপ আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেয় আদালত এবং ওই দিনই শুনানির জন্য দিন ধার্য করে। একই সঙ্গে আসামি সাঈদীকেও শুনানি শুরুর বিষয়টি নোটিস দিয়ে জানিয়ে দিতে রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দেয় আপীল বিভাগ। পরে ১৩ মে সারসংক্ষেপ দাখিল করতে আরও দুই সপ্তাহ সময় চেয়ে আবেদন করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে আপীল বিভাগ ২২ মে শুনানির জন্য দিন ধার্য করে এবং এ সময়ের মধ্যে আসামিপক্ষের আপীলের সারসংক্ষের দাখিলের জন্য নির্দেশ দেয়। পরে ২২ মে আসামিপক্ষ তাঁদের আবেদনের সারসংক্ষেপ দাখিল করেন।
এর পর ওইদিনও শুনানি হয়নি। সর্বশেষ ১৭ সেপ্টেম্বর শুনানির জন্য আপীল বিভাগের কার্যতালিকায় ছিল সাঈদীর পক্ষে-বিপক্ষে দায়ের করা আপীল আবেদন দুটি। ওইদিন কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদ- দেয় সুপ্রীমকোর্ট। পরে আসামিপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে শুনানির জন্য ২৪ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছিল আদালত। বর্তমানে দ- বাতিলে সাঈদীর দায়ের করা আপীল আবেদনের ওপর শুনানি চলছে। সাঈদীর আবেদনের বক্তব্য উপস্থাপন শেষ হলে রাষ্ট্রপক্ষ এ বক্তব্যের জবাব দেবে। পরে তাঁদের আবেদনের বক্তব্য উপস্থাপন শুরু করবে রাষ্ট্রপক্ষ।