দুই এমপি নেই গেজেটে
যশোর: নির্বাচন কমিশন থেকে প্রকাশিত গেজেটে যশোরের দুই সংসদ সদস্যের নাম থাকছে না। এরা হলেনÑ যশোর-১ (শার্শা) আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত আওয়ামী লীগের শেখ আফিলউদ্দিন ও যশোর-২ (চৌগাছা-ঝিকরগাছা) আসনের আওয়ামী লীগের মনোনীত ও বিজয়ী প্রার্থী অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম। তাদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগের ব্যাখ্যা চেয়ে আগামী দশ দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলেছে নির্বাচন কমিশন।
এদিকে, যশোর-২ আসনে ভোটকেন্দ্র দখল, কারচুপির অভিযোগ তুলে অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ নেতা এবং সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম নির্বাচন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। তার মতে, মাত্র ১০-১২ শতাংশ ভোটার কেন্দ্রে উপস্থিত হলেও নৌকার প্রার্থীকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত দেখানো হয়েছে।
গত ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশিত হচ্ছে বুধবার। নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, মোট ২৯০টি আসনের ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশ হবে। আটটি আসনের স্থগিত কেন্দ্রগুলোতে আগামী ১৬ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ করা হবে। পরে এগুলোর ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।বাকি দুটি আসন যশোর-১ ও যশোর-২ এর ফলাফল এখনই প্রকাশ করা হচ্ছে না।
যশোর-২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম গত ১ জানুয়ারি রিটার্নিং অফিসারের কাছে অভিযোগ করেন, পার্শ্ববর্তী আসন যশোর-১ থেকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সংসদ সদস্য শেখ আফিলউদ্দিন নিজস্ব লোকজনকে দিয়ে শার্শা সংলগ্ন কেন্দ্রগুলোতে জাল ভোট দেয়ার ব্যবস্থা করবেন বলে ৩০ ডিসেম্বর অ্যাডভোকেট মনিরুলের এজেন্ট সম্মেলনে শেখ আফিলউদ্দিন প্রকাশ্যে এ ঘোষণা দিয়েছেন। প্রমাণ হিসেবে তিনি শেখ আফিলউদ্দিনের বক্তব্যের অডিও রেকর্ডও দাখিল করেন।
যশোরের রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাফিজুর রহমান এ অভিযোগ পাওয়ার পর ইলেক্টরাল ইনকোয়ারি কমিটির কাছে পাঠিয়ে দেন। ইনকোয়ারি কমিটি তদন্ত শেষে প্রতিবেদন প্রস্তুত করে নির্বাচন কমিশনে পাঠায়।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশন অভিযোগটি পর্যালোচনা শেষে যশোর-১ আসনের শেখ আফিলউদ্দিন ও যশোর-২ আসনের অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলামকে শোকজ করে। দুইজনকে দেয়া পৃথক নোটিসে বলা হয়, উল্লিখিত কর্ম গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)-এর অনুচ্ছেদ ৮১(১)(এফ) অনুসারে দণ্ডনীয় অপরাধ। সে কারণে কেন তাদের প্রার্থিতা বাতিল করা হবে না তা আগামী দশ দিনের মধ্যে জানাতে হবে।
বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত যশোরের এই দুটি আসনের ফলাফল সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশিত হচ্ছে না বলে নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে, যশোর-২ আসনের নির্বাচন বাতিল অথবা তাকে নির্বাচিত ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। বুধবার দুপুরে যশোর প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, ১৭৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ৭০টিই দখল করে জাল ভোট দেয়া হয়েছে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে। দলীয় নেতা ও সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে জাল ভোটের উৎসব করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
অধ্যাপক রফিকুল গত ৩ থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত শেখ আফিলউদ্দিন এমপি ও অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলামের মোবাইল ফোন ট্রাকিংয়ের দাবি জানান। তিনি বলেন, এই দুই ব্যক্তির কথোপকথন পর্যালোচনা করলে বেরিয়ে আসবে কীভাবে জনমত উল্টে দেয়ার প্রক্রিয়া চালানো হয়। একইসঙ্গে তিনি ভোটদানকারীদের ফিঙ্গার প্রিন্ট পরীক্ষারও দাবি জানান। এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক রফিকুল বলেন, জালিয়াতির ভোটের ফলাফল বাতিলের জন্য তিনি সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত যাবেন।
সংবাদ সম্মেলনে ঝিকরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. মোস্তাফিজুর রহমান, দফতর সম্পাদক অধ্যাপক শাহিনুল কবির, পৌরসভার পাঁচজন কাউন্সিলরসহ তার অনুসারীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, গত ৩০ ডিসেম্বর যশোর-২ আসনের নৌকা প্রতীকের পোলিং এজেন্ট সম্মেলনে পার্শ্ববর্তী আসনের এমপি আফিলউদ্দিন বলেন, মাঠ যেন ফাঁকা না হয়ে যায়। ১০০ ছেলে থাকবে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে লাইনে। ওরা বুথে যাবে, আবার এসে পেছনে দাঁড়াবে। ওরা বাড়ি যাবে না। ১০০ ছেলে সবসময় লাইনে থাকবে। এইভাবে বুথে যাবে, আবার আসবে। লোক ও সাংবাদিকরা আসবে, দেখবে যে মাঠ ভরা। প্রশাসনিক কোনো ভয় নেই; সেটা আমি দেখব।
সংসদ সদস্যের এই বক্তব্য গোপনে রেকর্ড করেন অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের অনুসারীরা। বিষয়টি দৈনিক সংবাদপত্র ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত হওয়ায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়।