দু’আ কুনূতের শিক্ষা, আ.ন.ম রশিদ আহমেদ অধ্যাপক বাংলাদেশ ইসলামী ইউনিভারসিটি
দু’আ কুনূতের শিক্ষা
চব্বিশ ঘন্টার দিন ও রাতে একজন মুমিনকে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করতে হয়। শুরু হয় ফজর দিয়ে, আর শেষ হয় এশা দিয়ে। পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাতের বাইরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সালাত হলো বিতরের সালাত। বিতরের সালাত পড়তে হয় এশার সালাতের পর। এর উত্তম সময় হলো রাতের শেষ তৃতীয় প্রহরে তাহাজ্জুদ সালতের পর। তবে যাদের তাহাজ্জুদ পড়ার অভ্যাস নেই তারা এশার সালতের পর অথবা গুমানোর আগে বিতরের সালাত আদায় করবে।
মূল কথা হলো, এ সালাতটি হবে একজন মুমিনের দিনের সর্বশেষ সালাত। এ সালতের শেষ রাকআতে একটি দু’আ পড়তে হয়। দু’আটিকে বলা হয় দুয়া’ কুনুত।
কুনুত শব্দের অর্থ হলো- বিনয় ও আনুগত্য। আমাদের দেশে অধিকাংশ মুসল্লী যে দু’আ কুনূতটি পড়ে তা হলো।
‘হে আল্লাহ, আমরা তোমার কাছে সাহায্য চাই, তোমার কাছে ক্ষমা চাই। আমরা তোমার উপর ঈমান রাখি এবং তোমার উপরই নির্ভর। আমরা তোমার কল্যাণের প্রশংসা করি, আমরা তোমার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি, আমরা তোমার অকৃতজ্ঞ হই না। যে তোমার অবাধ্যতা করে আমরা তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলাম এবং তাকে পরিত্যাগ করলাম। হে আল্লাহ! আমরা শুধু তোমারই ইবাদক করি, শুধু তোমার জন্যই সালাত আদায় করি। তোমাকেই সিজদা করি, তোমার আনুগত্য ও সেবার দিকেই অগ্রসর হই। আমরা রহমত ও করুণা প্রাপ্তির আকাঙ্খা করি। তোমার শাস্তিকে ভয় করি। তোমার শাস্তি তো কাফিরদেরক আচ্ছন্ন করবে।
এখানে লক্ষনীয় যে, এ দু’আটিতে বান্দা আল্লাহর কাছে কোন বিষয়ে প্রার্থনা করে না। তার কাছে থেকে কোনা কিচু চায় না। বরং পুরো দু’আতেই শুধু স্বীকৃতি, ঘোষণা ও অঙ্গীকার। বিতরের সালাতের শেষ রাক’আতে দু’আকুনূত পড়া তাৎপর্যপূর্ণ। আর তা হলো- বান্দা তার জীবনের একটি দিনকে বিদায় দিচ্ছে, এ দিনটি তার জীবনে আর কখনো আসবে না। এ মুহূর্তে সে তার রবের সামনে বিনীত ভাবে ঘোষনা ও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে যে, সে শুধু তাঁর কাছেই সাহায্য চায়, তাঁর কাছেই ক্ষমা চায়, তাঁর উপরেই ঈমান রাখে, তাঁর উপরেই সে নির্ভর করে। এগুলো সুষ্পষ্ট তাওহীদের অঙ্গীকার। তাওহীদের অঙ্গীকার করেই সে একটি গুরুত্বপূর্ন ঘোষনা দিচ্ছে, আর তা হলো- যে আল্লাহর অবাদ্যতা করে তাকে সে পরিত্যাগ করে, তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে। আল্লাহর অবাদ্যতা দু’ধরনের। একটি হলো তার ফরয লঙ্গন, আরেকটি হলো- তিনি যা নিষেধ করেছেন তা করা।
আমরা যারা বিতরের সালাতের শেস রাক’আতে দু’আ কুনুত পড়ি, আমাদের গভীরভাবে ভাবতে হবে- আমরা আল্লাহর দরবারে দাঁড়িয়ে কি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি-যে বা যারা আল্লাহর নাফরমানী ও অবাধ্যতা করে তাদেরকে পরিত্যাগ করলাম এবং তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলাম।
আসলে কি আমরা তাদেরকে পরিত্যাগ করছি? আমরা কি তাদের সাথে সম্পর্কে ছিন্ন করছি? যদি উত্তর হ্যাঁ হয়, তাহলে আলহামদুলিল্লাহ।
আর যদি উত্তর ‘না’ হয়, তাহলে আমরা প্রতি রাতে আল্লাহর সামনে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। এটি কত ভয়াবহ অপরাধ। একজন মানুষ একজন মানুষকে মিথ্যা প্রতিাশ্রুতি দেয়া যদি অন্যায় হয়, তাহলে আল্লাহর সাথে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি কত বড়ো অন্যায়।
এ বিষয়টি আমাদেরকে গভীরভাবে ভাবতে হবে। দু’আ কুনুতের শেষ দিকে আমরা বলছি, আমরা তোমার আযাবের ভয় করি। আল্লাহর সাথে করা প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন কি আল্লাহর আযাবের কারণ হবে না?
একদিকে যারা আল্লাহর অবাধ্যতা করে আমরা তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েও সম্পর্ক রেখে চলছি আর অন্যদিকে বলছি আমরা আল্লাহর আযাবকে ভয় করি। এটিও তো মারাত্মক অপরাধ।
আল্লাহ আমাদেরকে এ বিষয়টির ভয়াবহতা বুঝার তাওফীক দিন এবং আল্লাহর অবাধ্যতাকারীদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে তাদেরকে পরিত্যাগ করার সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করুন।
আমিন
আ.ন.ম রশিদ আহমেদ
অধ্যাপক বাংলাদেশ ইসলামী ইউনিভারসিটি