দাবি আদায় হওয়ার আগ পর্যন্ত রাজপথে থাকার অঙ্গীকার
চতুর্থদিনের মতো শাহবাগ অবরোধ কর্মসূচি শেষ করেছেন কোটা পুনর্বহাল বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারীরা। শনিবার বিকালে ঘণ্টাখানেক শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখার পর পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করে রাজপথ ছাড়েন আন্দোলনকারীরা। তবে দাবি আদায় হওয়ার আগ পর্যন্ত রাজপথে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সমাজের’ ব্যানারে ঐক্যবদ্ধ সাধারণ শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীরা।
সাড়ে পাঁচটায় অবরোধ কর্মসূচি শেষ করার আগে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদুল ইসলাম। উপস্থিত হাজারো শিক্ষার্থীকে আন্দোলনে উপস্থিত হওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা শুনেছি হলে হলে ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশীরা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অংশ নিতে বাধা দিচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আমরা হলের তালা ভাঙতে জানি। ২০১৮ সালে আমরা তা দেখিয়েছি।
তিনি বলেন, এই আন্দোলন সারাবাংলার শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ইতোমধ্যে তা প্রমাণ করেছে। আমরা সুযোগের সমতা চাই। আমরা চাকরিতে সমতা চাই। এটা কী আমাদের অপরাধ? দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের মাঠে থাকতে হবে। অনলাইনে অফলাইনে শিক্ষার্থীরা জনসংযোগ করেছে সফলভাবে।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষকদের আন্দোলন বন্ধ হয়ে যাবে কিন্তু শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বন্ধ হবে না। অভিভাবকদের প্রতি, শিক্ষকদের প্রতি অনুরোধ জানাবো, আপনারা শাহবাগ মোড়ে শিক্ষার্থীদের সাথে সংহতি জানিয়ে আমাদের পাশে এসে দাঁড়ান। আপনার সন্তানদের কথা চিন্তা করে এই আন্দোলনে আসুন। নইলে কিছুদিন পর আপনার সন্তানও চাকরি পাবে না।
কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, আগামীকাল ‘বাংলা ব্লকেড’ শুধু শাহবাগ নয়। রাজধানীর সায়েন্সল্যাব, মতিঝিল, নীলক্ষেত, চানখারপোল, কাটাবন সহ প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে আমরা অবস্থান করবো। আন্দোলন সফল করতে আপনারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নেমে আসুন। যারা ঢাকার বাহিরে বিভিন্ন জেলায় আছেন তারা মহাসড়ক অবরোধ করবেন। দাবি বাস্তবায়ন না হলে আগামীতে সারাদেশে সর্বাত্মক হরতাল পালনের ঘোষণাও দেন তিনি।
এর আগে শনিবার বিকাল তিনটার আগ থেকে পূর্বনির্ধারিত বিক্ষোভ মিছিল পালন করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে নিজস্ব ব্যানার পোস্টারসহ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে জড়ো হন কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে টিএসসি হয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাসের সামনে দিয়ে আজিমপুর, নীলক্ষেত হয়ে শাহবাগ মোড়ের দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে এগোতে থাকেন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘সংবিধানের/মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, “কোটা প্রথা, বাতিল চাই বাতিল চাই’, ‘কোটা প্রথার বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট একশন’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাই নাই’’- ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। আন্দোলনের সামনের সারিতে কাফনের কাপড় পরে স্লোগান দিতে দেখা যায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে। হাতে জাতীয় পতাকা ও কোটাবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত ফেস্টুনেও নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছিলেন আন্দোলনকারীরা। পরে বিকাল চারটায় বিক্ষোভ মিছিল শেষে আন্দোলনকারীরা শাহবাগ মোড়ে এসে অবস্থান নিলে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল।