দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভোলা-৪ : আওয়ামী লীগ চায় আসন ধরে রাখতে বিএনপি চায় পুনরুদ্ধার
ব্যাপক উন্নয়ন হলেও আওয়ামী লীগ’র কর্মীদের অবমূল্যায়ন নির্বাচনী মাঠে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে
এ আর এম মামুন : দ্বীপ জেলা ভোলার সর্ব দক্ষিণে সাগর উপকূলীয় চরফ্যাশন উপজেলার ৩ টি থানা, ১ টি পৌরসভা, ২২ টি ইউনিয়ন এবং বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মনপুরা
আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, নাজিম উদ্দিন আলম, মাকসুদুর রহমান, লায়ন নজরুল ইসলাম, আবদুস সালাম
উপজেলার ১ টি থানা, ৫ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের- ১১৮ ভোলা- ৪ আসন।
ভোলা জেলার এ আসনটি আয়তনের দিক থেকে জেলার প্রায় অর্ধেক। লোক সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ। চরফ্যাশন উপজেলার লোক সংখ্যা ৫ লাখ আর মনপুরা উপজেলার লোক সংখ্যা প্রায় ১ লাখ। এ আসনে ১১৬ টি কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ১৯ হাজার ২৬৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৬০ হাজার ৮৮০ জন ও মহিলা ভোটার ১ লাখ ৫৮ হাজার ৩৮৮ জন।
এ আসনটি নিয়ে রাজনৈতিক আলোচনার কমতি নেই। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্ধারিত সময়ে হবে কি হবে না তা নিয়ে নানা বির্তক থাকলেও নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন নতুন তথ্যে রাজনৈতিক নির্বাচনী আলোচনা চায়ের কাপে ঝড় তুলেছে। দলীয় নেতা কর্মীসহ সাধারণ মানুষ রাজনৈতিক হিসেব নিকেশ শুরু করে দিয়েছেন। সরকারী ও বিরোধী দল এ আসন থেকে নির্বাচিত হতে ইতোমধ্যে নানা কৌশল অবলম্বন করে কাজ শুরু করে গণ সংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। জন বহুল এ আসনটি আওয়ামী লীগ চায় ধরে রাখতে আর বিএনপি চায় পুনরুদ্ধার করতে।
এদিকে ক্ষমতায় থেকে ব্যাপক উন্নয়ন করলেও মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করায় নির্বাচনী মাঠে চরম খেসারত দিতে হতে পারে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ’র প্রার্থীকে।
আওয়ামী লীগের ক্ষমতার পৌনে ৫ বছরে কতিপয় সুযোগসন্ধানী চাটুকারা সরকারী সুযোগ- সুবিধা নিয়ে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। আর দলের জন্য ত্যাগ শিকার করেও অনেকে হয়েছেন বঞ্চিত। বিগত সরকারের আমলে দলের জন্য যারা ত্যাগ শিকার করেছেন। তাদের অনেকই রয়েছেন অবমূল্যায়নের তালিকা। এ নিয়ে এক দিকে চলছে পাওয়া না পাওয়ার হিসেব। অন্যদিকে বঞ্চিতদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ। এ ক্ষোভের বিরূপ প্রভাব নির্বাচনে পড়তে পারে। এ ছাড়া বিএনপির নেতাকর্মীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে তাঁদের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে দলীয় কর্মীদের বঞ্চিত করায় এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। শেষ সময় সুযোগসন্ধানী বিএনপি নেতাদের আসল রূপ বেরিয়ে পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। এ সরকারের অনেক সফলতা থাকলেও তা সাধারণ জনগণের কাছে অজানা। স্থানীয় নেতারা সরকারের উন্নয়নমূলক দিকগুলো জনগণের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করেননি, এমনকি বিরোধী দলের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে প্রকৃত সত্যকে তুলে ধরতে নেতাকর্মীদের মাঠ পর্যায়ে আদৌ দেখা যায়নি।
এ আসন থেকে গত সংসদ নির্বাচনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক টানা তিনবারের এমপি নাজিম উদ্দিন আলমকে আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাংসদ অধ্যক্ষ নজরুল ইসলামের জ্যেষ্ঠপুত্র আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব ৩৯ হাজার ৯৯ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। নির্বাচিত হওয়ার পর এমপি জ্যাকবের যেমন ভাগ্যের উন্নতি হয়, দ্রুত অনেক কিছুর পরিবর্তন ঘটে, ঠিক তেমনি আলাদিনের চেরাগের মতো চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলার উন্নয়নে আমূল পরিবর্তন করে দেয়। স্বাধীনতার পর এত উন্নয়ন চরফ্যাশন ও মনপুরাবাসী ইতোপূর্বে আর দেখেনি। চরফ্যাশন উপজেলায় নতুন ২টি থানা, ৮টি ইউনিয়ন পরিষদ, ৩টি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র, জেলা সদর থেকে চরফ্যাশনে দেওয়ানি, ফৌজদারি, যুগ্ম জেলা জজ আদালত স্থানান্তর, ভোলা সদর থেকে চরফ্যাশনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিভিশন-২-এর অফিস স্থানান্তরসহ ভোলা-৪ আসনে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার রাস্তাঘাট, পুল-কালভার্ট, স্কুল-কলেজ নির্মাণ করে চরফ্যাশনের চেহারা পাল্টে দিয়েছেন। জ্যাকবের স্বপ্ন আগামীতে দল ক্ষমতায় এলে এমপি হতে পারলে চরফ্যাশনকে জেলা করার চেষ্টা করবেন। এখানে নেতৃত্ব নিয়ে কোন্দল না থাকলেও দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে অসন্তোষ আর চাপা ক্ষোভ। জিরো থেকে হিরো বনে যাওয়া শীর্ষ নেতার ভাগ্য পাল্টালেও নেতাকর্মীদের তেমন কোন উন্নতি হয়নি। যাঁদের টাকা ছিল তাঁদের কাছ থেকে কমিশন বা পার্সেন্টেজ নিয়ে কাজ দেয়া হতো। দলের ত্যাগী নেতারা যথাযথভাবে মূল্যায়িত হয়নি। মোটা অঙ্কের কমিশন পাওয়ার জন্য বিএনপির ঠিকাদারদের কাজ দেয়া হতো। একসময় যাঁর তেমন কিছু ছিল না সে আজ আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে গেছেন! যা এলাকায় সবার মুখে মুখে ওপেনসিক্রেট।
এদিকে ম্যাজিকের মতো এলাকায় উন্নয়ন করায় ম্যাজিক নেতা জ্যাকবের বিরোধী শিবিরেও আলোচিত হচ্ছে। তাঁর উন্নয়ন দলমত সবার কাছে প্রসংশিত। তবে তৃণমূলের আওয়ামী লীগের কর্মীদের রয়েছে চাপা ক্ষোভ। নির্বাচনে এক্ষোভের বর্হি:প্রকাশ ঘটতে পারে। ফলে নির্বাচনে কর্মী সংকটে পড়তে পাড়ে আওয়ামী লীগ। তৃণমূলের আওয়ামী লীগের এইক্ষোভের বরফ না গললে শেষ সময়ে টাকা খরচ করেও নির্বাচনী ফল ঘরে তোলা যাবেনা বলে মনে করছে স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এখানে আগামী নির্বাচনে জ্যাকবই সম্ভাব্য প্রার্থী। সাবেক যুগ্ম সচিব স্থানীয় আরব আলী মাস্টারের ছেলে আবদুস সালাম মনোনয়ন-প্রত্যাশী হিসেবে লবিং করছেন বলে প্রচার রয়েছে। তিনি ইতোমধ্যে পোষ্টার ও পত্রিকার মাধ্যমে এলাকা বাসীকে ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। যদিও তিনি কোন দলে যোগ দিবেন এবং মনোনয়োন ছাইবেন তা এখনো স্পষ্ট না। এদিকে ঢাকা মহানগর যুবলীগের দক্ষিণ শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মাকসুদুর রহমান ইতিমধ্যে এলাকায় পোস্টার লাগিয়ে এলাকাবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি এ আসনে আ’লীগের মনোনয়নের লবিং করছেন বলে এলাকায় প্রচার রয়েছে।
নাজিম উদ্দিন আলম ওয়ান ইলেভেনের পর দলের ভেতর দুঃসময় পার করলেও তাঁর চরফ্যাশনে কর্মীবাহিনী আগের চেয়ে অনেক সংগঠিত হয়েছে। তিনি এ আসনে মনোনয়ন পেলে জাতীয় ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে ভোটযুদ্ধে নামলে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে বলে অনেকেই ধারণা করছেন। তবে চরফ্যাশনে বিএনপির মধ্যে নাজিম উদ্দিন আলমকে সংস্কারপন্থী নেতা বলে স্থানীয় বিএনপির মধ্যে কোন্দল রয়েছে। সেখানে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী লায়ন নজরুল ইসলাম চৌধুরী বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রে লবিং করছেন। এ ছাড়া সাবেক ছাত্র দলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম নয়ন মনোয়নের জন্য লবিং করছেন। এ ছাড়া বিএনপি জোট থেকে বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থের ছোট ভাই আশিকুর রহমান শান্ত ও মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।
অন্যদিকে এখানে ১৪ দলের শরিক জাতীয় পার্টির এরশাদের তেমন কোন কর্মী-সমর্থক না থাকলে এ দলটি দু’ভাগে বিভক্ত। এ দল থেকে মিজানুর রহমান এবং এম এ মন্নান মনোনয়ন চাইবেন। জামায়াতের কর্মী-সমর্থক থাকলেও তাঁদের কোন প্রার্থীর প্রকাশ্যে প্রচার নেই। ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের আমীর, চর মোনাইর পীরের ছোট ভাই নুরুল করীম অথবা চরফ্যাশনের বিশিষ্ট্য ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন হাজী ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের প্রাথী হিসেবে নির্বাচন করবেন। এ লক্ষ্যে তারা গত ৩০ অক্টোবর বুধবার সন্ধায় দু’শতাধিক মোটর সাইকেল ও মাক্রো শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে চরফ্যাশনে শো-ডাউন করেছেন।