দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভোলা-৩ : বিএনপিতে অভ্যন্তরীণ কোন্দল, সুবিদা জনক অবস্থায় আ’লীগ

31/10/2013 11:09 amViews: 228

bhola-3 sawan-1 bhola-3 maj hafiz-2এ আর এম মামুন :  আসন্ন  দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্ধারিত সময়ে হবে কি হবে না তা নিয়ে নানা বির্তক থাকলেও  দ্বীপজেলা ভোলার  লালমোহন ও তজুমদ্দিন  উপজেলা নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের ১১৭ ভোলা- ৩ আসনে দেশের তারকা চিহ্নিত সরকারী ও বিরোধী দলের নেতারা ঘরে বসে নেই। ইতোমধ্যে তাঁরা নির্বাচনী  প্রস্তু‘তি নিয়ে গনসংযোগ শুরু করেছেন। এখানে বড় ওই দুই দলের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থীরা তাঁদের মনোনয়ন নিশ্চিত করতে মাঠ পর্যায় থেকে শুরু করে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে জোর লবিং শুরু করেছেন।

নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন                                                 মেজর হাফিজ

ভোলা -৩ আসনে ৮৬টি কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৫২ হাজার ৬৯১। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ২৬ হাজার ৪৯৬ জন ও মহিলা ভোটার ১ লাখ ২৬ হাজার ১৯৫ জন।
ভোলার ৪ টি আসনের মধ্যে এ আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। একটানা ২৬ বছর বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট মেজর (অব) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম এমপি ছিলেন। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর এ আসনে বিএনপির নেতাকর্মীরা ব্যাপক সংখ্যালঘু নির্যাতন করেন। যা দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়। গত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মেজর (অব) জসিম উদ্দিন টানা ৬ বারের এমপি বিএনপির সংস্কারপন্থী প্রার্থী হাফিজ উদ্দিনকে ১২ হাজার ৯১১ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে জয়লাভ করেন। কিন্তু সেনাবাহিনীতে চাকরিকালীন তথ্য গোপন রেখে নির্বাচন করাসহ আইনী জটিলতায় নির্বাচিত আওয়ামী লীগের প্রার্থী মেজর (অব) জসিম উদ্দিনের সংসদ সদস্য পদ আদালত বাতিল করলে এ আসনটি শূন্য হয়।
বর্তমান সরকারের প্রায় দেড় বছরের মাথায় উপনির্বাচনে  আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পায় কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন। উপ-নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মেজর (অব) হাফিজ উদ্দিন আহমেদকে ৫১ হাজার ২১৫ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন  এমপি নির্বাচিত হন। এ আসনে সংখ্যালঘুদের বিশাল ভোট-ব্যাংক আগে থাকলেও নানা নির্যাতন, হয়রানির কারণে এখন দিন দিন কমে যাচ্ছে। বিএনপির প্রার্থীরা মনে করে সংখ্যালঘু ভোটাররা আওয়ামী লীগের ভোটার। তাই নির্বাচন এলে সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্যরা অন্যত্র ভয়ে চলে যায়। দীর্ঘদিন পর এ আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি  নির্বাচিত হওয়ায় দলীয় নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা থাকে অনেক। এমপি শাওন নিজে দলকে সুসংগঠিত করতে ওয়ার্ড থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠন করেন। কাজ দিয়ে যাঁদের সন্তুষ্ট করতে পারেননি তাঁদের পকেট থেকে অর্থ বিতরণ করে কর্মীদের চাঙ্গা করেন।
বিএনপি নেতা হাফিজ ২৬ বছর এমপি থেকে তাঁর বাড়ির সামনের লাঙ্গলখালি ব্রিজটি পর্যন্ত করতে পারেননি। লালমোহন সদরবাসীর দুঃখ লাঙ্গলখালি ব্রিজ শাওন এমপি হওয়ার দেড় বছরের মাথায় বরাদ্দ এনে কাজ শুরু করে দেন। সরকারী বরাদ্দের অপেক্ষায় বসে না থেকে তিনি ব্যক্তিগতভাবে মেঘনার জলদস্যু দমনে একটি স্পিডবোট কিনে দেন পুলিশকে। মাত্র ৩ বছরে এলাকায় রাস্তাঘাট, পুল-কালভার্ট, ২টি নতুন কলেজ নির্মাণ, নদী শাসন রোধে একশ দুই কোটি টাকা বরাদ্ধসহ এলাকা ব্যাপক  উন্নয়নমূলক কাজ করেন। শুধু এলাকার উন্নয়নই নয়, এলাকায় প্রতি বিশ্ব ইজতেমায় লালমোহন থেকে বিনা খরচে মুসল্লিদের খাওয়াসহ একটি লঞ্চ ভাড়া করে আসা-যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। তাঁর এ ধরনের কর্মকান্ড ও ব্যক্তিগতভাবে অর্থ বিতরণের বিষয় বিরোধী শিবিরেও আলোচিত হচ্ছে। যা মেজর (অব) হাফিজ ৬ বার এমপি হয়েও করেননি। যেভাবে এলাকায় কাজ করে দলকে সংগঠিত করে তাঁর কর্মী গ্রুপ সৃষ্টি করেছেন তিনিই বর্তমান পরিস্থিতিতে মেজর (অব) হাফিজের মতো শক্ত প্রার্থীর সঙ্গে লড়ে এ আসন ধরে রাখতে পারবেন বলে মনে করছেন লালমোহন ও তজুমদ্দিন উপজেলার রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তরুণ নেতাকর্মীদের কাছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে শাওনের সমর্থন অনেক বেশি। ইতো পূর্বে ঢাকায় প্রার্থী বচাইতে প্রধান মন্ত্রীর কাছে তৃনমূলের নেতারা শাওনকে মনোনয়ন দেয়ার জন্য  মতামত দেন। তিনিই মনোনয়ন পাচ্ছেন বলে দলীয় একটি সুত্র জানায়।
এ আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভব্য প্রার্থী নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন ছাড়া রয়েছেন সাবেক এমপি মেজর (অব) জসিম উদ্দিন ও ইঞ্জিনিয়ার মীর মোবাশ্বির আলী স্বপন। তাঁরা মনোনয়ন পেতে লবিং করছেন।
অপরদিকে বিএনপি থেকে এ আসনে মেজর (অব) হাফিজ উদ্দিন আহমেদের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকলেও দলের মধ্যে রয়েছে চরম কোন্দল। ওয়ান ইলেভেনের পর সংস্কারবাদী এ নেতা এলাকায় কোণঠাসা হয়ে পড়েন। বিএনপির লালমোহন উপজেলার সভাপতি আনিচল হক, সম্পাদক জসিম উদ্দিন ও তজুমদ্দিন উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানসহ অনেককে বাদ দিয়ে তাঁর আত্মীয় স্বজনদের ঠাঁই দিয়ে বিশ্বস্ত পকেট কমিটি করেন। এর ফলে বিএনপির মধ্যে মারাত্মক অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে।এ কোন্দল বিএনপি মেটাতে না পারলে আগামী নির্বাচনে ও বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়র রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন-প্রত্যাশীদের মধ্যে তজুমদ্দিন উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ও লায়ন এম আর হাওলাদারের নাম শোনা যাচ্ছে। এ ছাড়া বিএনপি জোট থেকে বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থের ছোট ভাই ব্যারিস্টার ওয়াশিকুর রহমান অঞ্জনও মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।

Leave a Reply