দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: ভোলায় ঘর গোছানোর পাশাপাশি দুই জোটে চলছে মনোনয়ন লড়াই

13/10/2013 8:35 pmViews: 88

599368_515148695239281_1607439329_nস্টাফ রিপোর্টার : আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্ধারিত সময়ে হবে কি হবে না তা নিয়ে নানা বির্তক থাকলেও দেশের একমাত্র দ্বীপজেলা ভোলায় দেশের তারকা চিহ্নিত সরকারী ও বিরোধী দলের নেতারা ঘরে বসে নেই। ইতোমধ্যে তাঁরা নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরুকরেছেন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ জোটের হেভিওয়েট নেতারা তাঁদের ঘর গোছানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। বড় ওই দুই দলের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থীরা তাঁদের মনোনয়ন নিশ্চিত করতে মাঠ পর্যায় থেকে শুরু করে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে জোর লবিং শুরু করেছেন। নতুন প্রার্থীরা নিজেদের পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুনে জানান দিচ্ছেন। কিন্তু বিরোধী দলের মধ্যে বিএনপি-বিজেপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও সরকারী দল আওয়ামী লীগের ভেতরে পাওয়া আর না পাওয়ার হিসাবে কর্মী অসন্তোষ তুষের আগুনের মতো জ্বলছে। এসব কোন্দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জোট মেটাতে না পারলে আগামী নির্বাচনে দুই দলেরই ফল বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
গত নির্বাচনে ৪টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩টি ও বিএনপি জোটের বিজেপি ১টি আসন লাভ করে। এবার সরকারী ও বিরোধী দল জাতীয় সংসদে ভোলার ৪টি নির্বাচনী আসন থেকে নির্বাচিত হতে ইতোমধ্যে নানা কৌশল অবলম্বন করে কাজ শুরু করেছে। এদিকে মহাসেনের সময় বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণে ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড ব্যর্থ হওয়ায় কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। নির্বাচনের কয়েক মাস পূর্বে এসব পানিবন্দী মানুষ এখন চরম ক্ষুব্ধ। দুর্যোগকালীন কোন নেতা কী ভূমিকা রেখেছেন তা আসন্ন নির্বাচনেও ভোটাররা খতিয়ে দেখবে। ওইসব মানুষ বলছে, ভোট এলেই এর উপযুক্ত জবাব দেয়া হবে। অন্যদিকে ক্ষমতায় থেকে ব্যাপক উন্নয়ন করলেও মাঠ পর্যায় থেকে নেতাকর্মীদের পুনর্বাসনের নামে যাঁরা কাজ দিয়ে সরাসরি কমিশন ও পার্সেন্টেজ নিয়েছেন তাঁদের নির্বাচনী মাঠে চরম খেসারত দিতে হতে পারে বলেও মনে করছে স্থানীয়রা।
মাঠ পর্যায়ের কতিপয় সুযোগসন্ধানী চাটুকার, আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ,বটগাছ বনে যাওয়া নেতাদের দৌরাত্ম্যে শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা তৃণমূল পর্যায়ের প্রকৃত চিত্র জানতে পারেনি। ফলে এর বিরূপ প্রভাব নির্বাচনে পড়তে পারে। তা ছাড়া বিএনপির নেতাকর্মীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে তাঁদের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে দলীয় কর্মীদের বঞ্চিত করায় এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। শেষ সময় সুযোগসন্ধানী বিএনপি নেতাদের আসল রূপ বেরিয়ে পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। এ সরকারের অনেক সফলতা থাকলেও তা সাধারণ জনগণের কাছে অজানা। স্থানীয় নেতারা সরকারের উন্নয়নমূলক দিকগুলো জনগণের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করেননি, এমনকি বিরোধী দলের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে প্রকৃত সত্যকে তুলে ধরতে নেতাকর্মীদের মাঠ পর্যায়ে আদৌ দেখা যায়নি। অন্যদিকে ভোলায় ১৪ দলের শরিক জাতীয় পার্টির এরশাদের কোন কর্মী-সমর্থক নেই বললেই চলে। জামায়াতের কর্মী-সমর্থক থাকলেও তাঁদের কোন প্রার্থীর প্রকাশ্যে প্রচার নেই। অনুসন্ধানে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
ভোলা-১ (সদর) :
১৯৯১ এবং ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ভোলা-১ আসন থেকে তোফায়েল আহমেদ নির্বাচিত হন। কিন্তু এ আসন থেকে গত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের র্প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেন দলের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য এ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। তাঁকে ১৬ হাজার ৬৬৯ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে বিএনপি জোটের তরুণ প্রার্থী বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ বিজয়ী হন। কিন্তু তাঁর পর থেকে পার্থের সঙ্গে স্থানীয় জেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ গোলাম নবী আলমগীর গ্রুপের সঙ্গে সর্ম্পক সাপে নেউলে। ভোলা-১ আসনে তাঁর নির্বাচন করতে হলে বিএনপির কর্মী ও ধানের শীষ মার্কা ভরসা। ভোলা সদর ছাড়া জেলায় তাঁর দলের তেমন কোন অস্তিত্ব বা কর্মীবাহিনী নেই বললেই চলে। তিনি ঢাকায় বসে টকশোতে সরকারের নানা দোষত্রুটি তুলে ধরলেও বিএনপির স্থানীয় নেতৃবৃন্দ তাঁকে মেনে নিতে পারেনি। তাঁর সংগঠন বিএনপির মতো এত শক্তিশালী নয়। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে জোটের কর্মসূচীতে পার্থসহ তাঁর কর্মীদের ওপর ছাত্রদলের কর্মীরা চড়াও হয়। বিএনপির কর্মীরা বিজেপির অফিস ভাংচুর করে তান্ডব চালায়। পৌর নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে গোলাম নবী আলমগীর যুবলীগের আহ্বায়ক মনিরুজ্জামানের কাছে হেরে যান। তখন বিএনপি নেতা আলমগীর তাঁর পরাজয়ের জন্য সদর বিএনপির কতিপয় নেতাকর্মীসহ দলের একটি গ্রুপকে দায়ী করে। এ নিয়ে সদর উপজেলা বিএনপির কমিটির মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে সদর বিএনপির কমিটি ভেঙ্গে দেয়া হয়। বিএনপির সভাপতি গোলাম নবী আলমগীর তাঁর জন্য ক্ষতিকর অপবাদ দিয়ে তাঁদের দূরে সরিয়ে রাখেন। বিএনপির আলমগীরবিরোধী ওই গ্রুপ পার্থের পক্ষে কাজ করে। এদিকে এমপি হওয়ার পর থেকে পার্থ এলাকায় কম আসেন। তবে এলাকায় কম ঘুরলেও নীরবে তাঁর বিশ্বস্ত নেতাকর্মী দিয়ে মধ্যবিত্ত, দুস্থ পরিবারকে চিকিৎসা, বিয়েসহ নানা ধরনের অর্থ সহায়তা দিচ্ছেন। তিনি বিএনপির সঙ্গে স্থানীয়ভাবে প্রকাশ্যে কোন দ্বন্ধে না গিয়ে নীরবে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের বঞ্চিত নেতাকর্মীদের নানাভাবে ম্যানেজ করে দলে আনার চেষ্টা করছেন। তা ছাড়া পার্থ নির্বাচনী সময় চূড়ান্ত হলে জোরেশোরে মাঠে নামবেন বলেও প্রচার রয়েছে।
নির্বাচনের কয়েক মাস আগে ভোলা-১ আসন থেকে বিএনপি জোটের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর ছোট ভাই আলহাজ গোলাম নবী আলমগীর মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রে জোর লবিং শুরু করেন। গত ৩০ আগস্ট ভোলা জেলা বিএনপির বর্ধিত সভায় নেতাকর্মীরা গোলাম নবী আলমগীরের নাম ভোলা-১ আসনের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে। এদিকে আগামী নির্বাচনে যদি বিএনপি জোট থেকে পার্থ মনোনয়ন পান তা হলে বিএনপির সভাপতি গোলাম নবী আলমগীরের ভাবি সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মোশারফ হোসেন শাজাহানের স্ত্রী ইডেন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষা ফিরোজা বেগম অথবা শাজাহানের ছেলে আসিফ আলতাফ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করবেন বলেও গুঞ্জন চলছে। তবে গোলাম নবী আলমগীরের মনোনয়ন এ আসন থেকে নিশ্চিত বলে তাঁর গ্রুপ প্রচার করছে। অপর দিকে পার্থ যদি এ আসন থেকে মনোনয়ন না পান তা হলে বিজেপি নেপথ্যে উল্টো কাজ করবে বলে শোনা যাচ্ছে। বিএনপি জোটের এ ধরনের কোন্দল না মিটলে নির্বাচনের ফসল আওয়ামী লীগের ঘরে সহজেই উঠবে বলে মনে করছে এলাকাবাসী।
এদিকে গত সংসদ নির্বাচনে এ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন হেরে গেলে তিনি ভোলায় আসা-যাওয়া কমিয়ে দেন। তিনি বলতে গেলে ভোলার রাজনীতির হাল ছেড়ে দিয়েছেন। এক ধরনের জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। তবে দলের সভাপতি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল কাদের মজনু মোল্লা গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ ও সম্পর্ক রক্ষা করে চলেন। অপরদিকে আওয়মী লীগের সভাপতি ফজলুল কাদের মজনু ও দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মমিন টুলু গ্রুপের মধ্যে কোন্দল এখনও মেটেনি। এ ছাড়াও পৌর নির্বাচন নিয়ে জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ভোলা পৌর মেয়র মনিরুজ্জামান মনিরের সঙ্গে সভাপতির মতানৈক্যের বরফ গলেনি।
ভোলায় আওয়ামী রাজনীতিতে তোফায়েল আহমেদের বিকল্প কেউ নেই। ভোলা সদর-১ আসন থেকে হেভিওয়েট তারকা রাজনীতিবিদ সাবেক মন্ত্রী আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য, ভোলা-২ আসনের এমপি তোফায়েল আহমেদ নির্বাচন করবেন বলে ঘোষণা দিয়ে এলাকায় ব্যাপক সাংগঠনিক কাজসহ গণসংযোগ করে যাচ্ছেন গত রমজান মাস থেকে। তিনি ইতোমধ্যে ভোলা শহর রক্ষার জন্য ১০৩ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করিয়ে নদী ভাঙ্গন রোধে কাজ শুরু করেছেন। এ ছাড়া নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এ সরকারের সবচেয়ে বড় সাফল্য ভোলায় কিছুদিন আগে আবাসিক গ্যাস সংযোগ উদ্বোধন করেন। ভোলায় পানিবন্দী মানুষের সহায়তার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে বিশেষ টাকা ও চাল বরাদ্দ এনে বিতরণের ব্যবস্থা করেন। এ ছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে নগদ অর্থ বিতরণ করেন। এতে আগামী নির্বাচনে তাঁর পক্ষে জনমতে বিশেষ সাড়া পড়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য এক শক্তিশালী প্রার্থী।
এ আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহাবুবুর রহমান হিরন মনোনয়ন পেতে ব্যাপক লবিং করছেন। ইতোমধ্যে তিনি শহরের বিভিন্ন স্থানে মনোনয়ন-প্রত্যাশী বলে বিশাল ব্যানার টাঙ্গিয়েছেন। এ ছাড়া ভোলা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুল কাদের মজনু মোল্লা মনোনয়ন পেতে দলের শীর্ষ পর্যায়ে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে। জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক দিয়ে এ আসনে আজিম গোলদার নামে এক ব্যক্তি শহরে পোস্টারিং করেছেন।
ভোলা জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, এ আসনে ৭৪টি কেন্দ্রের মধ্যে বর্তমানে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৬৫ হাজার ৬৫২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৩৩ হাজার ১৮৯ জন ও মহিলা ভোটার ১ লাখ ৩২ হাজার ৪৬৩ জন ।
ভোলা-২ (দৌলতখান-বোরহানউদ্দিন) : ১৯৭০ সালে ঐতিহাসিক নির্বাচনে ভোলার দৌলতখান-তজুমদ্দিন-মনপুরা আসন থেকে মাত্র ২৭ বছর বয়সে তোফায়েল আহমেদ পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১ এবং ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ভোলা-১ আসন থেকে নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে হাফিজ ইব্রাহিম এমপি হলেও এ আসন থেকে গত সংসদ নির্বাচনে মামলাজনিত জটিলতার কারণে সাবেক এমপি বিএনপি নেতা হাফিজ ইব্রাহিম নির্বাচন করতে পারেননি। বিএনপি জোটের প্রার্থী বিজেপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান নাজিউর রহমান মঞ্জুর মেজ ছেলে অর্থনীতিবিদ ড. আশিকুর রহমান শান্ত মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনে তোফায়েল আহমেদের কাছে ৭৮ হাজার ৭৩০ ভোটের ব্যাবধানে হেরে যান। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ ১ লাখ ৩ হাজার ৫৮২ ভোটে নির্বাচিত হন।
গত বিএনপি আমলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর ব্যাপক অত্যাচার, নির্যাতন করা হলেও তোফায়েল আহমেদ নির্বাচিত হওয়ার পর বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলা করা হয়নি। এলাকায় ছিল এক শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। তোফায়েল আহমেদ মন্ত্রী না হলেও তাঁর নির্বাচনী এলাকা দৌলতখান-বোরহানউদ্দিন উপজেলায় ব্যাতিক্রমধর্মী উন্নয়ন কাজ করেন। তিনি এলাকায় রাস্তা, পুল, কালভার্ট ছাড়াও প্রায় ৬শ’ মসজিদ, মক্তব, মাদ্রাসার ঘাটলা নির্মাণ করেছেন। তোফায়েল আহমেদের প্রচেষ্টায় বোরহানউদ্দিনে প্রায় ২২শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে গ্যাসভিত্তিক ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুত প্লান্ট স্থাপনের কাজ শুরু হয়। এ আসন থেকেও তাঁর নির্বাচন করার কথা শোনা যাচ্ছে। তবে তিনি যদি না করেন তা হলে দৌলতখান পৌর মেয়র আলী আজম মুকুল মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার সেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আযাদ মনোনয়ন পেতে লবিং শুরু করেছেন। এলাকায় পোস্টারিং করে তাঁর অবস্থান জানান দিচ্ছেন।
অপরদিকে এ আসনে বিএনপি জোটের প্রার্থী হিসেবে সাবেক এ আসনের সংসদ সদস্য হাফিজ ইব্রাহিম তাঁর আসন পুনরুদ্ধারে মরিয়া হয়ে মাঠের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে কাজ করছেন। কর্মীদের চাঙ্গা করতে বিভিন্ন সময়ে এলাকায় ঘুরে বেড়ান। তিনি যদি আইনী জটিলতায় মনোনয়ন না পান, তা হলে তাঁর স্ত্রী মারফুজা সুলতানা বিএনপি জোটের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করবেন বলে প্রচার চলছে। অন্যদিকে জেলা বিএনপির সদস্য, চট্টগ্রামে ভোলার ব্যবসায়ী আবদুল মমিন মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রে লবিং করছেন। ইতোমধ্যেই তিনি এলাকায় পোস্টারিং করেছেন। এলাকায় তাঁর একটি গ্রুপ রয়েছে।
এ আসনে ৯৫টি কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৫৩ হাজার ৬১৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ২৬ হাজার ৮৬৪ জন ও মহিলা ১ লাখ ২৬ হাজার ৭৫২ জন।
ভোলা-৩ আসন (লালমোহন-তজুমদ্দিন) :
ভোলার ৪টি আসনের মধ্যে এ আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। একটানা ২৬ বছর বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট মেজর (অব) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম এমপি ছিলেন। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর এ আসনে বিএনপির নেতাকর্মীরা ব্যাপক সংখ্যালঘু নির্যাতন করেন। যাতে দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়। গত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মেজর (অব) জসিম উদ্দিন টানা ৬ বারের এমপি বিএনপির সংস্কারপন্থী প্রার্থী হাফিজ উদ্দিনকে ১২ হাজার ৯১১ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে জয়লাভ করেন। কিন্তু সেনাবাহিনীতে চাকরিকালীন তথ্য গোপন রেখে নির্বাচন করাসহ আইনী জটিলতায় নির্বাচিত আওয়ামী লীগের প্রার্থী মেজর (অব) জসিম উদ্দিনের সংসদ সদস্য পদ আদালত বাতিল করলে এ আসনটি শূন্য হয়।
বর্তমান সরকারের প্রায় দেড় বছরের মাথায় এক উপনির্বাচনে তখন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পায় কেন্দ্রীয় যুবলীগের নেতা নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন। উপনির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মেজর (অব) হাফিজ উদ্দিন আহমেদকে ৫১ হাজার ২১৫ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন নির্বাচিত হন। এ আসনে সংখ্যালঘুদের বিশাল ভোট-ব্যাংক আগে থাকলেও নানা নির্যাতন, হয়রানির কারণে এখন দিন দিন কমে যাচ্ছে। বিএনপির প্রার্থীরা মনে করে সংখ্যালঘু ভোটাররা আওয়ামী লীগের ভোটার। তাই নির্বাচন এলে সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্যরা অন্যত্র ভয়ে চলে যায়। দীর্ঘদিন পর এ আসনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা থাকে অনেক। এমপি শাওন নিজে দলকে সুসংগঠিত করতে ওয়ার্ড থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠন করেন। কাজ দিয়ে যাঁদের সন্তুষ্ট করতে পারেননি তাঁদের পকেট থেকে অর্থ বিতরণ করে কর্মীদের চাঙ্গা করেন।
বিএনপি নেতা হাফিজ ২৬ বছর এমপি থেকে তাঁর বাড়ির সামনের লাঙ্গলখালি ব্রিজটি পর্যন্ত করতে পারেননি। লালমোহন সদরবাসীর দুঃখ লাঙ্গলখালি ব্রিজ শাওন এমপি হওয়ার দেড় বছরের মাথায় বরাদ্দ এনে কাজ শুরু করে দেন। সরকারী বরাদ্দের অপেক্ষায় বসে না থেকে তিনি ব্যক্তিগতভাবে মেঘনার জলদস্যু দমনে একটি স্পিডবোট কিনে দেন পুলিশকে। মাত্র ৩ বছরে এলাকায় রাস্তাঘাট, পুল-কালভার্ট, ২টি নতুন কলেজ নির্মাণসহ উন্নয়নমূলক কাজ করেন। শুধু এলাকার উন্নয়নই নয়, এলাকায় প্রতি বিশ্ব ইজতেমায় লালমোহন থেকে বিনা খরচে মুসল্লিদের খাওয়াসহ একটি লঞ্চ ভাড়া করে আসা-যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। তাঁর এ ধরনের কর্মকান্ড ও ব্যক্তিগতভাবে অর্থ বিতরণের বিষয় বিরোধী শিবিরেও আলোচিত হচ্ছে। যা মেজর (অব) হাফিজ ৬ বার এমপি হয়েও করেননি। যেভাবে এলাকায় কাজ করে দলকে সংগঠিত করে তাঁর কর্মী গ্রুপ সৃষ্টি করেছেন তিনিই বর্তমান পরিস্থিতিতে মেজর (অব) হাফিজের মতো শক্ত প্রার্থীর সঙ্গে লড়ে এ আসন ধরে রাখতে পারবেন বলে অনেকেই মনে করছেন। তরুণ নেতাকর্মীদের কাছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে শাওনের সমর্থন অনেক বেশি।
এ আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভব্য প্রার্থী নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন ছাড়া রয়েছেন সাবেক এমপি মেজর (অব) জসিম উদ্দিন ও ইঞ্জিনিয়ার মীর মোবাশ্বির আলী স্বপন। তাঁরাও মনোনয়ন পেতে লবিং করছেন।
অপরদিকে বিএনপি থেকে এ আসনে মেজর (অব) হাফিজ উদ্দিন আহমেদের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকলেও দলের মধ্যে রয়েছে চরম কোন্দল। ওয়ান ইলেভেনের পর সংস্কারবাদী এ নেতা এলাকায় কোণঠাসা হয়ে পড়েন। বিএনপির লালমোহন উপজেলার সভাপতি আনিচল হক, সম্পাদক জসিম উদ্দিন ও তজুমদ্দিন উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানসহ অনেককে বাদ দিয়ে তাঁর আত্মীয় স্বজনদের ঠাঁই দিয়ে বিশ্বস্ত পকেট কমিটি করেন। এর ফলে বিএনপির মধ্যে মারাত্মক অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন-প্রত্যাশীদের মধ্যে তজুমদ্দিন উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ও লায়ন এম আর হাওলাদারের নাম শোনা যাচ্ছে। এ ছাড়া বিএনপি জোট থেকে বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থের ছোট ভাই ব্যারিস্টার ওয়াশিকুর রহমান অঞ্জনও মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।
এ আসনে ৮৬টি কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৫২ হাজার ৬৯১। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ২৬ হাজার ৪৯৬ জন ও মহিলা ভোটার ১ লাখ ২৬ হাজার ১৯৫ জন।
ভোলা-৪ (চরফ্যাশন-মনপুরা) :
এ আসন থেকে গত সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী টানা তিনবারের এমপি নাজিম উদ্দিন আলমকে আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাংসদ অধ্যক্ষ নজরুল ইসলামের জ্যেষ্ঠপুত্র আওয়ামী লীগের তরুণ প্রার্থী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব ৩৯ হাজার ৯৯ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। নির্বাচিত হওয়ার পর এমপি জ্যাকবের যেমন ভাগ্যের উন্নতি হয়, দ্রুত অনেক কিছুর পরিবর্তন ঘটে, ঠিক তেমনি আলাদিনের চেরাগের মতো চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলার উন্নয়নে আমূল পরিবর্তন করে দেয়। স্বাধীনতার পর এত উন্নয়ন চরফ্যাশন ও মনপুরাবাসী ইতোপূর্বে আর দেখেনি। চরফ্যাশন উপজেলায় নতুন ২টি থানা, ৮টি ইউনিয়ন পরিষদ, ৩টি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র, জেলা সদর থেকে চরফ্যাশনে দেওয়ানি, ফৌজদারি, যুগ্ম জেলা জজ আদালত স্থানান্তর, ভোলা সদর থেকে চরফ্যাশনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিভিশন-২-এর অফিস স্থানান্তরসহ ভোলা-৪ আসনে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার রাস্তাঘাট, পুল-কালভার্ট, স্কুল-কলেজ নির্মাণ করে চরফ্যাশনের চেহারা পাল্টে দিয়েছেন। জ্যাকবের স্বপ্ন আগামীতে দল ক্ষমতায় এলে এমপি হতে পারলে চরফ্যাশনকে জেলা করার চেষ্টা করবেন। এখানে নেতৃত্ব নিয়ে কোন্দল না থাকলেও দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে অসন্তোষ আর চাপা ক্ষোভ। জিরো থেকে হিরো বনে যাওয়া শীর্ষ নেতার ভাগ্য পাল্টালেও নেতাকর্মীদের তেমন কোন উন্নতি হয়নি। যাঁদের টাকা ছিল তাঁদের কাছ থেকে কমিশন বা পার্সেন্টেজ নিয়ে কাজ দেয়া হতো। দলের ত্যাগী নেতারা যথাযথভাবে মূল্যায়িত হয়নি। মোটা অঙ্কের কমিশন পাওয়ার জন্য বিএনপির ঠিকাদারদের কাজ দেয়া হতো। একসময় যাঁর তেমন কিছু ছিল না সে আজ আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ,বটগাছ বনে গেছেন! যা এলাকায় সবার মুখে মুখে ওপেনসিক্রেট।
এদিকে ম্যাজিকের মতো এলাকায় উন্নয়ন করায় ম্যাজিক নেতা জ্যাকবের বিরোধী শিবিরেও আলোচিত হচ্ছে। তাঁর উন্নয়ন দলমত সবার কাছে প্রসংশিত। তবে তৃণমূলের আওয়ামী লীগের কর্মীদের ক্ষোভের রয়েছে চাপা ক্ষোভ। নির্বাচনে এক্ষোভের বর্হি:প্রকাশ ঘটতে পারে। নির্বাচনে কর্মী সংকটে পড়তে পাড়ে আওয়ামী লীগ। তৃণমূলের আওয়ামী লীগের বরফ না গললে শেষ সময়ে টাকা খরচ করেও নির্বাচনী ফল ঘরে তোলা যাবেনা বলে মনে করছে স্থানীয়রা। এখানে আগামী নির্বাচনে জ্যাকবই সম্ভাব্য প্রার্থী। সাবেক যুগ্ম সচিব স্থানীয় আরব আলী মাস্টারের ছেলে আবদুস সালাম মনোনয়ন-প্রত্যাশী হিসেবে লবিং করছেন বলে প্রচার রয়েছে। তিনি ইতোমধ্যে পোষ্টার ও পত্রিকার মাধ্যমে এলাকা বাসীকে ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। যদিও তিনিকোনজোটেযোগ দিবেন এবং মনোনয়োন ছাইবেন তা সপষ্ট না। এদিকে ঢাকা মহানগর যুবলীগের দক্ষিণ শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মাকসুদুর রহমান ইতিমধ্যে এলাকায় পোস্টার লাগিয়ে এলাকাবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি এ আসনে আ’লীগের মনোনয়নের লবিং করছেন বলে এলাকায় প্রচার রয়েছে।
নাজিম উদ্দিন আলম ওয়ান ইলেভেনের পর দলের ভেতর দুঃসময় পার করলেও তাঁর চরফ্যাশনে কর্মীবাহিনী আগের চেয়ে অনেক সংগঠিত হয়েছে। তিনি এ আসনে মনোনয়ন পেলে জাতীয় ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে ভোটযুদ্ধে নামলে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে বলে অনেকেই ধারণা করছেন। তবে চরফ্যাশনে বিএনপির মধ্যে নাজিম উদ্দিন আলমকে সংস্কারপন্থী নেতা বলে স্থানীয় বিএনপির মধ্যে কমিটি নিয়ে কোন্দল রয়েছে। সেখানে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী লায়ন নজরুল ইসলাম চৌধুরী বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রে লবিং করছেন। এ ছাড়া সাবেক ছাত্র দলেরকেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মনোয়নের জন্য লবিং করছেন।
ভোলা-৪ আসনে ১১৬টি কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ১৯ হাজার ২৬৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৬০ হাজার ৮৮০ জন ও মহিলা ভোটার ১ লাখ ৫৮ হাজার ৩৮৮ জন।

Leave a Reply