দলীয় প্রতীকে পৌর নির্বাচনের অধ্যাদেশ জারি

দলীয় প্রতীকে পৌরসভা নির্বাচনের বিধান রেখে স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি করেছে সরকার। সোমবার রাতে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন অধ্যাদেশ জারির বিষয়টি যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, পৌরসভার আইনের অধ্যাদেশ জারি হয়েছে। এতে দলীয়ভাবে নির্বাচনের বিধান রাখা হয়েছে। এর ফলে দেশে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এতদিন শুধু জাতীয় সংসদ নির্বাচন দলীয়ভাবে হয়ে আসছে। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অধ্যাদেশ জারি হওয়ায় বিধিমালা সংশোধনসহ নির্বাচনের অন্যান্য প্রস্তুতিমূলক কাজ দ্রুত শেষ করা হবে। চলতি মাসেই পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরিকল্পনা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। ডিসেম্বরে সারা দেশের পৌরসভাগুলোতে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আইন সংশোধনের ফলে বহু ধরনের প্রতীকের পরিবর্তে এখন পৌর ভোটেও সংসদ নির্বাচনের মতো দলীয় প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হবেন রাজনৈতিক দলের নেতারা। পৌর নির্বাচনেও একটি দলের একজন প্রার্থী হবেন। এক্ষেত্রে কমিশনে নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। নৌকা, ধানের শীষ, লাঙলের মতো প্রতীকগুলো ব্যবহার হবে এ নির্বাচনেও। দলের সমর্থনের বাইরে কেউ প্রার্থী হতে চাইলে তাকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হবে। তবে জাতীয় সংসদের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য নির্ধারিত শর্ত পূরণ করতে হবে। তবে সংশোধিত পৌরসভা আইনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা জমা দেয়ার বিষয়ে কিছু উল্লেখ নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, বিষয়টি আইনে নেই। কমিশন হয়তো বিধিমালায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার জন্য নির্দিষ্টসংখ্যক ভোটারের স্বাক্ষর থাকার বিষয়টি উল্লেখ রাখবে। এটা কমিশনই নির্ধারণ করবে, যাতে অনেক বেশি প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় না আসেন। এ বিষয়ে কমিশন যে সিদ্ধান্ত নেবে তাতে আমাদের (স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের) কোনো আপত্তি থাকবে না।
এর আগে সোমবার দুপুরে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ এ বিষয়ে বলেন, দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য দুটি বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনা হচ্ছে। এক্ষেত্রে মোট ভোটারের ১ শতাংশের সমর্থন নেয়ার বিধানটিই থাকতে পারে। আবার সে সংখ্যা নির্দিষ্ট করেও দেয়া হতে পারে। তবে আইনের সংশোধন এখনও হয়নি। তাই কিছুই বলা যাচ্ছে না।
ইসির প্রস্তুতি : এদিকে অধ্যাদেশ জারির আগ থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি এগিয়ে রেখেছে নির্বাচন কমিশন। এ নির্বাচনের বিধিমালার খসড়া তৈরি করা হয়েছে। ব্যালট ছাপানোর বিষয়ে সোমবার সরকারি তিনটি প্রেসের সঙ্গে বৈঠক করেন ইসি কর্মকর্তারা। ওই বৈঠকে নির্বাচন কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ফরম, প্যাকেট, ম্যানুয়েল, নির্দেশিকা, ব্যালট পেপার ও অন্যান্য সামগ্রী মুদ্রণ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা হয়। সভায় বিজি প্রেস, বাংলাদেশ নিরাপত্তা মুদ্রণালয়, গভর্নমেন্ট প্রিন্টিং প্রেসের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। ইসি কর্মকর্তারা জানান, দলভিত্তিক নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়ায় এখনও পৌর নির্বাচনের ব্যালট পেপার ছাপা হয়নি। সাধারণত নির্দলীয় নির্বাচনের সময় তফসিলের আগেই স্থানীয় সরকারের ব্যালট পেপার মুদ্রণ সেরে ফেলা হয়। ডিসেম্বরে ভোট অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে কী পরিমাণ ব্যালট পেপার লাগবে, কত সময়ে ছাপাতে হবে, ওই সময়ে সব ব্যালট পেপার ছাপানো সম্ভব কিনা, তা যাচাই শুরু হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির এক কর্মকর্তা বলেন, কয়েক কোটি ব্যালট পেপার ছাপানো একটু কঠিন হবে, তবে অসম্ভব নয়।
দেশে তিন শতাধিক পৌরসভা রয়েছে। এর মধ্যে ডিসেম্বরে প্রায় আড়াইশ’ পৌরসভায় ভোটের প্রস্ততি রয়েছে ইসির। এসব পৌরসভায় ভোটার প্রায় ৭৫ লাখ। সেক্ষেত্রে মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলরের জন্য ২ কোটি ১০ লাখের বেশি ব্যালট পেপার ছাপতে হবে। গড়ে প্রতি পৌরসভায় সাধারণ ওয়ার্ড ১১টি। সে হিসাবে নির্বাচন উপযোগী পৌরসভায় ওয়ার্ড থাকবে ২ হাজার ৮২৬টি। মোট পদ থাকবে মেয়র ২৪০, সাধারণ কাউন্সিলর ২ হাজার ৬৪০টি ও সংরক্ষিত ৮৮০টি।