দর্শক টানতে পারছে না নারী ক্রিকেট
ঢাকা: টি টুয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলায় পুরুষদের ক্রিকেটের পাশাপাশি চলছে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর নারী ক্রিকেটারদের খেলা। বৃহস্পতিবার মেয়েদের প্রথম সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছে ৮ রানে।
শুক্রবার মেয়েদের দ্বিতীয় সেমিফাইনালের খেলায় মুখোমুখি হচ্ছে দ: আফ্রিকা ও ইংল্যান্ড। কিন্তু পুরুষদের টি টুয়েন্টিকে ঘিরে যতটা আগ্রহ ও উদ্দীপনা- মেয়েদের টি টুয়েন্টিকে ঘিরে তা খুব একটা চোখে পড়ছে না।
বেলা চারটা নাগাদ অস্ট্রেলিয়া আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের মেয়েদের সেমিফাইনালের আধাআধি খেলা শেষ হয়েছে। কিন্তু তখনো গ্যালারিতে দর্শকদের সংখ্যা হাতে গোনা যাবে। আর মাঠের বাইরের চিত্র ছিল অনেকটা একই।
মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সামনের রাস্তায় দর্শকদের তেমন একটা ভিড় নেই। প্রতিটি খেলার আগেই এই রাস্তাটিতে বিপুল দর্শকের উপস্থিতি দেখা গেলেও, বৃহস্পতিবার বেলা চারটাতেও সেখানে দর্শকদের খুঁজে পাওয়াই কঠিন হলো।
ভেতরে যদিও ততক্ষণে অর্ধেক খেলা শেষ হয়ে গেছে, কিন্তু তখনো কয়েকজনকে দেখা গেল, হাতে টিকেট থাকা সত্ত্বেও তারা গেটের বাইরেই দাড়িয়ে আছেন।
একজন জানালেন, রোদ কমলে তিনি গ্যালারিতে প্রবেশ করবেন। কারণ অস্ট্রেলিয়া আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের মেয়েদের মধ্যে যে খেলা হচ্ছে, তা নিয়ে তার কোন আগ্রহ নেই।
সাধারণত প্রবেশমুখে দর্শকদের যে লম্বা সাড়ি দেখা যায়, আজ তা একেবারেই অনুপস্থিত।
একজন দর্শক বললেন, একই টিকেটে দুটি খেলা দেখা যাবে বলেই তিনি মেয়েদের খেলাটি দেখছেন। না হলে এ নিয়ে এই খেলাটি দেখার কোন ইচ্ছা ছিল।
আরেকজন দর্শক বলছেন, আজ যে ঢাকায় মেয়েদের সেমিফাইনালের খেলা আছে, সেটাই তিনি জানতেন না। তিনি আসলে স্টেডিয়ামে এসেছিলেন বিকালে শ্রীলঙ্কা আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলাটি দেখার জন্য।
প্রবেশপথের একজন কর্মকর্তা মোঃ. ইউসুফ বলছিলেন, অন্যসব খেলায় যখন ভিড় সামলানোই কঠিন হয়ে দাড়ায়, তখন এই খেলাটিতে কারও আগ্রহই চোখে পড়ছে না।
তিনি বলছেন, অন্য খেলাগুলো চলার সময় বিকাল পাঁচটার মধ্যেই দশ বারো হাজার দর্শক মাঠে ঢুকে যায়। কিন্তু বিকাল পর্যন্ত তার গেটটি দিয়ে মাত্র শ’দুয়েক দর্শক খেলা দেখতে মাঠে ঢুকেছেন।
তবে মি. ইউসুফের ধারণা, সন্ধ্যায় ছেলেদের শ্রীলঙ্কা আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ খেলার আগেই এই চিত্র পাল্টে যাবে। কিন্তু মেয়েদের খেলার প্রতি দর্শকের এই অনাগ্রহের কারণ কি?
একজন দর্শক বলছেন, ছেলেদের খেলাগুলোর মতো মেয়েদের খেলাগুলো ততটা উত্তেজনাপূর্ণ হয় না। তাই এটি দেখার প্রতি আমার আগ্রহ কম।
আরেকজন বলছেন, মেয়েদের খেলাগুলো নিয়ে প্রচারণা কম। তাই এটি নিয়ে জানাশোনাও কম হয়। বাংলাদেশে মেয়েদের টি টুয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলা চললেও, এর আগের ম্যাচের ফলাফল, খেলা নিয়েও কমই আলোচনা হয়েছে। প্রচারণার অভাবেই দর্শকরা তেমন একটা আগ্রহী হয় না।
তবে শুধুমাত্র দর্শকরাই নয়, পাশাপাশি দুটি বিশ্বকাপ চললেও, মেয়েদের খেলার প্রতি সংবাদ মাধ্যমেরও ছিল যেন অনেকটা বিমাতৃসুলভ মনোভাব। ঢাকা বা চট্টগ্রামে ছেলের খেলাগুলো যতটা গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করা হয়েছে, তার ছিটেফোঁটাও পায়নি সিলেটে মেয়েদের ম্যাচগুলো। কিন্তু কেন?
ক্রীড়া সাংবাদিক দেবব্রত মুখোপাধ্যায় বলছেন, মেয়েদের খেলা এমনিতেই কম হয়। এখনো এটি পেশাদার ক্রিকেট হিসাবে সবদেশে জনপ্রিয়তা পায়নি। আইসিসি নিজেও এটি ততটা গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করতে চায়, সেটা মনে হয় না। কারণ সেমিফাইনালের আগ পর্যন্ত মেয়েদের খেলা সরাসরি সম্প্রচারও করা হয়নি।
তিনি বলছেন, এটির প্রতি দর্শকদের আগ্রহ কম, আবার খেলাটিও পুরোপুরি পেশাদার চেহারা পায়নি। এ কারণেই হয়তো দর্শকদের বা মিডিয়ার অনাগ্রহ। আর দর্শকদের আগ্রহ না থাকলে, সেখানে তো মিডিয়া তাদের স্পেস ব্যয় করতে চায় না।
দর্শকদের কয়েকজন জানালেন, প্রচারের অভাবেই মেয়েদের খেলাগুলো নিয়ে তাদের জানাশোনা কম, তাই আগ্রহও তৈরি হয়না। আবার দর্শকদের আগ্রহ কম বলেই প্রচারে অনাগ্রহী মিডিয়া। তবে এই পরিস্থিতি কিভাবে পাল্টাবে, সেই উত্তর অবশ্য এখনো কারও কাছে নেই।– বিবিসি।