‘দরিদ্র জনসাধারণকে আইনী অধিকারের বাইরে রাখা গুরুতর অন্যায়’
‘দরিদ্র জনসাধারণকে আইনী অধিকারের বাইরে রাখা গুরুতর অন্যায়’
কার্যকর আইনগত অধিকার সকল নাগরিকের জন্য অত্যন্ত জরুরি। দরিদ্র জনসাধারণকে আইনী অধিকারের বাইরে রাখা গুরুতর অন্যায়ই নয়, বরং তা জনগণকে তাদের জীবনমান উন্নয়নের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে এবং দারিদ্র্য কবলিত দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির দরিদ্র জনসাধারণের আইনগত অধিকার কমিশনের রিপোর্ট উদ্ধৃত করে ড. কামাল হোসেন এ কথা বলেন।
আজ সকালে নগরীর ব্র্যাক সেন্টার ‘ইন্ এ সাউথ এশিয়ান ইন্সটিটিউট অফ্ এডভান্সড্ লিগাল এন্ড হিউম্যান রাইটস্ স্টাডিজ’ (সেইলস্) এর পাঁচদিনব্যাপী প্যারা লিগালকর্মীদের সক্ষমতা বৃৃদ্ধি শীর্ষক প্রশিক্ষণের সমাপনী ও সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথির বক্তৃতা করছিলেন। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক স্থপতি ফুয়াদ হাসান মল্লিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম। বক্তব্য রাখেন, ভারতের সেন্টার ফর সোশ্যাল জাস্টিস-এর গগন শেটি এবং সেইলস্ এর নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার মনজুর হাসান।
দক্ষিণ এশিয়ায় রাষ্ট্র ও গণতন্ত্র শীর্ষক জাতিসংঘ কমিশনের ২০০৮ সনে প্রকাশিত রিপোর্টকে উদ্ধৃত করে কামাল হোসেন আরও বলেন, আইনী অধিকার থেকে বঞ্চিত করে বিশ্বের ৪শ’ কোটি মানুষকে আরও ভাল জীবন মান অর্জনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এতে বলা হয়, দারিদ্র্য ও বঞ্চনার বিচারে এই এলাকার মানুষ প্রত্যাশা পূরণের বহূ দূরত্বে অবস্থান করছে। এ এলাকার মানুষের আয় বিশ্বের মানুষের গড় আয়ের অর্ধেকেরও কম এবং উন্নয়নশীল দেশের চেয়েও কম। দক্ষিণ এশিয়ার এক তৃতীয়াংশ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করে। শিক্ষার হার এবং বিদ্যালয়ে অন্তর্ভুক্তিও কম। ৪০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ নিরক্ষর। স্কুলগামী বয়সের মাত্র অর্ধেক শিশু দক্ষিণ এশিয়ায় বিদ্যালয়ে অন্তর্ভুক্ত হয়। স্বাস্থ্য পরিস্থিতিও খারাপ। জনসংখ্যার এক পঞ্চমাংশ অপুষ্টি আক্রান্ত। শিশুমৃত্যুর হার ও যক্ষা রোগীর সংখ্যাও বেশি।
সেইলস্-এর পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ড. কামাল বলেন, ২০১৬ সন থেকে জাতিসংঘের অধীনে টেকসই উন্নয়ন উদ্দেশ্যকে বিবেচনায় নিয়ে বিশ্ব নতুন উন্নয়ন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবে। একই সময়ে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা ও বিশ্বব্যাংক সার্বজনীন সামাজিক সুরক্ষা এবং ন্যায়পর উন্নয়ন ও সুষম প্রবৃদ্ধির জন্য সমন্বিত কর্মসূচি গ্রহণ করবে। এ সময় সেইলস্, ব্র্যাক, সেন্টার ফর সোশ্যাল জাস্টিস, সেন্ট্রাল ইউরোপীয়ান ইউনিভার্সিটি, নামাতি, গ্লোবাল পলিসি একাডেমি এবং ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনস্ যৌথভাবে জনগণকে আইনগতভাবে বাস্তবিক অর্থে ক্ষমতায়িত করার উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম বলেন, জনগণকে তার আইনগত অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা এবং নাগরিকের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা রাষ্ট্র ও সরকারের অপরিহার্য দায়িত্ব। রাষ্ট্রের সহায়তা ছাড়া দুঃস্থ নাগরিকের পক্ষে আইনগত অধিকার অর্জন করা সম্ভব নয়। এই সহায়তা নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্রের কোন দয়া নয়, দায়িত্ব। প্যারালিগালকর্মীদের তিনি জনগণের বন্ধুু বলে আখ্যায়িত করেন। বিশেষ করে, দুঃস্থ, আইন-সহায়তা বঞ্চিত, দরিদ্র অসহায় অসচেতন জনগণের। আইনজীবীদের অনুপস্থিতিতে আইন-সহায়তাকারীরা আইনী পরামর্শ দিয়ে নাগরিকের আইনগত অধিকার অর্জনে সহায়তা করে। বাংলাদেশের মত দেশে প্যারালিগালকর্মীদের ভূমিকাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি উল্লেখ করেন। প্রফেসর ফুয়াদ হাসান মল্লিক নিরক্ষর দরিদ্র জনসাধারণের আইনী অধিকার অর্জনে এই উদ্যোগ সফল হবে বলে আশা করেন। অনুষ্ঠানে সেইলস্ পরিচালনা পরিষদের সদস্য ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপারসন স্যার ফজলে হাসান আবেদ, প্রফেসর জামিলুর রেজা চৌধুরী, ড. শামসুল বারী, সাবেক এটর্নি জেনারেল এডভোকেট সালাহউদ্দিন আহমদ ও ড. শরীফ ভুঁইয়া এবং ড. হামিদা হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনস্, ভারতের সেন্টার ফর সোশ্যাল জাস্টিস এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় ২৮ জুন থেকে ২ জুলাই ব্র্যাক সিডিএম, সাভারে অনুষ্ঠিত এই প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার এবং নেপালের ২১ জন মানবাধিকার ও আইন সহায়তাকর্মী অংশ নিয়েছেন। সমাপ্তি অধিবেশনে প্রত্যেক দেশের একজন প্রশিক্ষণার্থী তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন।