দক্ষিণ আফ্রিকায় অমৃতার ভয়ংকর ১৮ ঘণ্টা
দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গ বিমানবন্দরে ১৮ ঘণ্টা আটক থাকার পর দেশে ফিরেছেন নবাগত চিত্রনায়িকা অমৃতা খানসহ বাংলাদেশী তারকারা। গত ৬ জানুয়ারি মারুফ আহমেদ রিজভী পরিচালিত ‘মিশন আফ্রিকা’ চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের জন্য এক মাসের সফরে দক্ষিণ আফ্রিকা রওয়ানা হয়েছিলেন চিত্রনায়ক রুবেল, ইমন, টিভি অভিনেতা সিদ্দিকুর রহমান ও চিত্রনায়িকা অমৃতা খানসহ ২৯ জনের ইউনিট।
তাদের সবাইকে অবৈধভাবে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রবেশের অভিযোগে জোহানেসবার্গ বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে আটক করা হয়। পরে তারা নিজেদের খরচে দেশে ফিরে আসেন। এই ঘটনার জন্য ছবিটির প্রযোজক মশিউর রহমান ও পরিচালক রিজভীকে দায়ী করেছেন চিত্রনায়িকা অমৃতা খান।
সাংবাদিকদের কাছে অমৃতা শুনিয়েছেন সেই ভয়ংকর ১৮ ঘণ্টার কাহিনী। অমৃতা বলেন, ‘এই ঘটনা আমার জন্য খুবই বিব্রতকর ও অসম্মানজনক। পুলিশ আমাদেরকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে ১৮ ঘণ্টা আটক করে রাখে। ঘটনার সময় প্রযোজক-পরিচালক কারো সহযোগিতা আমরা পাইনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মাফিয়ার সঙ্গে যুক্ত আছি এমন অভিযোগও আনা হয়। এ সময় পরিচালক-প্রযোজক কেউই আমাদের পাশে এসে দাঁড়াননি। আমরা কেউই জানতে পারিনি যে চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের নামে অবৈধভাবে কিছু মানুষকে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রবেশের চেষ্টা করা হচ্ছে।’
আটক ২৯ জন বাংলাদেশীর মধ্যে ১০ জন ছিলেন চলচ্চিত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বাকীদেরকে চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের নামে দক্ষিণ আফ্রিকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। এ বিষয়ে অমৃতা বলেন, ‘আমরা কেউ আসলে ব্যপারটা বুঝতে পারিনি। দুবাই এয়ারপোর্ট থেকে বাকী বাংলাদেশীরা আমাদের সঙ্গে বিমানে উঠেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে গিয়ে জানতে পারি তারা আমাদের ইউনিটের সদস্য। তখন পরিচালক-প্রযোজকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদেরকে পাইনি। আমাদেরকে ১৮ ঘন্টা বিমানবন্দরেই বসিয়ে রাখা হয়। এদিকে কেউ কেউ দেশে ছড়িয়েছেন আমাদেরকে জেলে রাখা হয়েছে। সেটা ঠিক নয়। আমরা জেলে ছিলাম না। বিমানবন্দরেই আটক ছিলাম।’
পরে দেশে ফিরে এলেন কিভাবে?— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিমনাবন্দর থেকেই আব্বুকে ফোনে বিস্তারিত জানাই। তিনি আফ্রিকায় বাংলাদেশী দূতাবাসে যোগাযোগ করেন। দূতাবাস থেকে লোকজন এসে আমাদেরকে দেশে ফিরে আসার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেন।’
এই ঘটনার জন্য চলচ্চিত্রটির প্রযোজক-পরিচালককেই দায়ী করেন অমৃতা। তিনি বলেন, ‘পুরো ঘটনার জন্য প্রযোজক মশিউর রহমান ও পরিচালক রিজভী দায়ী। তারা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এই কাজটি করতে চেয়েছিলেন। আমরা কিছুই বুঝতে পারিনি। আমরা আসলে পরিস্থিতির শিকার।’
এই বিষয়ে জানতে পরিচালক মারুফ আহমেদ রিজভীর সঙ্গে সাংবাদিকরা যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, “ভাই আমি এখন কুয়াকাটায় আছি। আসলে এই বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আর দক্ষিণ আফ্রিকায় দুটি চলচ্চিত্রের শুটিং হওয়ার কথা ছিল। ৬ জানুয়ারি আহমেদ আলী মণ্ডলের ‘প্রথম দেখা’ চলচ্চিত্রের ইউনিট গিয়েছিল। ইমন সেই সিনেমার নায়ক। আমার সিনেমার নায়ক নিরব।”
অমৃতা খান তো আপনার সিনেমার নায়িকা?— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে রিজভী বলেন, ‘অমৃতা আমার সিনেমার নায়িকা ছিলেন, এটা সত্য। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়ার বিষয়টি তো পুরোপুরি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করেছে। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে আমাকে বলা হয়েছে একসঙ্গে সবার টিকিট পাওয়া যায়নি। পরের দিন নিরবসহ আমাদের আরেকটা টিম যাবে। পরে আমার হাতে এখন পর্যন্ত কোন টিকিট দেওয়া হয়নি। আমি আসলে আদম পাচারের বিষয়টির সঙ্গে যুক্ত নয়। এটা পুরোপুরি প্রযোজকের বিষয়। এই বিষয়ে আপনি প্রযোজকের সঙ্গে কথা বলেন।’
মিশন আফ্রিকা চলচ্চিত্রের প্রযোজক মশিউর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি অসুস্থ, এখন এই বিষয়ে কথা বলতে পারছি না। আমার হার্ট ব্লক হয়ে আছে। ডাক্তার কথা না বলতে পরামর্শ দিয়েছেন। আমি এই বিষয়ে পরে কথা বলব।’
এ দিকে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, দক্ষিণ আফ্রিকায় যাওয়ার আগে ঢাকা বিমানবন্দরেও এই ইউনিটকে আটকে দেওয়া হয়েছিল। পরে এফডিসি ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কাগজপত্র দেখিয়ে তারা পুরো ইউনিট নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা যান।
সেখানে আরও বলা হয়, কয়েকমাস আগে একই নামে (মিশন আফ্রিকা) আরও একটি ছবির শুটিংয়ের জন্য আহমেদ আলী মণ্ডল নামের একজন পরিচালক দক্ষিণ আফ্রিকায় ৩০ জনের একটি ইউনিট নিয়ে প্রবেশ করেছিলেন। সেখান থেকে কয়েকজন ফিরে আসলেও বাকীরা দক্ষিণ আফ্রিকায় থেকে যায়।
প্রসঙ্গত ‘মিশন আফ্রিকা’ ছবিটির ইউনিটে অভিনেতা নিরবেরও থাকার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ বিয়ে করে আত্মগোপনে রয়েছেন তিনি। পরের সপ্তাহেই নিরবের যাওয়ার কথা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকায়।