তুরস্কের সামরিক অভিযানে বিব্রত যুক্তরাষ্ট্র
তুরস্কের সামরিক অভিযানে বিব্রত যুক্তরাষ্ট্র
সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় আফরিন প্রদেশে কুর্দি গেরিলাদের বিরুদ্ধে চলমান সামরিক অভিযান বন্ধ করতে তুরস্কের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আমেরিকা। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের প্রধান মুখপাত্র ডানা হোয়াইট বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেছেন, তুরস্ক হচ্ছে আমাদের মিত্র দেশ কিন্তু চলমান ইস্যুটি বিব্রতকর এবং দায়েশ সন্ত্রাসীদেরকে যারা পরাজিত করেছে আমরা তাদের প্রতি সমর্থন দিচ্ছি।
ন্যাটোর একমাত্র মুসলিম সদস্য তুরস্ক গত সপ্তাহে সিরিয়ার কুর্দি গেরিলা পিপল’সপ্রোটেকশন ইউনিট বা ওয়াইপিজি’র বিরুদ্ধে ‘অপারেশন অলিভ ব্রাঞ্চ’ নামে একটি সামরিক অভিযান শুরু করেছে। আংকারা এ গেরিলা গোষ্ঠীকে সন্ত্রাসী মনে করে এবং তুরস্কের কুর্দি গেরিলা সংগঠন পিকেকে’র সঙ্গে এর সম্পর্ক রয়েছে বলে অভিযোগ করে আসছে।
কিন্তু আমেরিকা দাবি করছে, সিরিয়ায় উগ্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দায়েশের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ওয়াইপিজি অত্যন্ত কার্যকর শক্তি এবং কুর্দি গেরিলাদেরকে আমেরিকা অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়েছে। যখন আমেরিকার বিরুদ্ধে দায়েশ সৃষ্টি ও তাদেরকে অস্ত্র এবং প্রশিক্ষণ দেয়ার প্রচুর তথ্য-প্রমাণ রয়েছে তখন পেন্টাগনের মুখপাত্র এমন কথা বললেন।
সংবাদ সম্মেলনে ডানা হোয়াইটের পাশাপাশি মার্কিন জয়েন্ট স্টাফের পরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল কেনেথ ম্যাকেঞ্জি বলেন, আমরা সতর্কতার সঙ্গে ওয়াইপিজি-কে অস্ত্র দিয়েছি যাতে এসব অস্ত্র ভুল জায়গায় না যায় এবং বিষয়টি নিয়ে আমরা তুরস্কের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছি।
তিনি আরো বলেন, তুরস্কের যে উদ্বেগ সেটা যৌক্তিক কিন্তু আমরা চাইছি সিরিয়ার যে এলাকা দায়েশ মুক্ত হয়েছে তা ওয়াইপিজি’র নিয়ন্ত্রণে থাকুক। এটা এমন একটা বাহিনী যা সম্পূর্ণভাবে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছে এবং ওয়াইপিজি মোটেই সীমান্তরক্ষী বাহিনী নয়।
ম্যাকেঞ্জি বলেন, আমরা তুরস্কের জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টি ঠিক রাখার উপায় নিয়ে কাজ করছি। আপনারা যাই বলেন না কেন আমেরিকা ও তুরস্কের সেনা কমান্ডাররা সিরিয়া সীমান্তে একটি ‘নিরাপদ অঞ্চল’ গঠন করার বিষয়ে আলোচনা করেছেন। বহু বছর ধরে বিষয়টি নিয়ে আমরা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেছি তবে এখনো তা চূড়ান্ত হয় নি। আমাদের কমান্ডাররা এখনো বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন। যদিও এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে তবে সম্ভবত একটা মতৈক্য হবে।
ট্রাম্প-এরদোগান ফোনালাপের খবর সঠিক নয় : তুরস্ক
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে ফোনালাপ সম্পর্কে হোয়াইট হাউজের যে বিবৃতি প্রকাশ হয়েছে, সেটি সঠিক নয় বলে জানিয়েছে তুরস্ক। এরদোগানের সাথে ফোনালাপে ট্রাম্পের এই অবস্থান প্রতিফলিত হয়নি বলে জানিয়েছে আঙ্কারা। হোয়াইট হাউজ থেকে এক বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছিল, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিরিয়ায় তুরস্কের সামরিক অভিযান বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন এবং মার্কিন ও তুরস্কের সেনাদের সংঘর্ষে জড়িত না করার বিষয়ে হুঁশিয়ারি জানিয়েছেন।
সিরিয়ার আফরিনে তুরস্কের স্থলবাহিনীর অভিযান পঞ্চম দিনে গড়িয়েছে। তুর্কি বাহিনীর ল্য যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত কুর্দি ওয়াইপিজি বাহিনীকে উৎখাত করা। ওয়াইপিজিকে কুর্দি বিদ্রোহীদের মিত্র হিসেবে বিবেচনা করে তুরস্ক। ওই কুর্দিরা কয়েক দশক ধরে তুরস্কের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম করছে।
তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান জানিয়েছেন, তুরস্কের এই সামরিক অভিযান মানবিজ পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। মানবিজেও কুর্দি যোদ্ধারা অবস্থান করছে। এতে করে সিরিয়ায় মার্কিন সেনা ও তাদের সমর্থিত বিদ্রোহীরা আরো সঙ্কটে পড়তে পারে। এরদোগানের সাথে ফোনালাপ করার মধ্যদিয়ে তুরস্কের অভিযান বন্ধের জন্য সর্বশেষ চেষ্টা চালালেন ট্র্রাম্প।
ফোনালাপে তিনি উভয় দেশের বাহিনীর সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকির কথা উল্লেখ করেছেন বলে হোয়াইট হাউজের এক বিবৃতিতে জানানো হয়। এতে বলা হয়, বেসামরিক নাগরিকদের মৃত্যু এড়াতে সামরিক পদপে কমিয়ে আনা এবং সহিংস পরিস্থিতি অবসানের জন্য তিনি (ট্রাম্প) তুরস্কের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তুরস্কের প্রতি তিনি আহ্বান জানিয়েছেন। এমন কোনো পদপে না নিতে যাতে করে তুর্কি ও মার্কিন সেনাদের সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে।
তুরস্কের একটি সূত্র জানিয়েছে, হোয়াইট হাউজের বিবৃতিতে দুই নেতার ফোনালাপের সময় ট্রাম্পের কথাগুলো সঠিকভাবে উঠে আসেনি। সূত্র জানায়, আফরিনে চলমান সামরিক অভিযানে সহিংসতা বৃদ্ধির ঘটনায় কোনো উদ্বেগের কথা আলোচনা করেননি ট্রাম্প। দুই নেতার অপারেশন অলিভ ব্রাঞ্চ নিয়ে আলোচনা ছিল শুধু মতবিনিময়। ফোনালাপের বিষয়ে তুর্কি প্রেসিডেন্টের দফতর থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সিরিয়ার সর্বশেষ পরিস্থিতি এবং তুরস্কের অপারেশন অলিভ ব্রাঞ্চ নিয়ে এরদোগান ও ট্রাম্প মতবিনিময় করেছেন।