তীব্র অনিশ্চয়তার সুতোয় ঝুলছে ভারত ও আফগানিস্তানের মধ্যে রফতানি ও আমদানি বাণিজ্য। দু’দেশের মধ্যে দেড় শ’ কোটিরও বেশি ডলারের বাণিজ্যের ভবিষ্যৎ একেবারেই অন্ধকারে।
তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পরই দিল্লিসহ ভারতের প্রায় সর্বত্র শুকনো ফলের বাজারদর আকাশ ছুঁয়েছে। টাটকা ফলের দামও বেড়ছে মাত্রাছাড়া হারে। হিং, এলাচ, গরম মশলার বাজারের অবস্থাও তথৈবচ। আখরোট, কাজুবাদাম, কিসমিসের কথা না বলাই ভালো।
ওদিকে ভারতের পোশাক, ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম, সিমেন্ট, চিনি, কম্পিউটারের যে বিশাল বাজার ছিল কাবুলসহ গোটা আফগানিস্তানে, তা-ও থমকে গিয়েছে। ওইসব পণ্যে বোঝাই হাজার হাজার ট্রাক সারি ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে ওয়াঘা সীমান্তের এপারে। ভারতীয় পণ্যের একটি বড় অংশ এত দিন ওয়াঘা সীমান্ত পেরিয়েই ঢুকে যেত আফগানিস্তানে।
তীব্র অনিশ্চয়তার সুতোয় ঝুলছে ভারত ও আফগানিস্তানের মধ্যে রফতানি ও আমদানি বাণিজ্য। দু’দেশের মধ্যে দেড় শ’ কোটিরও বেশি ডলারের বাণিজ্যের ভবিষ্যৎ একেবারেই অন্ধকারে।
আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ আবারো তালেবানের হাতে যাওয়ার পর থেকে অন্যান্য বিষয়ের সাথে দিল্লির উদ্বেগ লাফিয়ে বেড়ে গিয়েছে দেশটির সাথে ভারতের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে। ভারতের রফতানি বাণিজ্যের একটি বড় অংশ আফগানিস্তানের সাথে। তাই কাবুল আবারো তালেবানের কব্জায় চলে যাওয়ায় এখন সামনে বিপদ দেখছে দিল্লি।
২০০১ সালে আমেরিকার সেনাবাহিনী আফগানিস্তানে মোতায়েন হওয়ার পর থেকেই আফগানিস্তানের সাথে ভারতের রফতানি ও আমদানি বাণিজ্য বেড়েছিল লাফিয়ে লাফিয়ে। ২০১৯-’২০ অর্থবছরে সেই বাণিজ্যের পরিমাণ পৌঁছায় দেড় শ’ কোটি ডলারে। গত অর্থবছরে তা আরো বেড়ে যায়।
ভারতের বাজারে শুকনো ফল আর গরম মশলার যে চাহিদা, তার ৮৫ শতাংশই আমদানি করা হতো আফগানিস্তান থেকে। টাটকা ফল তো আসতই, আফগানিস্তান থেকে আসত আখরোট, কাজুবাদাম, আঞ্জির, অ্যাপ্রিকট, সবুজ ও কালো রঙের কিসমিস, সুগন্ধী হিং এবং ডুমুরের মতো ট্রাকের পর ট্রাকভর্তি শুকনো ফলও। আর ভারত আফগানিস্তানে মূলত রফতানি করত পোশাকাদি, জীবনদায়ী ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় ওষুধ, চিকিৎসার সরঞ্জাম, কম্পিউটার, হার্ডওয়্যার পণ্যাদি, সিমেন্ট, চিনি এবং কৃত্রিম ফাইবার।
দু’দেশের মধ্যে এই আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের দাঁড়িপাল্লাটা ঝুঁকে থাকত ভারতেরই দিকে। আফগানিস্তান থেকে আমদানির চেয়ে সে দেশে ভারতীয় পণ্যের রফতানিই হতো বেশি।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারি পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, গত ৫ বছরে আফগানিস্তানে ভারতের রফতানির পরিমাণ বেড়েছিল অন্তত ৬৩ শতাংশ। ২০২০-’২১ অর্থবছরে ভারত ৮২ কোটি ৫০ লাখ ডলার মূল্যের পণ্যাদি রফতানি করেছিল আফগানিস্তানে। আর আফগানিস্তান থেকে সেই সময় ভারতে এসেছিল ৫০ কোটি ৯০ লাখ ডলার মূল্যের পণ্যাদি।
তবে শুধুই যে ভারতের রফতানির পরিমাণ বেড়েছিল তা-ই নয়, ২০১৬-’১৭ অর্থবছরের হিসাবে আফগানিস্তান থেকে ভারতে আমদানির পরিমাণও বেড়েছিল ৭৪ শতাংশ। তালেবানের সাথে ভারতের এখনো কোনো বাণিজ্য চুক্তি হয়নি। তাই যতই দিন যাচ্ছে দু’দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় ততই তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠছে।
এ ছাড়াও আফগানিস্তানের পুনর্গঠন ও উন্নয়নের জন্য ২০০১ সাল থেকে ভারত সে দেশে গত ২০ বছরে বিনিয়োগ করেছিল ৩০০ কোটি ডলার। তার মধ্যে যেমন ছিল আফগানিস্তানের সাথে যৌথ ভাবে ইরানের চাবাহার সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, তেমনই ভারত বিনিয়োগ করেছিল আফগানিস্তানের সড়কপথ নির্মাণ ও উন্নয়ন, বাঁধ নির্মাণ, বিদ্যুতের পরিবাহী লাইন বহু দূর পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়া, স্কুল-হাসপাতাল নির্মাণ ও উন্নয়নের মতো মোট ৪০০টি প্রকল্পে।
সেগুলোর ভবিষ্যত নিয়েও এখন গভীর উদ্বেগে দিল্লি।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা