তফসিলের পর আন্দোলন জোরদারের পরিকল্পনা বিএনপি’র
২৮শে অক্টোবর মহাসমাবেশে সংঘর্ষের পর বিএনপি’র সিনিয়র নেতাদের অনেককে গ্রেপ্তারের পর পাঠানো হয়েছে কারাগারে। পুলিশি অভিযানের কারণে অনেকে আছেন কৌশলী অবস্থানে। রাজপথে চলমান কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছেন দলটির মাঝারি সারি ও মাঠপর্যায়ের নেতারা। তবে তফসিলকে ঘিরে নানা পরিকল্পনা করছে দলটি। চলমান কর্মসূচি অব্যাহত রেখে আন্দোলন আরও জোরদারের চিন্তা করছে দলটির হাইকমান্ড। চতুর্থ দফায় ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি শেষ হচ্ছে মঙ্গলবার সকাল ৬টায়। নতুন কর্মসূচি চূড়ান্ত করতে গতকাল রাতে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার বিরতি দিয়ে বুধবার থেকে পঞ্চম দফায় ফের ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা দিতে পারে বিএনপি। এদিকে দলীয় সূত্র জানিয়েছে, তফসিল ঘোষণা হলে অবরোধের সঙ্গে নতুন কর্মসূচি যোগ হতে পারে। নির্বাচন কমিশন অভিমুখে গণমিছিল কিংবা ঘেরাও কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে।
এদিকে তফসিলের পর দলের সিনিয়র-জুনিয়র সব সারির নেতাদের একযোগে মাঠে নামার নির্দেশনা দেয়া হবে। এ ছাড়া জেলায় জেলায় আরও সক্রিয় আন্দোলন গড়ে তোলার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মূলত ঢাকাকে সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখতে চায় তারা। কারণ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত আরও প্রায় দুই মাস সময় রয়েছে। এই দীর্ঘ সময় ঢাকা বিচ্ছিন্ন থাকলে দেশের অর্থনীতি অচল হয়ে যাবে। এতে সরকারের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়বে। বিএনপি’র নীতি-নির্ধারণী ফোরামের এক নেতা মানবজমিনকে জানিয়েছেন, তফসিলকে ঘিরে আন্দোলন আরও জোরদারের জন্য নানা পরিকল্পনা চলছে। যুগপৎ আন্দোলনে সমমনা শরিক দলগুলোর সঙ্গে কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
জেলায় জেলায় আরও সক্রিয় আন্দোলন গড়ার নির্দেশনা: এদিকে রাজধানীর পাশাপাশি জেলায় জেলায় চলমান আন্দোলন কর্মসূচি আরও জোরদার করার নির্দেশনা দিয়েছে বিএনপি’র হাইকমান্ড। জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের গ্রেপ্তার এড়িয়ে মাঠে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর যুবদলের এক শীর্ষ নেতা জানান, গত কয়েক দিন ধরে জেলার নেতাদের বেশি সময় দিচ্ছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। জেলার নেতাদের সক্রিয় করার চেষ্টা করছেন তিনি। আন্দোলন জোরদার করতে নানা নির্দেশনা দিচ্ছেন। বিএনপি’র হাইকমান্ডের এই নির্দেশনা পেয়ে গতকাল রাজধানীর অন্তত অর্ধশতাধিক স্পটে অবরোধের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। এ ছাড়া জেলায় জেলায় অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশি সংখ্যক নেতাকর্মীদের অবরোধের সমর্থনে মিছিল করতে দেখা গেছে। এতদিন যারা গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে ছিলেন তারাও ঝুঁকি নিয়ে মাঠে থেকে অবরোধ কর্মসূচি বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
এবার সমমনা শরিক দলের নেতাদের গ্রেপ্তার: ওদিকে বিএনপি’র সিনিয়র নেতাদের পর এবার গ্রেপ্তার করা হচ্ছে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা শরিক দলের নেতাদের। গতকাল অবরোধের সমর্থনে মিছিল বের করলে জনতার অধিকার পার্টির চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলামকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
এর আগে শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সামনে থেকে ১২ দলীয় জোটের প্রধান সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদাকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। গতকাল তাকে আদালতে হাজির করে ৬ দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়। ওদিকে গতকাল আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি) বিজয়নগর কার্যালয় ঘিরে রাখে র্যাবের একাধিক গাড়ি। এদিকে সারা দেশে বিএনপি নেতাদের গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গতকালও দলটির ৩৬৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলা দেয়া হয়েছে ১৩টি। এ ছাড়া গত ২৮শে অক্টোবরকে ঘিরে গতকাল পর্যন্ত সারা দেশে বিএনপি’র ১০ হাজার ৭৭০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলা দায়ের হয়েছে ২৩৩টি। এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু মানবজমিনকে বলেন, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান এহসানুল হুদা ও পিআরপি চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলামকে সাদা পোশাকে ডিবি তুলে নিয়ে গেছে।
এসব গ্রেপ্তার ও আটকের ঘটনা প্রমাণিত হয় সরকার অস্থির হয়ে গেছে এবং বিরোধী দলগুলোকে ভীতির মধ্যে রেখে তারা একতরফা নির্বাচন করতে চায়। বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকার অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। হত্যা, গুম, খুন, মিথ্যা মামলা, গ্রেপ্তারের মাধ্যমে গোটা দেশে একটি ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। আন্দোলনরত বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের না পেলে তাদের পিতা-মাতা, পুত্র-সন্তান, ভাই-বোন এবং আত্মীয়স্বজনদেরও ধরে নিয়ে অদৃশ্য করে রাখছে। তুলে নিয়ে গিয়ে অস্বীকার করা হচ্ছে। কিন্তু এসব করে গণতন্ত্রকামী মানুষের জোয়ার ঠেকাতে পারবে না। জনগণের বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, সরকার যদি ভেবে থাকে যে নির্বাচন সিডিউল ঘোষণা করলেই বাংলাদেশে রাজনৈতিক সমস্যার সামধান হয়ে যাবে তাহলে সেটা ভুল ধারণা। আজকে এদেশে যে রাজনৈতিক সাংঘর্ষিক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তার একক দায়িত্ব সরকারের ২৮শে অক্টোবরের আচরণ। সরকার যদি ভেবে থাকে উস্কানি দিয়ে এই অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে একতরফা সিডিউল ঘোষণা করে তারা একদলীয় নির্বাচন করে ফেলবে সেটা একটা ধোঁয়াশা মাত্র। বিগত ১০ বছরে পদ্মা-যমুনায় অনেক জল গড়িয়েছে। এখন দেশে-বিদেশে মেকি গণতন্ত্রের ফাঁকা বুলি দিয়ে আর সবাইকে বোকা বানানো যাবে না। কাজেই সরকার তাড়াহুড়া করে একতরফা সিডিউল ঘোষণা দিলে সেটা হবে তাদের দ্বিতীয় মারাত্মক রাজনৈতিক ভুল।