তথ্য সেবা পাল্টে দিয়েছে জীবন চিত্র
প্রেমানন্দ ঘরামী, বরিশাল ॥ “তথ্য সেবা হেইডা আবার কি, আগে বুঝিনায়। তয় এ্যাহন দেহি এহ্যানে সব আছে। মোর পোলায় বিদাশে থায়ে। এই কেন্দ্রে আইসা অর ছবি দেহি আর মোরা অর লগে কথা কই। মোর পোলায়ও নাকি মোগো ছবি দেখতে পায়। এত সুযোগ-সুবিধা আগে কোতায় আছেলে”। বরিশালের গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য সেবা কেন্দ্রের সেবা পেয়ে কথাগুলো বলছিলেন গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়নের জঙ্গলপট্টি গ্রামের আবুল কালাম।
এ কথাশুধু তার একারই নয় একইভাবে জানালেন, ওই কেন্দ্রে তথ্য সেবা পাওয়া দাদন আলী শিকদার, মাহিলাড়া গ্রামের রবিন দাস, বেজহার গ্রামের আনোয়ার হোসেন, মিন্টু শিকদার, মনির হোসেন, সোহেল হাওলাদার, মজিবুর রহমান হাওলাদারসহ অনেকেই। সময়ের ব্যবধানে রাতারাতি বদলে গেছে গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়নবাসীর জীবন চিত্র। তারা এখন প্রতিদিন ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রে গিয়ে নিচ্ছেন তথ্য প্রযুক্তির সেবা। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহনের পর ইউনিয়ন তথ্য সেবাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ লক্ষ্যে ২০১০ সনের ১১ নবেম্বর দেশের ৪ হাজার ৫’শ ১টি ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপন করা হয় ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্র। তারই ধারাবাহিকতায় বরিশাল জেলার প্রতিটি ইউনিয়নে এ সেবাকেন্দ্রের সুযোগ সুবিধা থাকা সত্বেও কোন ইউনিয়নই এখন পর্যন্ত তেমন কোন সাড়াযাগাতে পারেনি। এরইমধ্যে মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের তরুন চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলুর প্রচেষ্ঠায় খুব স্বল্প সময়ে তথ্য সেবা কেন্দ্রের সেবা দানের মাধ্যমে মাহিলাড়া ইউনিয়নের তথ্য সেবা কেন্দ্রটি পুরো জেলায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ফলশ্র“তিতে জেলার ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলায় অংশগ্রহন করে চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পদকপ্রাপ্ত হয়েছেন।
বরিশালের গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদ হবে দেশের মধ্যে প্রথম ডিজিটাল মডেল ইউনিয়ন এ প্রত্যয় ব্যক্ত করে সর্বক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে বেশ স্বল্পসময়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন তরুন চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু। ইতোমধ্যে ডিজিটাল চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি স্বর্ণ পদকেও ভূষিত হয়েছেন। মালেশিয়ার উন্নত তথ্য প্রযুক্তিকে চেয়ারম্যান পিকলু স্বচক্ষে পরিদর্শন করে সে অনুযায়ী সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। যে কারনে সম্প্রতি মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য সেবা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন জনপ্রশাসন সচিব আব্দুস সোবাহান সিকদার, সাউথ ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশ রুর্যাল ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট ও প্রকল্পের সিনিয়র এ্যাডভাইজার ওয়াল্ডল্যান্ড রিসোর্স সাইন্স জাপানের প্রতিনিধি তশিফুমি সেরিজাওয়া, সাউথ ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশ রুর্যাল ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের ইন্টরন্যাশনাল বিশেষজ্ঞ ড. এআরএম মমতাজউদ্দিন, বে-সরকারী মানবিক সংস্থা পদক্ষেপের চেয়ারম্যান মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান। পরিদর্শন শেষে জনপ্রশাসন সচিব বলেন, তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে শিক্ষার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি হয়েছে। এধারা অব্যহত থাকলে অতিশীঘ্রই দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হবে। সচিব মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য সেবার কেন্দ্রের মান দেখে ভূয়শী প্রসংশা করেন।
মাহিলাড়া গ্রামের আবুল মোল্লা জানান, এ তথ্য কেন্দ্রে মানুষের সবচেয়ে বেশি চাহিদা স্বাস্থ্য, কৃষি পরামর্শ, জমির পর্চা-খতিয়ান সংক্রান্ত তথ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ফরমসহ বিভিন্ন বিষয়ে সরকারি আবেদন ফরম নিতে আসেন অনেকেই। এছাড়া ই-মেইলে যোগাযোগ, ইন্টারনেটে কথা বলার পাশাপাশি প্রিয়জনের ছবি দেখতে পারছেন প্রবাসীদের স্বজনেরা। কম্পিউটার কম্পোজ, প্রিন্ট প্রশিক্ষণ, ছবি তোলা, ফটোকপি, পরীক্ষার ফলাফল জানা নাগরিক সনদ, জন্ম ও মৃত্যুর নিবন্ধন এবং মোবাইল ব্যাংকিং, স্ক্যানার, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের সুবিধা পাচ্ছেন এ তথ্য সেবা কেন্দ্রে।
তথ্য সেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, এখানে প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩০ জন সেবা নিয়ে থাকেন। সকাল নয়টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ইউনিয়নের মানুষকে সেবা দেয়া হয়। তাছাড়া প্রয়োজন অনুযায়ী ল্যাপটপ নিয়ে পরিষদের বাহিরে গিয়েও মানুষের সেবা দেয়া হয়।
এছাড়াও তরুন চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু প্রতি সপ্তাহে ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডের জনগনের সাথে ইউপি চেয়ারম্যানের জবাবদিহীতা মূলক ব্যতিক্রমধর্মী সভার আয়োজন করে ইতোমধ্যে পুরো দক্ষিণাঞ্চলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। ওইসব সভায় তিনি জনগনের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ও পরামর্শ নিয়ে ইউনিয়নের সার্বিক অবস্থার আলোচনা করেন। সভার মাধ্যমে চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন সেবার কথা জনগনের মাঝে তুলে ধরেন।
মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু জানান, বাণিজ্যিকভাবে যে সেবা স্থানীয়রা পায় তার চেয়ে ৫০ ভাগ কম খরচে ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য সেবা কেন্দ্র থেকে দেয়া হয়। তিনি আরো জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে ও তার সুফল প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে একজন কর্মী হিসেবে আমি কাজ করে যাচ্ছি মাত্র। এছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে বেকার-যুবক ও তরুন-তরুনীদের আত্মকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে বিনামূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, অসহায়-দুঃস্থ নারীদের আত্মকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে সেলাই প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা ও বিনামূল্যে সেলাই মেশিন বিতরণ, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ, শতভাগ স্যানিটেশন ব্যবস্থা, বেকার-যুবকদের মৎস্য চাষের ওপর প্রশিক্ষণ দিয়ে মৎস্য চাষ করিয়ে ইতোমধ্যে অনেকেই বেকারত্ব ঘোচাতে সক্ষম হয়েছেন। সরকারের বরাদ্দকৃত বয়স্ক ভাতা, বিধবা বা স্বামী পরিত্যক্তা দুঃস্থ মহিলা ভাতা, ভিজিডি, ভিজিএফ ও চল্লি¬শ দিনের কর্মসূচীসহ সরকারের গৃহীত বাস্তবমুখী বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা ও দারিদ্র্য কর্মসূচীর আওতায় মাহিলাড়া ইউনিয়নবাসী আজ সুফল পেতে শুরু করেছেন বলেও চেয়ারম্যান উল্লেখ করেন।
গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী জানান, উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে অধিকাংশ ইউনিয়নের তথ্য সেবা কেন্দ্র পরিচালনার ক্ষেত্রে কিছুটা ক্রটি বিচ্যুতি থাকলেও কেবলমাত্র মাহিলাড়া ইউনিয়নেই তথ্য সেবাকেন্দ্রের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে। এর কারন হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, প্রথমে চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত উদ্যোগে ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করার ফলেই ইউনিয়নবাসী এ সেবা সম্পর্কে অবগত হয়েছেন।