ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) তৃতীয় কার্যনির্বাহী সভা চলার সময় সেখান থেকে বেরিয়ে গেছেন সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) তৃতীয় কার্যনির্বাহী সভা চলার সময় সেখান থেকে বেরিয়ে গেছেন সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হক। তাঁর দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে ভর্তি ও ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) গোলাম রাব্বানীর পদে থাকার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় ‘ব্যক্তিগত আক্রমণের’ শিকার হয়ে সভা থেকে তিনি বের হতে বাধ্য হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার বিকেল চারটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত ডাকসু ভবনের সভাকক্ষে ডাকসুর তৃতীয় কার্যনির্বাহী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ডাকসুর সভাপতি অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান। ডাকসুর বর্তমান কমিটির প্রথম কার্যনির্বাহী সভা হয় ২৩ মার্চ, দ্বিতীয় সভাটি হয়েছিল ৩০ মে।
সভা সূত্রে জানা গেছে, সভায় আলোচনার একপর্যায়ে গত ফেব্রুয়ারিতে ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের মাস্টার অব ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট কোর্সে ছাত্রলীগের ৩৪ জন সাবেক ও বর্তমান নেতা-কর্মীকে ভর্তির সুযোগ দেওয়া, শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও নৈতিক স্খলনের অভিযোগে ছাত্রলীগের পদ হারানো ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানীর পদে থাকার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ভিপি নুরুল হক। এতে ডাকসুর সদস্য রাকিবুল ইসলাম ক্ষুব্ধ হয়ে নুরুল হকের দাম্পত্যজীবনের বিভিন্ন বিষয় উত্থাপন করে ‘ব্যক্তিগত আক্রমণ’ করেন। এর জেরে সভাকক্ষ থেকে বেরিয়ে যান নুরুল।
ভিপি নুরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিয়মবহির্ভূত ভর্তি ও জিএসের নৈতিক স্খলনের বিষয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করায় আমাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হয়। এ ধরনের অপমানজনক পরিস্থিতিতে আমি সভা থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য হয়েছি।’
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে নির্বাচিত ডাকসুর সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) সাদ্দাম হোসেন দাবি করেছেন, একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে নুরুল সভা শেষ হওয়ার ৩০ মিনিট আগেই চলে যান। বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সভার চেয়ে নুরুল ব্যক্তিগত প্রয়োজনকে বেশি গুরুত্ব দেন।
ধর্মভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ পরিষদের অলিখিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ধর্মভিত্তিক উগ্র সাম্প্রদায়িক যেকোনো সংগঠন এবং স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে বিতর্কিত ভূমিকা রাখা জাতীয় পার্টির ছাত্রসংগঠন জাতীয় ছাত্রসমাজ ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ। এবার বিষয়টি ডাকসুর গঠনতন্ত্রে সংযোজনের সুপারিশ করেছেন ভিপি নুরুল হকসহ ডাকসুর প্রতিনিধিরা।
এ বিষয়ে ভিপি নুরুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁরা আগে থেকেই নিষিদ্ধ। এখন ডাকসুর পক্ষ থেকে আমরা বিষয়টি সত্যিকার অর্থে কার্যকর করার আহ্বান জানিয়েছি। এ ছাড়া আমরা বিষয়টি ডাকসুর গঠনতন্ত্রে সংযোজনের কথা বলেছি।’
এজিএস সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘ডাকসুর গঠনতন্ত্রসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য আইন ও ধারাগুলোতে ধর্মভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ ঘোষণার জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আহ্বান জানিয়েছি।’
গণরুম থাকবে না
আবাসনসংকটের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা আবাসিক হলগুলোতে বৈধ আসন পান না। হলে থাকতে চাইলে তাঁদের ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের নিয়ন্ত্রণে থাকা গণরুমগুলোতে উঠতে হয়। সেখানে খারাপ পরিবেশে থেকে তাঁদের যেতে হয় ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের নিয়মিত রাজনৈতিক কর্মসূচিতে।
ডাকসুর সভায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণরুমব্যবস্থা উচ্ছেদের দাবি জানানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ডাকসুর সভাপতি মো. আখতারুজ্জামানও বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।
এ বিষয়ে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘নবীন শিক্ষার্থীদের আবাসনব্যবস্থাকে মানবিক করতে আমরা গণরুমব্যবস্থা বন্ধের কথা বলেছি। প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে একটি নির্দিষ্ট শতাংশ আসন বরাদ্দ এবং হলগুলোতে কোনো ছাত্রসংগঠনের কর্তৃত্ব নয়, প্রশাসনিকভাবে আসন বণ্টন ও পরিচালনা কার্যক্রমের কথাও বলেছি।’
এজিএস সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আমরা পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় চাই। সেটি যত দিন না সম্ভব হচ্ছে, তত দিন গণরুমের জীবনমান উন্নয়ন, গণরুমকে মানবিক ও বন্ধুরুম হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সেখানে বাঙ্ক বেড ও লকারের ব্যবস্থা, প্রশাসনিকভাবে ওয়াই–ফাইয়ের ব্যবস্থা ইত্যাদির কথা বলেছি। উপাচার্য বলেছেন, প্রাধ্যক্ষ কমিটির মাধ্যমে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা হবে।’
এ ছাড়া সন্ধ্যাকালীন কোর্সগুলোর বিষয়ে পর্যালোচনা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার সম্প্রসারণের বিষয়ে সভায় ডাকসুর পক্ষ থেকে প্রস্তাব তোলা হয়। সন্ধ্যাকালীন কোর্সগুলোর বিষয়ে উপাচার্য বলেছেন, এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গত মার্চে একটি কমিটি গঠন করেছে। ডাকসু প্রতিনিধিদের এ–সম্পর্কিত সুপারিশগুলো ওই কমিটির কাছে দিতে হবে।