ড্রোনের এক কারিগর
ড্রোনের এক কারিগর
যানজটহীন রাস্তা পাড়ি দেবে, তা যেন ভাবতেই পারেন না ঢাকার বাসিন্দারা। ‘গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস) প্রযুক্তির চালকবিহীন বিমান (ড্রোন) ব্যবহার করে যানজট সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।’ ঢাকার মিরপুরে নিজের গবেষণাগারে বসে এই কথা বলেন নাহিদ ফেরদৌস। বিষয়টি পরিষ্কার করেন তিনি। জানান, রাস্তায় প্রতি ২০০ মিটার দূরত্বে জিপিএসসহ ড্রোন রাখা যেতে পারে। দূর থেকে নিয়ন্ত্রিত এসব ড্রোন ট্রাফিক নিয়ে যেসব তথ্য সংগ্রহ করবে, সেগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনলাইন ডেটাবেইসে যুক্ত হবে। নাহিদ বললেন, ‘সরকার যদি এ বিষয়ে অনুমতি দেয়, প্রাথমিকভাবে পল্লবী থেকে মিরপুর পর্যন্ত তা আমি করে দেখাতে পারব, দুই মাসের মধ্যে। এ নিয়ে গবেষণার পাশাপাশি সে ধরনের ড্রোন আমি ইতিমধ্যে তৈরি করেছি।’
ড্রোন নিয়ে নাহিদ ফেরদৌসের অনেক পরিকল্পনার মধ্যে এটি একটি। ড্রোন তৈরি ও ড্রোন পরিচালনা নিয়ে গবেষণা করতে গিয়েই মাথায় আসে এসব পরিকল্পনা। নিজের বাসার একটি ঘরে তৈরি করেছেন গবেষণাগার। সেখানেই চলে তাঁর গবেষণা। শুরুটা ২০১৩ সালের শেষ দিকে। ঢাকার একটি কলেজে ইলেকট্রনিকসে ডিপ্লোমা করে ওই বছর ভর্তি হন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্পের অংশ হিসেবে চার মাসের চেষ্টায় যৌথভাবে তৈরি করেন ‘ড্যাফোডিল স্পাই কোয়াড কপটার-হেলিক্যাম’। এরপর আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। বন্ধুরা মিলে আবার তৈরি করেন ড্রোন। আলট্রাসনিক সেন্সর ব্যবহার করা সেটিতে, যেটির মাধ্যমে বের করা সম্ভব কত উচ্চতায় রয়েছে ড্রোনটি। তিন কেজি ওজন বহনে সক্ষম ওই ড্রোন এক হাজার মিটার উচ্চতা পর্যন্ত উড়তে পারে। তিন কিলোমিটার পর্যন্ত ড্রোনটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এটি বাতাসে স্থির দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। আর এ ড্রোন দিয়ে ২০১৪ সালে ঢাকার এমআইএসটি আয়োজিত ‘প্রথম জাতীয় অ্যারো-ডিজাইন প্রতিযোগিতা’র রোটারি উইং বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করে নাহিদের দল।
এরপর নাহিদ পুরোদমে মনোযোগ দেন নিজের ল্যাবে। এ ল্যাবে বসেই তৈরি করেন ফ্লাইট অনুশীলনের জন্য ড্রোন, অবজেক্ট অ্যাভয়েড সিস্টেম-সংবলিত ড্রোন, ইমেজ পোস্ট-প্রসেসিং ড্রোন, অ্যারিয়াল ভিডিও করার ড্রোন। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত বানিয়েছেন ১২টি ড্রোন। একেকটির একেক বৈশিষ্ট্য।
ইমেজ পোস্ট-প্রসেসিং ড্রোন ব্যবহার করে তোলা যায় ত্রিমাত্রিক (থ্রিডি) ছবি। তৈরি করা যায় মানচিত্রও। ড্রোনটিতে যুক্ত রয়েছে পাঁচ মেগাপিক্সেলের পাইলট ক্যামেরা। এ কারণে বেতার সংকেতের মাধ্যমে ৯০০ মিটার দূর থেকেও ঝকঝকে পরিষ্কার ছবি ও ভিডিওচিত্র পাঠাতে পারে ড্রোনটি। ইন্টারনেটে যুক্ত করা হলে এটি বিশ্বের যেকোনো স্থানেই ছবি পাঠাতে পারবে। নাহিদ ফেরদৌস বলেন, ‘ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ড্রোনটি ব্যবহার করে হাইডেফিনিশনে তোলা ছবি বিশ্লেষণ করে বের করা যাবে আটকে পড়া মানুষের অবস্থান। এ ছাড়া সংকেতের মাধ্যমে পাঠানো তথ্যকে থ্রিডি ছবিতেও পরিণত করা যাবে।’ অ্যারিয়াল ভিডিওর জন্য তৈরি ড্রোনটি ব্যবহার করা যাবে ওপর থেকে ভিডিও ধারণে।
ঠাকুরগাঁওয়ে জন্ম তাঁর। ২০০৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পান। ডিপ্লোমা পড়ার সময় রোবট বিজ্ঞান বিষয়ের বিভিন্ন কর্মশালায় অংশ নিতেন এক শিক্ষকের মাধ্যমে। সম্প্রতি যোগ দিয়েছেন সাগুফতা গ্রুপের আইটি বিভাগে। চাকরি, পড়াশোনার ফাঁকেই ড্রোন নিয়ে ল্যাবে চলে তাঁর কাজকর্ম। নাহিদ মনে করেন, ভবিষ্যতের পৃথিবী হবে ড্রোন-নির্ভর। কাজের প্রয়োজনে ড্রোন সহজলভ্য হবে। তখন জিপিআরএস প্রযুক্তির ড্রোন ব্যবহার করে জরুরি প্রয়োজনে পণ্য সরবরাহ করা হবে। মানবতার জন্যই ড্রোন বানাবেন—এমনই স্বপ্ন নাহিদের।