প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভূমির মালিকানা সুনির্দিষ্ট করার জন্য ভূমি বণ্টন ব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজ করতে হবে এবং এর ফলে পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যার সমাধান হবে। সমাজে এটা খুবই সাধারণ ঘটনা যে ভাইবোন উভয়েই একে অপরকে পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করেÑযার ফলে হামলা, হত্যা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তিনি বলেন, যদি একটি সঠিক ভূমি ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায়, তাহলে সমস্যার সমাধান হবে। শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার দেশ-বিদেশে অবস্থানরত সকল মানুষের জমির মালিকানা রক্ষার ব্যবস্থা নিয়েছে। আপনি দেশে এবং বিদেশে যেখানেই থাকুন না কেন-আপনার (দেশবাসী) সম্পত্তি আপনারই থাকবে। আমরা আপনার অধিকার সুরক্ষিত ও সুরক্ষার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছি। জমি সংক্রান্ত পরিষেবা পাওয়ার সময় জনগণকে কিছুতেই ঝামেলার সম্মুখীন করা যাবে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা একটি ডিজিটাল ল্যান্ড সিস্টেম তৈরি করছি বলে সমস্যাটি আর থাকবে না। আমাদের ভূমি মন্ত্রণালয়ের গৃহীত সাতটি উদ্যোগের প্রতিটি একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। প্রধানমন্ত্রী জনগণকে ঝামেলামুক্ত ও দ্রুত ভূমি সংক্রান্ত সেবা দিতে সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী ২০১৩-১৪ সালে তথাকথিত আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াতের দেশব্যাপী সহিংসতার কথা দেশবাসীকে মনে করিয়ে দেন। তখন তারা রাস্তায় যানবাহনে পেট্রোল বোমা ছুড়ে মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছিল এবং ছয়টি ভূমি অফিসসহ ৭০টি সরকারি কার্যালয়ের ক্ষতিসাধন করেছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব অফিসে হামলার ফলে সারা দেশে ভূমি অফিসগুলোর জরাজীর্ণ অবস্থার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল। তার সরকার আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা সংবলিত উন্নত উপজেলা ভূমি অফিস নির্মাণ করেছে। আজ আমি ৪০০টি উপজেলায় আধুনিক ভূমি অফিস উদ্বোধন করেছি। বিএনপি-জামায়াত চক্র জনগণের সম্পদ ধ্বংস করে আর আওয়ামী লীগ জনগণের কল্যাণে তৈরি করে। আমাদের একমাত্র লক্ষ্য জনগণের সেবা করা, আমাদের লক্ষ্য দেশবাসীর শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা। একটি আধুনিক, সময়োপযোগী ও ডিজিটালাইজড ভূমি ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য তার সরকারের পদক্ষেপের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার অনলাইন ভূমি নামজারি এবং কিউআর কোডসহ ডিসিআর ও ভূমিকর প্রদান ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে। তিনি বলেন, দেশবাসী ১৬১২২ নম্বরে কল করে এবং ষধহফ.মড়া.নফ সার্চ করে বিশ্বের যেকোনো স্থান থেকে নামজারি, খতিয়ান ও ভূমি উন্নয়ন কর প্রদানসহ ভূমি সংক্রান্ত সেবা পেতে পারেন। শেখ হাসিনা বলেন, ভূমি অফিসগুলো এ পর্যন্ত ১৩ লাখের বেশি ফোনকল পেয়েছেÑযার মধ্যে ৬৮০০টি কল বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তিদের কাছ থেকে এসেছে। তিনি বলেন, যে কেউ তার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ব্যবহার করে অনুসন্ধান করে তার জমির অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ব্যবস্থা চালু করার ফলে জনগণ দ্রুততম সময়ে জমি সংক্রান্ত সেবা পাচ্ছে। ভূমি ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থার সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজেশন খুব শিগগিরই সম্পন্ন করা হবে।
তিনি বলেন, আধুনিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের ফলে ভূমি সংক্রান্ত সেবা থেকে রাজস্ব আদায় বেড়েছে এবং এ খাত থেকে এ পর্যন্ত ৭৭০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে উৎপাদন বাড়াতে কৃষি ব্যবস্থায় যান্ত্রিকীকরণ করছে। বঙ্গবন্ধু ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমি করমুক্ত এবং দেশের স্বাধীনতার পরপরই কৃষকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব সার্টিফিকেট মামলা বাতিল করে ঘোষণা করেছিলেন, যে কেউ সর্বোচ্চ ১০০ বিঘা জমির অধিকারী হতে পারবে এবং অতিরিক্ত জমি ভূমিহীনদের বরাদ্দ করা হবে। প্রধানমন্ত্রী কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দেশের প্রতি ইঞ্চি জমি চাষাবাদের আওতায় আনতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান যাতে করে বাংলাদেশকে খাদ্যশস্যের জন্য কারও ওপর নির্ভর করতে না হয়। তিনি আরও বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে উন্নত দেশসহ গোটা বিশ্ব অর্থনৈতিক ও খাদ্য সংকটের সম্মুখীন হয়েছে। তিনি আরও বলেন, তাই, আমাদের খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমরা আর আমদানির ওপর নির্ভর করে থাকতে চাই না। আমরা আমাদের নিজস্ব চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত খাদ্যশস্য অন্য দেশে রপ্তানি করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।