টাইব্রেকারে প্রথমবার অলিম্পিক স্বর্ণ পদক পেল ব্রাজিল
অলিম্পিক ফুটবলে নড়বড়ে শুরু করার পরও ফাইনালে জার্মানির সঙ্গে টাইব্রেকারে ৫-৪ ব্যবধানে জয়ী হয়েছে ব্রাজিল। নেইমারের শট জালে জড়াতেই উল্লাসে ফেটে পড়ে পুরো মারাকানা, প্রথমবারের মত অলিম্পিকে স্বর্ণ পদক লাভ করে ফুটবল ইতিহাসের সেরা দলটি। এর মধ্য দিয়ে ফুটবলে জেতা সম্ভব এমন সব শিরোপাই জিতল এই ক্রীড়ার সফলতম দল। শনিবার রাতের ফাইনালে নির্ধারিত ও যোগ করা সময়ে ম্যাচ ১-১ ব্যবধানে ড্র হয়।
জার্মানির পঞ্চম পেনাল্টি শট ফিরিয়ে সোনা জয়ে দারুণ অবদান স্বাগতিক গোলরক্ষকের। প্রতিযোগিতা জুড়ে তিনি ছিলেন অসাধারণ। মাত্র একবারই তাকে ফাঁকি দিয়ে বল জালে গেছে।
টাইব্রেকারে জার্মানির হয়ে গোল করেন মাথিয়াস জিন্টার, সের্গে জিনাব্রি, ইউলিয়ান ব্রান্ড, নিকলাস সুলে। তাদের তিনটি শট ঠিক দিকে ঝাঁপিয়েও ফেরাতে পারেননি ব্রাজিলের গোলরক্ষক। কিন্তু নিলস পিটারসেনের শট তাকে ফাঁকি দিয়ে যেতে পারেনি।
ব্রাজিলের হয়ে বল জালে পাঠান রেনাতো আগুস্তো, মারকুইনিয়োস, রাফায়েল আলকানতারা, লুয়ান ও নেইমার।
অধরা অলিম্পিক ফুটবলের সোনা জেতার খুব কাছে গতবার ব্রাজিলকে নিয়ে গিয়েছিলেন নেইমার। সেবার পারেননি, মেক্সিকোর কাছে ফাইনাল হেরে পুড়েছিলেন বেদনায়। এবার পারলেন, তার গোলে পূর্ণ হল ব্রাজিলের চক্র।
ফাইনালে ওঠার পথে ৪৫০ মিনিটে ব্রাজিলের জাল ছিল অক্ষত, একই সময়ে প্রতিপক্ষের জালে ২১ বার বল পাঠায় জার্মানি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অলিম্পিকে ফুটবলে সোনা জয়ের লড়াইয়ে মুখোমুখি হয়েছিল সবচেয়ে শক্তিশালী রক্ষণ আর আক্রমণভাগ।
দুই বছর আগে বিশ্বকাপে দুই দলের দেখায় ১৮ মিনিটের মধ্যে ব্রাজিলের জালে পাঁচ বার বল পাঠিয়েছিল জার্মানি। সেমি-ফাইনালে ৭-১ গোলে স্বাগতিকদের উড়িয়ে দেয়া দলটি শেষ পর্যন্ত জেতে বিশ্বকাপ।
অলিম্পিকের ইতিহাসও এবার জার্মানির পক্ষে ছিল। বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই ক্রীড়াযজ্ঞে নক আউটে কখনও ব্রাজিলের কাছে হারেনি তারা। ১৯৫২ সালে কোয়ার্টার-ফাইনাল ও ১৯৮৮ সালে সেমি-ফাইনাল থেকে ব্রাজিলকে বিদায় করে তারা।
দুই বছর আগের সেই ম্যাচে ছিলেন না কলম্বিয়ার বিপক্ষে চোট পেয়ে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়া নেইমার। বার্সেলোনা তারকা এবার ছিলেন মাঠে, ব্যবধানও গড়ে দিয়েছেন তিনিই।
রোববার বাংলাদেশ সময় রাত আড়াইটায় শুরু হওয়া ম্যাচে অবশ্য দশম মিনিটে এগিয়ে যেতে পারত জার্মানি। ২২ গজ দূর থেকে ইউলিয়ান ব্রান্টের শট ব্যর্থ হয় ক্রসবারে লেগে।
ধাক্কা সামলে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেন নেইমাররা। এগিয়ে যেতেও বেশি সময় লাগেনি তাদের। ২৭তম মিনিটে অসাধারণ এক ফ্রি-কিকে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন তিনি। চলতি আসরে এটি তার চতুর্থ গোল।
৩৪তম মিনিটে আবার জার্মানির বাধা হয়ে দাঁড়ায় ক্রসবার। এবার ফ্রি কিক থেকে সভেন বেন্ডেরের হেড ক্রসবারে লেগে মাঠে ফেরে।
৫৮তম মিনিটে আর হতাশ হতে হয়নি জার্মানিকে। জেরেমি তোলিয়ানের কাছ থেকে বল পেয়ে কোনাকুনি শটে জালে পাঠান অরক্ষিত মাক্সিমিলিয়ান মায়ার।
কানায় কানায় পূর্ণ স্টেডিয়ামে অংখ্য সুযোগ তৈরি করে ব্রাজিল। কিন্তু ফরোয়ার্ডদের ব্যর্থতা আর গোলরক্ষক টিমো হর্ন ‘চীনের প্রাচীর’ হয়ে দাঁড়ানোয় সেগুলো কাজে লাগেনি। প্রতি আক্রমণ থেকে সুযোগ আসে জার্মানির সামনেও। ব্যর্থ হয় তারাও। তাই খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
অতিরিক্ত সময়েও ছিল স্বাগতিকদের গোলের সুযোগ হাতছাড়ার মহড়া। নিজেদের রক্ষণ সামলে খুব একটা আক্রমণে উঠতে পারেনি জার্মানি। খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে, যেখানে জয়ের হাসি স্বাগতিকদের।