“ঝিলটুলি থেকে দাম্মাম-স্মৃতি রোমন্থন”বইয়ের মোড়ক উম্মোচন
“ঝিলটুলি থেকে দাম্মাম-স্মৃতি রোমন্থন”বইয়ের মোড়ক উম্মোচন
গত ২৬ শে ডিসেম্বর ২০২০, উত্তরার ভুতের আড্ডা রেস্তোরাঁয়, অবসরপ্রাপ্ত বিমানকর্মকর্তা গোলাম জিলানী খানের”ঝিলটুলি থেকে দাম্মাম-স্মৃতি রোমন্থন”বইটির মোড়ক উন্মোচন হয়েছে। মোড়ক উন্মোচন করেছেন খেতাব প্রাপ্তবীর বৈমানিক-মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেইন সাহাবুদ্দীন আহমেদ বীরউত্তম, ক্যাপ্টেইন আলমগীর সাত্তার বীরপ্রতীক এবং বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মিঞা ল্ৎফার রহমান,প্রাক্তন অধ্যক্ষ, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ, ফরিদপুর এবং আহ্বায়ক-ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা বিইউবিটি। বইটি সম্পাদনা করেছেন কাজী আখতার উদ্দিন।
দীর্ঘ ১১ মাস ২৯ দিনসময়ে লেখক তার বইটির বিভিন্ন পর্ব সোশ্যাল মিডিয়াতে লিখেছেন। বিগত অর্থ শতাব্দীর ও বেশী সময়ের দেখা সমাজ সংস্কৃতি রীতিনীতি, চালচলন, আচার-ব্যবহার, স্বাধীনতার প্রেক্ষাপট, মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা এবং তার সাথে ৩০ বছরের চাকুরীর সুবাদে অফিসিয়াল ও ব্যক্তিগতভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ভ্রমণ কাহিনীর বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন বাংলাদেশে বিমানে কর্মরত ছিল, তাই আপন হাতে পুরো বিশ্বভুবন দেখার সৌভাগ্য হয়েছে তার। অবসর জীবনে মনের মাধুরী মিশিয়ে অভিজ্ঞতার আলোকে স্মৃতি কথা লিখেছেন। গুস্তাভফ্লুবেয়ার বলেছেন “ভ্রমণ মানুষকে বিনয়ী করে তোলে, সে জানতে পারে দুনিয়ার তুলনায় সে কত ক্ষুদ্র”। বৃক্ষ যখন ফলবতী হয়, তখন সে নুয়ে পড়ে। লেখকের বেলায় তা প্রমাণিত হয়েছে। সেন্ট অগাস্টিন বলেছেন “পৃথিবী একটা বই আর যারা ভ্রমণ করেনা তারা বইটি পড়তে পারেনা”। সে হিসেবে লেখক পৃথিবী নামক বইট াপাঠ করে তার আনন্দ বেদনার অনুভুতি প্রকাশ করেছেন।স্মৃতি রোমন্থন বইটি একাধারে স্মৃতি, অন্যদিকে ভ্রমণ কাহিনী হিসেবেও সমাদৃত হবে।
৬০/৭০ দশকের ফরিদপুরের স্মৃতি চারণ বইটির প্রথম অংশের মূখ্য বিষয়, যা একজন স্মৃতিকাতর পাঠকের মন আকর্ষণ করবে। বইটির অর্ধেক অংশে বিমান সম্পর্কিত বিষয় উঠে এসেছে, এছাড়া দেশের তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি, মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধু প্রসঙ্গও এসেছে। লেখক ফরিদপুরের স্থানীয় কিছু পরিভাষা ব্যবহার করেছেন, যা অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং লেখার ঢং এ ও একধরণের বিশেষ আমেজ বা মাটির টান রয়েছে। রচণা শৈলীতে গোলাম জিলানীর নিজস্ব স্বকীয়তা রয়েছে, যা অনেকের কাছে উপভোগ্য মনে হবে এবং বিজ্ঞ পাঠক বইটি পড়তে গিয়ে এক ঘেয়েমিতে ভুগবেননা।
কিছু কিছু বিষয়ের বর্ণনা বেশ মনোমুগ্ধকর, যা ষাটের দশকের বাঙ্গালির মনে দোলা দেবে।
যেমন, কুলফী বরফ-মাটির মটকায় বরফ দিয়ে ছোট ছোট টিনের কৌটায় রাবারের ব্যান্ডেআটকে থাকতো। পওে মটকা থেকে তুলে রাবারটা খুলে দিতেন। খাঁটি দুধের, মনে পড়লে জিহ্বায় পানি আসে।
সকাল বেলা গোয়ালা ঘাড়ে করে দুই পাশে মাঠা ও মাখনের ভাড় কাঁধে নিয়ে আসতো। কাঁঠাল পাতায় ৪ আনার মাখন ও ২ আনাগ্লাস এর ঘোল যেন অমৃতের স্বাদ।
গরুর গাড়ী ভওে মাছ আসতো পদ্মানদী থেকে। মাল পরিবহনের জন্য ঘোড়া ব্যবহার করা হতো।
পানসি নৌকায়খাট, চেয়ার, টেবিল রেখে রান্নার ব্যবস্থা ছিল। পেছনে পায়খানা ছিল। তখন ধানমন্ডিতে ২০০ টাকা বিঘা জমি।
কাক ডাকা ভোরে ছোট ছোট হিন্দু মেয়েরা হাতলওয়ালা বাঁশের ঝুড়িতে ফুলকুড়াঁতে আসতো।
প্রায় বাসায় আলাদা পায়খানা ছিলো যার নীচে একটা মাটির চাড় বসানো থাকতো। সেখান থেকে কাকডাকা ভোর হলেই সুইপাররা ময়লা নিয়ে তাদের গোল কভার করা গাড়িতে ময়লা নিয়ে যেত। উপওে ঢাকনা লাগানো থাকতো, গরুর গাড়ী এই ময়লা বহন করতো।
বিভিন্ন রকম বর্ণনার কারনে বইটি নবীন-প্রবীন পাঠকের মনে দোলা দেবে।
লেখকঃ সাকিল খাঁন