জিয়াউর রহমানের ঐতিহাসিক ভূমিকাকে বিকৃত করার চেষ্টা চলছে : মির্জা ফখরুল

18/08/2020 9:00 pmViews: 7

জিয়াউর রহমানের ঐতিহাসিক ভূমিকাকে বিকৃত করার চেষ্টা চলছে : মির্জা ফখরুল

জিয়াউর রহমানের ঐতিহাসিক ভূমিকাকে বিকৃত করার চেষ্টা চলছে : মির্জা ফখরুল – ছবি : নয়া দিগন্ত

বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠাকারী, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা, স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তমকে বিতর্কিত করার হীন উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্র ও মিথ্যা অপপ্রচারের একটি সংগঠিত ঘৃণ্য অপতৎপরতা জাতি ক্ষোভের সাথ লক্ষ্য করছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বহু দিন ধরেই এ ষড়যন্ত্র প্রচেষ্টা চলছে। কিন্তু কখনোই তা হালে পানি পায়নি। আমরা এই ঘৃণ্য অপচেষ্টার প্রতিবাদ জানাই।

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সম্পর্কে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যাচারের প্রতিবাদে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। মঙ্গলবার বিকেলে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যরাতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে নজিরবিহীন ভোট ডাকাতির মাধ্যমে স্বঘোষিত আওয়ামী লীগ সরকার নির্লজ্জভাবে আইনের শাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলছে। সীমাহীন নৈরাজ্য, দুর্নীতি, অরাজকতা, করোনা মোকাবেলায় চরম ব্যর্থতা ও চরম অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের দেশকে নিপতিত করে সরকার আজ দিশেহারা। রাজনৈতিকভাবে চরম দেউলিয়া হয়ে জনগণের ওপর আস্থা হারিয়ে একমাত্র রাষ্ট্রশক্তির পরেই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে এই সরকার। এখন আর বর্তমান সরকারের কোনো রাজনীতি নেই। তাই সরকারের টিকে থাকার জন্য তারা অপঃরাজনীতিতে নেমেছে।

তিনি বলেন, বিচার-বহির্ভূত প্রক্রিয়ায় হাজার হাজার মানুষকে হত্যা গুম ও খুন করা আজ সরকারের দৈনন্দিন রুটিনে পরিণত হয়েছে। যা জাতিসঙ্ঘ সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টর নামে সকল গণমাধ্যম ও স্বাধীন মতামতের কণ্ঠরোধ করার জন্য তৈরি হয়েছে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মতো জঘন্য আইনের। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে দলীয় ক্ষমতার হাতিয়ারে পরিণত করা হয়েছে। স্বাধীনতার চেতনাকে বিনষ্ট করে দিয়ে তারা একটি ফ্যাসিবাদী সরকার প্রতিষ্ঠা করছে। ক্ষমতাসীনরা এখন মিথ্যাচার করে ইতিহাস বিকৃত করার প্রক্রিয়ায় জিয়াউর রহমানকে খাটো করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ১৯৭১ সালে জাতি যখন নেতৃত্বহীন, কান্ডারি শূন্য হয়ে দিশেহারা, ঠিক তখনই ২৬ মার্চ জীবনের তোয়াক্কা না করে মেজর জিয়াউর রহমান অকুতোভয় কন্ঠে স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন এবং সম্মুখযুদ্ধে নেতৃত্ব দিলেন। তিনি পরে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তন করে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগসহ সকল রাজনৈতিক দলের ও অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিলেন বিশৃংখল সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনলেন, স্টেটম্যান হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের আসন সুপ্রতিষ্ঠিত করলেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় ও রাজনীতিতে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে জনগণের মণিকোঠায় স্থান করে নিলেন। তার মৃত্যুর পর লাখ লাখ মানুষ জানাজায় অংশ নিয়ে অনন্য নজির স্থাপন করেছিল। সেই রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকেই এখন ১৫ আগস্ট হত্যার সাথে সম্পৃক্ত করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ এত সমালোচনা কেন করে? কারণ, জানেন শহীদ জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়া তাদের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী। শহীদ জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে ৪০ বছর আগে। তারপরও তাদের অপ্রতিরোধ্য জনপ্রিয়তাকে ক্ষমতাসীনদের এতই ভয় যে আজও একটা সুষ্ঠু নির্বাচন দেয়ার সাহস রাখে না তারা।

মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের আইন-আদালত শাসনব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে বন্দী অবস্থায় থাকা ১৫ আগস্ট হত্যা মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে দিয়ে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের ধারণকৃত ভিডিও উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার করা এবং একইসাথে বেতনভুক্ত সাইবার কর্মী নিয়োগ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করা হয়েছে। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ১৫ আগস্ট হত্যা মামলার সকল আসামিকে যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত করা এবং রায় কার্যকর করার পর প্রায় সম্পন্ন হতে চলেছে। এমতাবস্থায় আইনিভাবে এ ধরনের বক্তব্যের কোনো সাক্ষ্য মূল্য নেই।

তিনি বলেন, বাংলাদশের ইতিহাস সম্পর্কে যাদের সম্যক ধারণা আছে তারা সকলই জানেন, ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ড ঘটছিল আওয়ামী লীগের অন্যতম শীর্ষ নেতা খন্দকার মোশতাক আহমদে নেতৃত্বে। মরহুম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের লাশের ওপর দিয়েই সেদিন ঐ মন্ত্রিসভার প্রায় সকল সদস্যই শপথ নিয়েছিল মোশতাক সরকারের মন্ত্রী হিসেবে। ১৯৭৫’র ১৫ আগস্ট এবং ৩ অক্টোবরে তৎকালীন আওয়ামী-বাকশাল নেতা খন্দকার মোশতাকের জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া দুটি ভাষণের সুস্পষ্ট দালিলিক প্রমাণ বহন করে। ওই ভাষণে তিনি মুজিব হত্যাকাণ্ডকে “এক ঐতিহাসিক প্রয়োজন” বলে উল্লেখ করেছিলেন। হত্যাকারীদেরকে তিনি প্রশংসা করেন “অসম সাহসী সূর্য সন্তান” হিসেবে। ওই সময় জাতীয় সংসদের স্পিকার আব্দুল মালেক উকিল লন্ডনে বসে কী মন্তব্য করছেলিনে তা সকলেরই জানা আছে। এটি ঐতিহাসিকভাবে সুস্পষ্ট যে ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের সুবিধাভোগী ছিল খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগে নেতারাই।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিএনপি ও জিয়া পরিবারের প্রতি জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থনকে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় মোকাবেলা না করে বর্তমান সরকার শুরু করেছে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের। সে কারণেই বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানসহ বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও জাতীয়তাবাদী রাজনীতিকে রাজনৈতিকভাবে নিশ্চিহ্ন করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে ক্ষমতাসীন সরকার। দেশের বিরাজমান নৈরাজ্য রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট ও মানবাধিকার বিরোধী গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের দায় থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করার জন্যই তারা এই ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।

তিনি বলেন, আমাদের দলের পক্ষ থেকে আমাদের নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জাতীয় ঐক্যের জন্য বারবার উদ্যোগ নিয়েছেন। মরহুম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের কবর জিয়ারত করাসহ নানা তৎপরতার মাধ্যমে তিনি এই বার্তা দেশবাসীকে দিয়েছেন বারবার। কিন্তু চলমান অপতৎপরতায় প্রমাণিত হয়, ক্ষমতাসীন মহল জাতিকে বিভক্ত করে সংকীর্ণ স্বার্থ অন্বেষণেই ব্যস্ত। আমরা পুনরায় ক্ষমতাসীন দলকে ইতিহাস বিকৃত করার এই ঘৃণ্য তৎপরতা পরিহার করে দেশ ও জাতির স্বার্থে জাতীয় ঐক্যের পথে আসার আহ্বান জানাই। অন্যথায় এর দায়-দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে।

Leave a Reply