জিএসপি ফিরে পেতে লবিয়িং করবে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা
জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে বাংলাদেশের পক্ষে লবিয়িং করবে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে হোটেল গ্র্যান্ড হায়াতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত্কালে যুক্তরাষ্ট্র চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধি দল এ আশ্বাস দেন।
তারা বলেন, জিএসপি স্থগিতের সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি। যে শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নের চিন্ত-ভাবনা থেকে জিএসপি স্থগিত করা হয়েছে, ফল হয়েছে তার উল্টো। তারা আশা করেন শীঘ্রই যুক্তরাষ্ট্র সরকার এই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করবে। এজন্য বাংলাদেশের পক্ষে কাজ করবেন তারা। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের মধ্যে অংশীদারিত্ব সংলাপের ফলোআপ হিসেবেই এ সাক্ষাত্ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশের বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বলেন, অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে বাংলাদেশে বিনিয়োগের চমত্কার পরিবেশ বিদ্যমান। তার সরকার প্রাইভেট সেক্টরকে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। টেলিযোগাযোগ, তৈরি পোশাক ও জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আশা করেন, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা এই সুযোগ নেবেন। গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধিসহ তাদের কর্ম পরিবেশ ও জীবনমান উন্নয়নে তার সরকারের নানা উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ বিমানের জন্য ক্রয় করা ২টি বোয়িং আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে প্রদানের অনুরোধ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের তেল-গ্যাস সেক্টরে ভূতাত্ত্বিক জরিপের কথা তুলে ধরে বলেন, জরিপ চলছে। শীঘ্রই বাংলাদেশের তেল-গ্যাস সেক্টরের রিজার্ভ সম্পর্কে একটি সম্ভাব্য ধারণা সরকারকে দেয়া সম্ভব হবে। ইউএস চেম্বারের একটি ব্যবসায়িক প্রতিনিধি দল শীঘ্রই বাংলাদেশ সফর করবে বলেও সাক্ষাতে জানানো হয়।
আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ জিয়া উদ্দিন, পররাষ্ট্র সচিব মো, শহিদুল হক, এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ ছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলে ছিলেন, ইউ ইস চেম্বারের এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট টামি ওভারবি, দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক পরিচালক এসপারানজা জেলালিয়ান, ইউ এস বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপের দক্ষিণ এশিয়া করপোরেট অ্যাফেয়ার্সবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট রাকেশ চিতকারা (জিই ইন্ডিয়া), ইন্টারন্যাশনাল গভর্নমেন্টবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট বিল ইকর্ড (কনোকোফিলিপস), ইন্টারন্যাশনাল অপারেশন অ্যান্ড পলিসিবিষয়ক পরিচালক ব্রায়ান এম লপ ( দ্য বোয়িং কোম্পানি), ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্ক প্যারিক (মেট লাইফ), সিনিয়র অ্যাডভাইজার টেরেসিটা সি (ম্যাককার্থি আযাসোসিয়েটস) ও ম্যানেজার গভর্নমেন্ট অ্যাফেয়ার্স পুনিত ভার্মা (শেভরন)।
প্রধানমন্ত্রী যখন হোটেলে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করছিলেন তখন হোটেলের সামনে বিক্ষোভ করে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবির। কড়া পুলিশ পাহারায় প্রায় অর্ধশতাধিক জামায়াত-শিবিরকর্মী ফুটপাতে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে নানা স্লোগান দিতে থাকে। তাদের হাতে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত নিজামী, মুজাহিদ, সাইদী, কাদের মোল্লার মুক্তি দাবি সংবলিত ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড ছিল। ফুটপাতেই তারা মাগরিবের নামাজ আদায় করে চলে যায়।
এদিকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৮তম অধিবেশনে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। যুক্তরাষ্ট্র সময় শুক্রবার বিকাল পৌনে ৪টায়, বাংলাদেশ সময় শুক্রবার রাত পৌনে ২টায় এই ভাষণ দেয়ার কথা রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রতিবারের মতো এবারও প্রধানমন্ত্রী বাংলায় ভাষণ দেবেন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণকে স্বাগত জানাতে জাতিসংঘের সামনে আওয়ামী লীগ ও ভাষণ প্রত্যাখ্যান করে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিএনপি বিক্ষোভের প্রস্তুতি নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান, নিউইয়র্ক স্টেট আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মহিউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক শাহিন আজমল, যুবলীগের সভাপতি মিসবাহ আহমদ জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর ভাষণকে স্বাগত জানাতে তারা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেট থেকে নেতাকর্মীরা ইতিমধ্যে নিউইয়র্কে জড়ো হয়েছেন। গতকাল দলের নেতাকর্মীরা হোটেলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত্ও করেছেন। দলের নেতাকর্মীদের নির্বাচনের আগে দেশে গিয়ে নৌকার পক্ষে কাজ করতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান জিল্লু ও যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ আহমেদ জানিয়েছেন, বাংলাদেশে একদলীয় নির্বাচন প্রস্তুতির প্রতিবাদে তারা প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের সময় জাতিসংঘের সামনে কালো পতাকা বিক্ষোভ করবেন। এজন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন তারা।
আগামীকাল শনিবার দুপুর পৌনে ১টায় নিউইয়র্ক প্যালেস হোটেলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের নির্বাচনের আগমুহুর্তে প্রতিবেশী প্রভাবশালী এই রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এ বৈঠক রাজনৈতিক মহল অতীব গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। বিকাল সাড়ে ৪টায় জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী। রবিবার সকালে ঢাকার উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর নিউইয়র্ক ছাড়ার কথা রয়েছে