জামিনে মুক্ত মির্জা ফখরুল ইউনাইটেড হাসপাতালে
১৫ জুলাই, ২০১৫
দীর্ঘ ছয় মাসের বেশি সময় পর আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে জামিনে মুক্ত হলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম
আলমগীর। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সুপ্রিমকোর্টের আদেশসহ বিভিন্ন মামলার জামিননামার কাগজপত্র কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের (বিএসএমএমইউ) অস্থায়ী প্রিজন সেলে নিয়ে আসার পর অসুস্থ মির্জা ফখরুল মুক্ত হন। কারাবন্দি ফখরুল গত এক মাস এ হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেল থেকে মুক্ত হয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমি অত্যন্ত অসুস্থ। গত ছয় মাসে আমার প্রায় ১২ কেজি ওজন কমে গেছে। আমার ক্যারিটিড আর্টারির ব্লকের সমস্যা বেড়েছে। আমার আইবিএস’র সমস্যাও বেড়েছে। আমি অতিদ্রুত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাব।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপার ফরমান আলী যুগান্তরকে জানান, জামিনের কাগজপত্র হাতে পাওয়ার পর বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের অস্থায়ী প্রিজন সেল থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মির্জা ফখরুলকে মুক্তি দেয়া হয়।
মুক্তির পর পঞ্চম তলার প্রিজন সেল থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল বেরিয়ে এলে দলের সহ-দফতর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, ২০ দলীয় জোটের শরিক সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ আহমেদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খানসহ দলীয় নেতাকর্মীরা তাকে স্বাগত জানান। এ সময় তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগমও উপস্থিত ছিলেন।
বিদেশে কোথায় চিকিৎসা নেবেন জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, এরই মধ্যে আমার স্ত্রী সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাষ্ট্রে যোগাযোগ করেছেন। যে কোনো একটা হাসপাতালে আমি যাব। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের প্রিজন সেল থেকে মুক্তির পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, আমার আরোগ্য লাভের জন্য দেশবাসীর কাছে গণমাধ্যমের মাধ্যমে দোয়া চাইছি। আমি যেন সুস্থ হয়ে ফিরে এসে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে পারি তার জন্য দোয়া করবেন।
মুক্তির পরপরই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার প্রথম বক্তব্যে তার মুক্তির জন্য দেশবাসীসহ গণমাধ্যমের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, আল্লাহর কাছে আমি শুকরিয়া আদায় করছি। দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। গণমাধ্যমের কর্মীদের কাছে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। আপনারা আন্তরিকতার সঙ্গে আমার অসুস্থতার খবর জাতির কাছে তুলে ধরেছেন।
মির্জা ফখরুলকে হুইল চেয়ারে করে নামিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হয় গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে। সেখানে পৌঁছে এই হাসপাতালে ভর্তি অসুস্থ মা ফাতেমা আমিনকে দেখতে গিয়ে তিনি আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। পরে তাকে এই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মুনিরুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে তিনি চিকিৎসাধীন থাকবেন। বিদেশে যাওয়ার আগ পর্যন্ত এখানেই চিকিৎসা নেবেন তিনি। জানা গেছে, দুই-তিন দিনের মধ্যেই চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে পারেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে বিএনপির আন্দোলনের মধ্যে গত ৬ জানুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করেন মির্জা ফখরুল। সেখান থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর নাশকতার সাতটি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। অসুস্থ বিএনপির এই ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবকে কয়েক দফা রিমান্ডে নেয়া হয়। এর মধ্যে পল্টন থানায় গাড়ি পোড়ানো, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের এক মামলায় গত ১৬ এপ্রিল হাইকোর্ট থেকে ছয় মাসের জামিন পান তিনি। এরপর পল্টন থানার দুটি এবং মতিঝিল থানার এক মামলায় ১৮ জুন পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল পর্যন্ত তাকে জামিন দেয় হাইকোর্ট। রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে গেলে সেখানেও ফখরুলের জামিন বহাল থাকে।
পল্টন থানার তিন মামলায় গত ২১ জুন হাইকোর্ট রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ফখরুলের জামিন মঞ্জুর করে। রাষ্ট্রপক্ষ এর বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে গেলে আদালত পাঁচ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে ফখরুলের স্বাস্থ্য পরীক্ষার নির্দেশ দেয়। সেই মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী স্বাস্থ্যগত অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে সোমবার আপিল বিভাগ ফখরুলের জামিন বহাল রাখেন। পল্টন থানার এই তিন মামলায় ছয় সপ্তাহের জামিনের মেয়াদ শেষে মির্জা ফখরুলকে আবার বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে।