জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে

17/03/2014 10:06 pmViews: 5

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীতে টুঙ্গীপাড়ার জাতীয় শিশু দিবসের অনুষ্ঠানে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসমুক্ত দেশ গড়তে সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। জাতির জনকের জন্মবার্ষিকীতে সোমবার সকালে টুঙ্গীপাড়ায় তার সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান বঙ্গবন্ধুকন্যা হাসিনা। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদও শ্রদ্ধা জানাতে টুঙ্গীপাড়া গিয়েছিলেন।
শ্রদ্ধা জানানোর পর বঙ্গবন্ধুর সমাধি কমপ্লেক্সে শিশু সমাবেশে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী, যাতে সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় বিদ্যালয় মালেকা একাডেমির দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী লুবাইনা রুবাব সাফা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদকদ্রব্য জীবনকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। সকলকে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদককে না বলতে হবে।” “আমরা চাই শিশুরা নিরাপদ জীবন পাবে। সেজন্য জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদকদ্রব্য থেকে জাতিকে দূরে রাখতে চাই,” বলেন সরকার প্রধান।

অনুষ্ঠানে স্থানীয় এস এম মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র শাহরিয়ার আলম মাহিন স্বাগত বক্তব্যে স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরতে সবার প্রতি আহ্বান জানান।

সাবিহা জামান লিমা ও সৌরভ পাল শুভ নামে দুই শিশুর পরিচালনায় ধর্মগ্রন্থ থেকেও পাঠ করে শোনান শিশুরা। কোরআন থেকে পাঠ করে মোহাম্মদ উল্লাহ, গীতা পাঠ করেন মানসী বিশ্বাস, বাইবেল থেকে পাঠ করে পিটার বম এবং ত্রিপিঠক পাঠ করে মাচিং মারমা।

অনুষ্ঠানে সাহিত্য ও সাংস্কৃতি প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে ক্রেস্ট ও সনদ বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী তার সাড়ে নয় মিনিটের সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় বলেন, “আমি ছোট্ট শিশুদের বক্তৃতা শুনে নিশ্চিন্তে বলতে পারি, ভবিষ্যতে তারা আরো ভালো বক্তৃতা দিতে পারবে। তারাই তো মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী হবে।”

উপস্থিত শিশুদের পড়াশোনায় মনোযোগ দিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দেশ গঠনে আত্মনিয়োগের পরামর্শ দেন হাসিনা। খেলাধুলা এবং সংস্কৃতি ও শরীর চর্চায় মনোযোগী হওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।

মার্চকে বাংলাদেশের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ মাস উল্লেখ করে হাসিনা বলেন, “৭ই মার্চ জাতির পিতা তার ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন। ১৭ মার্চ জাতির পিতাকে আমরা পেয়েছি। ২৬ মার্চ জাতির পিতা স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান।”

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের দেশ গড়তে সরকার সচেষ্ট জানিয়ে তিনি বলেন, “জাতির পিতা চাইতেন, বাংলাদেশের মানুষ দরিদ্র থাকবে না। বাংলাদেশ উন্নত হবে। কোনো শিশু না খেয়ে মারা যাবে না। কোনো শিশু নিরক্ষর থাকবে না। সকলে শিক্ষা পাবে।”

সে লক্ষ্যে শিশুদের জন্য প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা, বিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় খেলার সরঞ্জাম ও বিনোদনের ব্যবস্থা করা, বছরের প্রথম দিনে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া রোধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সব বই ই-বুকে রূপান্তর এবং মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ও আইসিটি ল্যাব প্রতিষ্ঠার কথা বলেন তিনি।

পড়াশোনার পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রদের জন্য বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ এবং ছাত্রীদের জন্য বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট চালু করার কথাও বলেন হাসিনা।

বঙ্গবন্ধুর জীবন থেকে সবাইকে শিক্ষা নেয়ার তাগিদ দিয়ে হাসিনা বলেন, “ভোগে নয়, ত্যাগেই মহত্ব, মানুষের প্রতি জাতির পিতার যে দরদ, তার থেকে আমাদের শেখার আছে।”

বক্তৃতার পর প্রধানমন্ত্রী শিশুদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখেন। বঙ্গবন্ধুর সমাধি কমপ্লেক্সে বইমেলা উদ্বোধনও করেন প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন নারী ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকী। নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তরিকুল ইসলাম, ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার জিল্লার রহমান এবং গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক খলিলুর রহমান মঞ্চে ছিলেন।

ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসেন ভূইয়া, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আব্দুস সোবহান শিকদার, তিনবাহিনীর প্রধান, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে ছিলেন শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ফারুক খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, শেখ হেলাল উদ্দিন, ফজলে নূর তাপস এবং এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরামউদ্দিন আহমদ।

Leave a Reply