জঙ্গিবাদ মোকাবিলা করতে না পারলে অন্ধকার যুগে ফিরে যাব আইপিইউ সম্মেলনের বর্ণাঢ্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

02/04/2017 5:39 pmViews: 3
জঙ্গিবাদ মোকাবিলা করতে না পারলে অন্ধকার যুগে ফিরে যাব
আইপিইউ সম্মেলনের বর্ণাঢ্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী
 
জঙ্গিবাদ মোকাবিলা করতে না পারলে অন্ধকার যুগে ফিরে যাব

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্ব এখন সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের নতুন এক উপদ্রবের মুখোমুখি। এই উপদ্রব নিরীহ মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে, মানুষের শান্তি বিনষ্ট করছে। জঙ্গিবাদ আজ কোনো নির্দিষ্ট দেশের সমস্যা নয়, এটা বৈশ্বিক সমস্যা। আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। তা না হলে আমরা আবার অন্ধকার যুগে ফিরে যাব। গতকাল শনিবার জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন-আইপিইউ’র ১৩৬তম সম্মেলনের বর্ণাঢ্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠিয়ে শুরু হয় সামরিক ও স্বৈরশাসন। প্রবাসে থাকাবস্থাতেই ১৯৭৯ সালে আমি সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই। ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাাটিয়ে ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য সংগ্রাম শুরু করি। ১৯৮৬ সালে আমি প্রথমবারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হই। সেসময় বিরোধী দলের নেতা হিসেবে প্রথম আইপিইউ সম্মেরনে যোগ দিই।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র অর্জনের পথ কখনই মসৃণ ছিল না। অনেক পথ পাড়ি দিয়ে আমরা গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পেরেছি। জনগণের শাসন ফিরিয়ে আনার সংগ্রামে আমাকেও কম নির্যাতন সহ্য করতে হয়নি। গৃহবন্দী, জেলখানায় আটক থেকে শুরু করে আমার জীবনাশের প্রচেষ্টা হয়েছে বারবার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইপিইউ’র সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে আমরা গভীরভাবে সম্মান করি। আমরা আমাদের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য নিয়ে গর্বিত। আমরা গণতন্ত্রকে শুধু একটি ব্যবস্থা হিসেবে দেখি না, বরং গণতন্ত্রকে মানুষের সমৃদ্ধি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বাহন হিসেবে গণ্য করি। তাছাড়া গণতন্ত্র জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নের পথ।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে আমরা একটি দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত, ন্যায়-ভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক সমাজ গড়ে তোলার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। বিশ্ব আজ এগিয়ে যাচ্ছে। দৃশ্যমান অগ্রগতি সাধিত হয়েছে বৈশ্বিক ক্ষুধার ক্ষেত্রেও। তবুও বিশ্বের প্রায় আটশ মিলিয়ন মানুষ এখনও অপুষ্টিতে ভুগছে। অথচ প্রাচুর্যে ভরা এই বিশ্বে মানবজাতির বেঁচে থাকার সব ধরনের রসদ বিদ্যমান। একটু সহানুভুতি, সহযোগিতা, পরস্পরের প্রতি মমতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ বিশ্বকে এক নিমিষেই ক্ষুধামুক্ত করতে পারে।

আইপিউই সম্মেলনে আগত প্রতিনিধিদের স্বাগত জানিয়ে আয়োজক বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সিপিএ’র নির্বাহী কমিটির চেয়ারপারসন এবং সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী আইপিইউ’র প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সারাবিশ্বের পার্লামেন্টসমূহের সদস্যদের কাছ থেকেপাওয়া এ স্বীকৃতি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চায় বাংলাদেশের নিবেদিত থাকার একটি মূল্যবান সনদ। প্রতিনিধিদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আমি আশ করি- দারিদ্র্য বিমোচন, বিশ্ব শান্তি স্থাপন এবং সর্বোপরি মানবতার কল্যাণে আপনারা বাস্তবধর্মী সুপারিশমালা প্রণয়ন করবেন। নিজ নিজ দেশে সেগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। তবেই আমাদের এই পরিশ্রম স্বার্থক হবে।

বক্তব্যের শেষদিকে প্রধানমন্ত্রী পাঁচ দিনব্যাপী এই সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণ করেন। বক্তব্য শেষে তিনি আইপিইউ টিভি’র উদ্বোধন করেন। এছাড়া সম্মেলন উপলক্ষে স্বারক ডাকটিকিটি উদ্বোধন করেন।

স্বাগত বক্তব্যে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, জাতীয় সংসদ বাংলাদেশের গণতন্ত্রের হূিপন্ড। ’৭২ সালে বাংলাদেশ আইপিইউ’র সদস্য পদ লাভ করে। আইপিইউ’র প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এটা সর্ববৃহত্ আন্তর্জাতিক আয়োজন। এই সম্মেলনে এক হাজার চারশ প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন। তিনি তার বক্তব্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন অর্জন তুলে ধরেন। আইপিইউ’র সেক্রেটারি জেনারেল মার্টিন চুংগং বলেন, এ সম্মেলনের মাধ্যমে সারাবিশ্ব বাংলাদেশের সঙ্গে নতুন করে পরিচিত হবে। সম্মেলনে জাতিসংঘ মহাসচিবের বাণী পড়ে শোনার সংস্থাটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল।

উদ্বোধনী পর্বে নানা আয়োজনে বাংলাদেশকে তুলে ধরা হয়। সংসদ ভবনকে ব্যাকগ্রাউন্ড রেখে নৌকা আকৃতির মঞ্চ তৈরি করা হয়। বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ওপর একটি ভিডিওচিত্র দেখানো হয়।

প্রসঙ্গত, আইপিইউ’র পাঁচদিনের এই সম্মেলনে ১৩১ দেশের ৫৩ জন স্পিকার, ৪০ জন ডেপুটি স্পিকার, পার্লামেন্ট সদস্যসহ ১৫ শতাধিক প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন। এবারের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য, ‘রিড্রেসিং ইন ইকুয়ালিটিজ:ডেলিভারিং অন ডিগনিটি অ্যান্ড ওয়েল বিং ফর অল’। নোবেল বিজয়ী মানবাধিকার কর্মী কৈলাশ সত্যার্থী আজ রবিবার সম্মেলনের প্রতিপাদ্যের ওপর কী নোট পেপার উপস্থাপন করবেন।

সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এইচএম এরশাদ, বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্যরা, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতসহ সহস্রাধিক অতিথি উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply