জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস বন্ধে আলেম-ওলামাদের সহযোগিতা প্রত্যাশা প্রধানমন্ত্রীর
দেশ থেকে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস নির্মূলে সরকারকে সাহায্য করার জন্য সকলকে বিশেষ করে আলেম-ওলামাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা কুসংস্কার, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস নির্মূলে আপনাদের (আলেম-ওলামাদের) সহযোগিতা চাই। গতকাল জাতীয় হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা-২০২৩-এর জাতীয় পর্যায়ের বিজয়ী হাফেজগণের মধ্যে পুরস্কার বিতরণকালে তিনি বলেন, আমি আপনাদের সকলকে বিশেষ মনোযোগ দেয়ার জন্য অনুরোধ করছি যাতে আমাদের সন্তানরা বিপথে যেতে না পারে।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ দ্বীনি সেবা ফাউন্ডেশন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে বিজয়ী ৫ জন হাফেজের হাতে প্রধানমন্ত্রী পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট, নগদ অর্থের চেক এবং সনদ তুলে দেন। তারা হচ্ছেন- হাফেজ আফফান বিন সিরাজ, হাফেজ মো. ওসমান গণি, হাফেজ মো. আবু জাফর শাকিল (দৃষ্টি প্রতিবন্ধী), হাফেজ মো. খালিদ সাইফুল্লাহ এবং হাফেজ মো. মোতাসিম বিল্লাহ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মু.আ. হামিদ জমাদ্দার, বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের মহাপরিচালক মাওলানা মুফতি উবায়দুর রহমান খান নদভীসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। যার মধ্যে রয়েছেন আলহাজ সুফী মো. মিজানুর রহমান এবং হযরত মাওলানা সালাউদ্দিন নানোপুরী।
তাই সকলের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে, আমাদের ধর্মের মান ইজ্জতটা রক্ষা করবেন। কেউ যেন এই বিপথে না যায়। সন্তানের নিয়মিত স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিতির বিষয়টা এবং কার সঙ্গে মিশছে সে বিষয়টা আপনাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। তিনি বলেন, পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলাম, সেই ধর্মের সঙ্গে সামান্য মুষ্টিমেয় কয়েকজনের জন্য কেন সন্ত্রাসী নামটা যুক্ত হবে? সত্যিকারের যারা ধর্মে বিশ্বাসী তাদের জন্য এটা খুব কষ্টদায়ক। কাজেই আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ, এই সমস্ত কুসংস্কার, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস নির্মূলের ক্ষেত্রে আপনাদের সহযোগিতা চাই। আপনাদের দোয়া চাই এবং আমাদের ছেলে-মেয়েরা যেন বিপথে না যায় সেজন্য আপনাদের সহযোগিতা চাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নানা ধর্মের লোক এই বাংলাদেশে আছে এবং যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে এটা আমাদের নবী করীম (সা.) এর শিক্ষা, আমরা সেভাবেই চলবো। চূড়ান্ত বিচার বা শেষ বিচার করবেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। কাজেই কে কোন ধর্মের, কে হিন্দু না মুসলমান না বৌদ্ধ না খ্রিস্টান না কাদিয়ানী তা দেখার দায়িত্ব আমাদের না। যার যার কর্মফল সে সে ভোগ করবে। বিচারের ভার নিজেদের হাতে তুলে না নিয়ে বরং আরও বেশি সংখ্যক মানুষ যেন ইসলামের ছায়াতলে আসে সেজন্য সকলের প্রচেষ্টা থাকা উচিত বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আলেম ও ওলামায়ে কেরাম যারা আছেন আপনাদের কাছে আমার এই অনুরোধ ইসলাম ধর্মের মর্মবাণী প্রচার করে আরও অধিক সংখ্যক মানুষ যেন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে পারে সেদিকে সকলের দৃষ্টি দিতে হবে।
এ প্রসঙ্গে তিনি পদ্মা সে নির্মাণের সময় তার সরকার, দল ও পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ভুয়া দুর্নীতির অভিযোগ এনে বদনাম দেয়ার প্রচেষ্টাকে মিথ্যা বলে প্রমাণ করার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আমাদেরকে বদনাম দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল কিন্তু আমরা সেটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে বলেছিলাম এখানে কোনো দুর্নীতি হয় নাই এবং তারাও কোনো দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারে নাই। বরং নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে প্রমাণ করেছি- আমরা কারও মুখাপেক্ষী নই, আমরা আমাদের এই দেশকে স্বাধীন করেছি এবং আমাদের কাজ আমরা নিজেরাই করতে পারি। আর এই একটা সিদ্ধান্তই বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিশ্বে উজ্জ্বল করেছে।
পুরস্কার বিজয়ীদের অভিনন্দন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আশা করি, তোমরা পবিত্র কোরআনের মর্মবাণী ধারণ করে নিজেকে ও সমাজকে আলোকিত করবে। সমাজ থেকে কুসংস্কার, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করতে অবদান রাখবে এবং আদর্শ সমাজ ও শান্তিপূর্ণ দেশ গঠনে এগিয়ে আসবে। জাতীয়ভাবে হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করার জন্য উদ্যোক্তা-বাংলাদেশ দ্বীনি সেবা ফাউন্ডেশনকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় আমাদের ছেলে-মেয়েরা প্রতি বছরই বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে অনেক ভালো ফল অর্জন করছে। তারা একাধিক গ্রুপে চ্যাম্পিয়নও হয়েছে।
তিনি বলেন, ট্রাস্টের সদস্যভুক্ত ইমামদের সুদমুক্ত ঋণ প্রদান করারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। ট্রাস্টের সাহায্যার্থে তিনি সমাজের বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জেদ্দা হজ্জ টার্মিনালে প্লাজা ভাড়া নেয়ায় হাজীদের দুর্ভোগ বহুলাংশে লাঘব হয়েছে। আশকোনা হজক্যাম্প আধুনিকায়ন করে হজযাত্রীদের জন্য কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন অফিসও আধুনিকায়ন করা হয়েছে। পাশাপাশি মক্কা ও মদিনায় হজ অফিস খোলা হয়েছে এবং মক্কায় স্থায়ী হজ অফিস নির্মাণে সৌদি সরকারের কাছে জায়গা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মা-বাবা হারিয়ে যখন এদেশের মাটিতে ফিরে আসি সেই চেনামুখগুলো পাইনি, পেয়েছি বনানী কবরস্থানে সারি সারি লাশ। তবে, পেয়েছি দেশের মানুষের ভালোবাসা ও বিশ্বাস। যা আমাকে প্রেরণা যুগিয়েছে। এজন্য আমি কোনো কিছুতেই ভয় পাই না। এ সময় তিনি বলেন, দেশের একটা মানুষও ভূমিহীন, গৃহহীন থাকবে না। আমাদের হিসাবে আর মাত্র ১১ হাজার ঘর বাকি আছে। এরপর আর কেউ গৃহহীন থাকবে না। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য এবং সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি।