ছাত্র প্রতিনিধি ছাড়াই ১৪ বছর পর বসছে রাবির সিনেট অধিবেশন
ছাত্র প্রতিনিধি ছাড়াই ১৪ বছর পর বসছে রাবির সিনেট অধিবেশন
দীর্ঘ ১৪ বছর পর আজ সোমবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট অধিবেশন। এ উপলক্ষ্যে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে কর্তৃপক্ষ। অধ্যাদেশ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ এই ফোরামের সবশেষ অধিবেশন হয়েছিল ২০০১ সালের ২৮-২৯ জুন। দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই অধিবেশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি বিষয় অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে। তবে এতে ছাত্র প্রতিনিধি অংশ নিতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর মু. এন্তাজুল হকযুগান্তরকে জানিয়েছেন, ‘অধিবেশনে নতুন একটি ইনস্টিটিউট, একটি ইনস্টিটিউটে অনার্স কোর্স চালু, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরির বয়সসীমা ৬২ থেকে বাড়িয়ে ৬৫ করার আইনসহ বেশকয়েকটি বিষয় অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হবে।’তবে ছাত্র প্রতিনিধি ও নির্বাচিত সাংসদ প্রতিনিধির পদ শূণ্য রয়েছে। মেয়াদউত্তীর্ণ হয়েছে ২৫ জন রেজিস্ট্রার্ড গ্রাজুয়েট প্রতিনিধির। তাদের অনেকেই আবার মারা গেছেন। অনেকের কাছেই নোটিশ পৌঁেছনি বলে অভিযোগ রয়েছে। এমতাবস্থায় অধিবেশন বসায় তা কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন খোদ সিনেটের শিক্ষক প্রতিনিধি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন জ্যোষ্ঠ শিক্ষক।নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন জ্যৈষ্ঠ শিক্ষক জানান, ‘অধ্যাদেশ অনুযায়ী অধিবেশনে সদস্যদের ভোটের মাধ্যমে ভিসি নির্বাচন, বাজেট অনুমোদন, আইন সংশোধনসহ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা। বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো ফোরামের সিদ্ধান্ত পূনর্বিবেচনা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নীর্তিনির্ধারণের সর্ব্বোচ্চ ফোরামও এটি।’তারা আরো জানান, ‘তবে ছাত্র প্রতিনিধি, নির্বাচিত সাংসদ প্রতিনিধি ও রেজিস্ট্রার্ড গ্রাজুয়েটদের মত গুরুত্বর্পূণ প্রতিনিধি ছাড়া অধিবেশন কতটা কার্যকর হবে তা বলা মুশকিল। কারণ শিক্ষক প্রতিনিধিরা সবাই কোন কোন না কোন দলের অনুসারী। তাই তারা স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারে না।’এদিকে দীর্ঘদিন রাজশাহী বিশ্ববদ্যিালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) নির্বাচন না হওয়ায় এতে অংশ নিতে পারছেন না নির্ধারিত পাঁচজন ছাত্র প্রতিনিধি। এতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে তারা দ্রুত রাকসু নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি আয়াতুল্লাহ খোমেনি যুগান্তরকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বৃহৎ অংশই হলো শিক্ষার্থী। সিনেট যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার সর্ব্বোচ্চ জায়গা। তাই সেখানে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষায় ছাত্র প্রতিনিধি থাকা আবশ্যক। কিন্তু রাকসু সচল না থাকায় এই অধিবেশনে তা হচ্ছে না। এ কারণে আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেন এই অধিবেশনে এমন কোন সিদ্ধান্ত না নেন, যা শিক্ষার্থীবান্ধব নয়। একই সঙ্গে পরের অধিবেশনগুলোতে ছাত্র প্রতিনিধি নিশ্চিত করার জন্য রাকসু নির্বাচনের জোর দাবি জানাচ্ছি।’এছাড়া স্পীকার মনোনয়ন না দেয়ায় নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের পাঁচটি পদও শূন্য রয়েছে। তাই এই অধিবেশনে কোন সাংসদও অংশ নিতে পারছেন না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সাংসদ যুগান্তরকে জানিয়েছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নির্বাচিত সাংসদ পদে মনোনয়ন চেয়ে স্পীকারকে চিঠি দিতে দেরি করায় এই সমস্যা হয়েছে। বর্তমান সংসদের মেয়াদ দেড় বছর হয়ে গেলেও এখনও মনোনয়ন না পাওয়াটা দুঃখজনক।’এদিকে দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচন না হওয়ায় সিনেটের রেজিস্ট্রার্ড গ্রাজুয়েট ক্যাটাগরির ২৫টি পদে থাকা প্রতিনিধিদেরও মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। এমনকি তাদের অনেকে মারা গেছেন। অন্যদের অনেকেই অধিবেশন বসার ব্যাপারে কোন নোটিশ পান নি বলে অভিযোগ করেছেন।বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মুহ্ম্মদ মিজানউদ্দিন বলেন, ‘বর্তমান প্রশাসন দায়িত্ব নেয়ার পর সিনেট অধিবেশন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এজন্যই ২০১৪ সালে সিনেটের শিক্ষক প্রতিনিধিদের নির্বাচন করা হয়। নানা জটিলতার কারণে রেজিস্ট্রার্ড গ্রাজুয়েটদের নির্বাচন করা সম্ভব হয় নি। তারপরও সিনেট অধিবেশন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আশা করছি আগামী বছর থেকে সকল প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে নিয়মিত সিনেট অধিবেশন হবে।’প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুযায়ী ভিসি বছরে অন্তত একবার সিনেটের সভা আহ্বান করবেন। যা বার্ষিক সভা হিসেবে অভিহিত হবে। তবে ভিসি চাইলে এর বাইরেও বিশেষ সভা আহ্বান করতে পারেন। কিন্তু গত ১৪ বছরে একবারও সিনেট অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় নি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজের অনুমোদন আটকে ছিল। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বর্তমান প্রশাসনের উদ্যোগে অবশেষে আজ বসছে সিনেটের অধিবেশন।