ছাত্রলীগের নেতৃত্বে সোহাগ-জাকির
ছাত্রলীগের নেতৃত্বে সোহাগ-জাকির

চার বছর পর নতুন নেতৃত্ব পেলো বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। দুই দিনের সম্মেলনের শেষদিনে গতকাল রাতে সভাপতি পদে সাইফুর
রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক পদে জাকির হোসাইনকে বিজয়ী ঘোষণা করে সম্মেলনের জন্য গঠিত নির্বাচন কমিশন। সাবেক নেতাদের সমঝোতায় এই দুজনই নেতৃত্বে আসছেন বলে গত কয়েক দিন ধরে গুঞ্জন ছিল। ফল ঘোষণার পর এ গুঞ্জনই সত্য হলো। যদিও সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন ভোটের মাধ্যমে সংগঠনের নতুন নেতৃত্ব নির্ধারিত হবে। কাউন্সিলররা যাদের ভোট দেবেন তারাই নেতৃত্বে আসবেন।
সারা দেশের মোট ১০১টি ও প্রবাসের ১০ ইউনিটের ৩ হাজার ১৮৩ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ২ হাজার ৮১৯ জন কাউন্সিলর ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। সভাপতি পদে ২ হাজার ৬৯০ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন সাইফুর রহমান সোহাগ। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে ২ হাজার ৬৭৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন জাকির হোসাইন। সভাপতি পদে ১০ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ১৮ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
সোহাগ এর আগে সদ্য বিদায়ী কেন্দ্রীয় কমিটির পরিবেশ সম্পাদক ছিলেন এবং জাকির হোসাইন ছিলেন সহ-সম্পাদক। নতুন নির্বাচিত সভাপতি সোহাগের গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর, আর সাধারণ সম্পাদক জাকিরের গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজার। সোহাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষের এবং জাকির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তারা দুজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতির শুরুতে সোহাগ ছিলেন জিয়া হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।
ছাত্রলীগের ২৮তম জাতীয় সম্মেলনের গতকাল ছিল দ্বিতীয় দিন। শনিবার প্রথমদিনে সম্মেলনের প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মেলনে তিনি প্রত্যক্ষ ভোটে নেতা নির্বাচনের ঘোষণা দেয়ার পর গভীর রাত পর্যন্ত ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা প্যানেল নির্বাচনের জন্য দফায় দফায় বৈঠক করেন। এ বৈঠকে সাবেক নেতারা এক প্রার্থীর বয়স প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যান। ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ের এ বৈঠকে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। পরে গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের ছাত্রলীগের সাবেক এক সভাপতির বাসায় বৈঠকে বসেন ছাত্রনেতারা। সদ্য বিদায়ী সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগের মাধ্যমে সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমের মাধ্যমে জাকির হোসাইন প্যানেলে আসেন। সাবেক নেতাদের মাধ্যমে এ দুজনের নাম আসায় নির্বাচনে থাকা অন্য প্রার্থীরা গতকাল সকাল থেকেই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। সকাল দশটায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে দ্বিতীয় অধিবেশন শুরুতেই প্রার্থীদের অনেকেই প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। সভাপতি পদের জন্য বৈধ ৬৪ প্রার্থীর মধ্যে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করার পর ১০ জন প্রার্থী ভোটে থাকেন। আর সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য ১৪২ জন প্রার্থীর মধ্যে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকেন ১৮ জন। নির্বাচনকে ঘিরে ওই এলাকায় দিনভর ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। যদিও সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণার পর অনেকে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেন। তারা অনেকে বলেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কমিটি করে মূলত সাবেক নেতারা নিজেদের প্রভাব-প্রতিপত্তির জানান দিয়েছেন। এভাবে কমিটি হলে সংগঠনে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকবে না।
নির্বাচন পরিচালনা করেন সদ্য বিদায়ী ছাত্রলীগ সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম। তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশনে ছিলেন ছাত্রলীগের সদ্য বিদায়ী সহসভাপতি সুমন কুণ্ডু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক, দপ্তর সম্পাদক শেখ রাসেল। দ্বিতীয় অধিবেশনে সাবেক ছাত্রনেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীর কবির নানক, আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সুজিত রায় নন্দী, এনামুল হক শামীম, নজরুল ইসলাম বাবু, মাহফুজুল হায়দার রোটন, ইসাহাক আলী খান পান্না, ওমর ফারুক চৌধুরী, হারুন অর রশিদ, অ্যাডভোকেট মোল্লা আবু কাওসার, পঙ্কজ দেবনাথ প্রমুখ।