চীন সফর করছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

17/10/2023 1:39 pmViews: 3

mzamin

whatsapp sharing button

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র চীন সফর করছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এ সময়ে তিনি পশ্চিমাবিরোধী একটি জোট গড়ে তোলার প্রচেষ্টা বৃদ্ধি করবেন। একইসঙ্গে চীন-রাশিয়া বন্ধুত্বকে উদযাপন করবেন। গত বছরের শুরুতে শীতকালীন অলিম্পিক উদ্বোধনের সময় বেইজিং সফর করেছিলেন পুতিন। তখন তিনি ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ঘোষণা দিয়েছিলেন দুই দেশের মধ্যে নতুন এক ‘সীমাহীন’ অংশীদারিত্ব। এবার আবার রাশিয়ার সেই নেতা ফিরেছেন চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে। মঙ্গলবার সকালে তার বেইজিং পৌঁছার কথা। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি, বিবিসি। এই সফরের ফল কি হবে, সম্পর্ক কতটা গাঢ় হবে তা নিয়ে প্রশংসায় ভাসছে চীনের রাষ্ট্রীয় মিডিয়াগুলো। এ সপ্তাহে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) এক ফোরামে ১৩০টি দেশের প্রতিনিধিকে স্বাগত জানিয়েছে চীন। তারা মনে করছে এর মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে তাদের মর্যাদা আরও বৃদ্ধি পাবে।

এই ফোরামে যাদেরকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, তার মধ্যে পুতিনই হলেন শীর্ষ নেতা। ইউক্রেনে আগ্রাসন চালিয়ে নিজেকে আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার পর বৈশ্বিক বড় ক্ষমতাধর একটি দেশে এটাই হচ্ছে পুতিনের প্রথম সফর। এর উদ্দেশ্য প্রতিবেশী এই কমিউনিস্ট দেশটির সঙ্গে এরই মধ্যে শক্তিশালী সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করা। অন্যদিকে মস্কো তার জুনিয়র অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুতিনের এই সফরে খুব বেশি বিস্ময়কর কিছু থাকবে না। এটা হলো মস্কোর জন্য একটি বড় সমর্থন এটাই দেখাতে চাইছেন তিনি। কার্নেই রাশিয়া ইউরেশিয়া সেন্টারের পরিচালক আলেকজান্দার গাবুয়েভ বলেন, রাশিয়া এ বিষয়ে অবহিত যে প্রকাশ্যে বড় ধরনের কোনো চুক্তি করতে চাইছে না চীন। সব কার্ডই চীনের হাতে।

ক্রেমলিন থেকে বলা হয়েছে বিআরআই ফোরামের এক ফাঁকে বুধবার পুতিন ও শি’র মধ্যে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এটা তখনই ঘটবে যখন বৈশ্বিক সংবাদ মাধ্যমগুলোর শিরোনামে প্রাধান্য পাবে হামাসের সঙ্গে ইসরাইলের যুদ্ধ। ৭ই অক্টোবর গাজা থেকে হামাস কয়েক হাজার রকেট হামলা চালায় ইসরাইলে। এতে কমপক্ষে ১৪০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরাইল। এর জবাবে হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে ইসরাইল। এই যুদ্ধের কারণে কমপক্ষে ১০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে গেছে। পুরো গাজায় এক ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। ইসরাইলের বোমা হামলায় সেখানে কমপক্ষে ২৭৫০ জন মানুষ মারা গেছেন। এর বেশির ভাগই বেসামরিক। কিন্তু গাজা-ইসরাইল যুদ্ধ নিয়ে বিবৃতিতে হামাসের নাম উল্লেখ না করায় বেইজিংয়ের সমালোচনা করেছেন পশ্চিমা নেতারা। এ নিয়ে রোববার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে কথা বলেছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ধরে রাখার জন্য চীনকে তার প্রভাব ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছেন ব্লিঙ্কেন।

ইরানের সঙ্গে চীনের আছে উষ্ণ সম্পর্ক। ইরানের ধর্মীয় নেতারা হামাস এবং লেবাননের যোদ্ধাগোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে সমর্থন করেন। হামাসকে সমর্থন জানিয়ে হিজবুল্লাহ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার কথা ঘোষণা করেছে এরই মধ্যে। এর ফলে ইসরাইলের সঙ্গে দ্বিতীয় যুদ্ধের ক্ষেত্র তৈরি হয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে চীনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ওই আহ্বান। কারণ, মধ্যপ্রাচ্যে চীনের বেশ প্রভাব আছে। তাদের মধ্যস্থতায় আঞ্চলিক দুই শত্রু ইরান ও সৌদি আরব আবার কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। এ সপ্তাহে মধ্যপ্রাচ্য সফর করবেন বেইজিংয়ের বিশেষ দূত ঝাই জুন। তিনি সেখানে যুদ্ধবিরতি এবং শান্তি সংলাপের জন্য চাপ দেবেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি।

ওদিকে সোমবার রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই একই সুরে কথা বলেছেন। বিআরআই ফোরামের সামিটে পুতিনকে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ করার জন্য চীনের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়েছেন ল্যাভরভ। মস্কো থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়। পরে আরও বলা হয়, বেইজিং থেকে উত্তর কোরিয়া যাবেন সের্গেই ল্যাভরভ। তার আগে তিনি ওয়াং ই’কে বলেছেন, বৈঠকে নিজেদের দেশের সব বিষয়ে আলোচনা করবেন পুতিন ও শি। ওয়াং ই  বিআরআই-এ সমর্থন দেয়ার জন্য রাশিয়ার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, উভয় পক্ষ কর্মকাণ্ডের সূচনা পরিকল্পনা করবে, বৃদ্ধি করবে কৌশলগত পারস্পরিক আস্থা, বৃদ্ধি করবে বর্তমানের বন্ধুত্বকে। এই বন্ধুত্ব প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দেয়া হবে।

Leave a Reply